ফাইল চিত্র।
বিধানসভা ভোটে বিজেপি-বিরোধী শক্তি হিসেবে তৃণমূলকেই বেছে নিয়েছে বাংলার মানুষ। বিবৃতি দিয়ে একথা জানিয়ে দিল সিপিএমের রাজ্য কমিটি। শনি ও রবিবার ২ দিনের দলের ভার্চুয়াল বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য বিমান বসু। এ ছাড়াও ছিলেন পার্টির সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি-সহ আরও পাঁচ পলিটব্যুরো সদস্য। মূলত বিধানসভা ভোটে কেন এমন বিপর্যয় হল? কেনই বা নেমে যেতে হল শূন্যে? সেকথা জানতেই রাজ্য কমিটির মোট ৫২ জন রাজ্য কমিটি সদস্য আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন।
২ দিন ধরে সব সদস্যকে বক্তৃতা করার সুযোগ দেওয়া হয়। অনেকেই সংযুক্ত মোর্চার সঙ্গে জোট গঠন নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। আবার জোটের মধ্যে কংগ্রেস ও আইএসএফের মধ্যে পারস্পরিক দ্বন্দ্বের কথা বলেছেন। বেশির ভাগ জেলাই ভোটে ভরাডুবির জন্য রাজ্যের কয়েকজন পলিটব্যুরো সদস্যের বিরুদ্ধে আঙুল তুলেছেন। তবে সব শেষে বক্তৃতা করে দলের রাজ্য কমিটির নেতাদের ক্ষোভ প্রশমনের চেষ্টা করে আগামী দিনের জন্য তৈরি হতে বলেছেন সীতারাম।
বৈঠক শেষে যে বিবৃতি পেশ করা হয়েছে, তাতে নিজেদের ব্যর্থতা স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘সিপিআই (এম) ও বামফ্রন্টের ভোটের হার ক্রমান্বয়ে কমেছে। শ্রেণি ও জনগণের বিভিন্ন অংশের মধ্যে সমর্থন হ্রাস পেয়েছে। রাজ্যে তৃণমূলের বিরুদ্ধে জনঅসন্তোষ থাকলেও ক্রমে বিজেপি-বিরোধী মনোভাবের ফলে তারা লাভবান হয়েছে।’ আরও বলা হয়েছে, ‘বিজেপি ও তৃণমূলের মধ্যে তীক্ষ্ণ মেরুকরণ হয়েছে। জনগণ তৃণমূলকেই বিজেপি-বিরোধী প্রধান শক্তি হিসেবে বেছে নেন। বিভিন্ন সহায়তা প্রকল্পকে তৃণমূল জনগণের সমর্থন লাভের জন্য ব্যবহার করতে সক্ষম হয়েছে। ধর্মীয় মেরুকরণ এই ফলাফলের প্রধান কারণ না হলেও একটি কারণ। বিজেপি-র আগ্রাসী প্রচারের বিরুদ্ধে বাংলার জাতিসত্তাকে তৃণমূল ব্যবহার করতে সক্ষম হয়েছে।’
শোচনীয় পরাজয় নিয়ে সাধারণ সম্পাদক ইয়েচুরি বলেছেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে সংখ্যালঘুদের মধ্যে নিরাপত্তার অভাববোধ ছিল না। ছিল অর্থনৈতিক আশা-আকাঙ্ক্ষা। সেখানে আমাদের কিছু ঘাটতি ছিল। কিছু পদক্ষেপও করা হয়েছিল। এখন বিজেপি-বিরোধিতা সামনে এসে যাওয়ায় পরিবর্তন হয়েছে।’’ পশ্চিমবঙ্গের সংগঠন যে দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়ছে, রবিবার সন্ধ্যায় প্রকাশিত রাজ্য কমিটির বিবৃতিতেই তা প্রকাশ পেয়েছে। সেই বিবৃতিতেই তিনি আরও বলেছেন, ‘সংগঠনকে চেহারা দেয় রাজনীতি। রাজনীতির সঙ্গে সংগঠনের দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক রয়েছে। জনগণের প্রশ্ন, রাজনৈতিক বিকল্প তুলে ধরতে না পারলে শুধু আমাদের সাংগঠনিক কাঠামোয় কাজ হবে না।’’