স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় (বাঁ দিকে) এবং তাপস রায়। —নিজস্ব চিত্র।
বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন সোমবার। তিন দিন পরে, বৃহস্পতিবার বরাহনগরের সদ্য প্রাক্তন বিধায়ক তাপস রায়ের ইস্তফাপত্র গ্রহণ করলেন বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়।
স্পিকার জানান, বুধবারই লিখিত ভাবে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছিলেন তাপস। প্রথা মোতাবেক, স্পিকার তাপসকে জিজ্ঞাসা করেন, তিনি কোনও চাপের কাছে নতিস্বীকার না করে স্বেচ্ছায় এই ইস্তফা দিচ্ছেন কি না। উত্তরে তাপস জানান, স্বেচ্ছায় এবং স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে তিনি বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। তার পরেই স্পিকার তাপসের উত্তরে সন্তুষ্ট হন এবং পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়। পদত্যাগপত্র গৃহীত হওয়ার কথা জানান তাপসও।
পুরনো সম্পর্কের কথা উঠে আসে স্পিকার এবং তাপস— দু’জনের কথাতেই। স্পিকার বলেন, “আমরা দীর্ঘ দিন এক সঙ্গে কাজ করেছি। অনেকেই এসেছেন, অনেকেই চলে গিয়েছেন। এটা গতানুগতিক একটি নিয়ম। কিন্তু আমাদের কাজ আমাদের করে যেতে হবে।” স্পিকার সম্পর্কে তাপসও বলেন, “দীর্ঘ দিনের সম্পর্ক। ১৯৮৫ সালে আমরা এক সঙ্গে কাউন্সিলর ছিলাম।”
সোমবার বিধানসভায় গিয়ে স্পিকারের সামনে ইস্তফা দিয়েছিলেন তাপস। স্পিকার জানিয়েছিলেন, তাপসের ইস্তফার বিষয়ে মঙ্গলবার তিনি সিদ্ধান্ত জানাবেন। পরে বিধানসভার সচিবালয়ের তরফে জানানো হয়, তাপসের শুনানি হবে বুধবার। কোনও বিধায়ক পদত্যাগ করার পর তাঁর ইস্তফাপত্রে কোনও ত্রুটি আছে কি না, তা খতিয়ে দেখে বিধানসভার সচিবালয়। তার পর শুনানির জন্য ডেকে পাঠানো হয় ওই বিধায়ককে। কিন্ত বুধবার স্পিকার জানান, তাপসের ইস্তফায় ‘পদ্ধতিগত ত্রুটি’ রয়েছে। তাঁকে বৃহস্পতিবার ফের যেতে বলা হয়। জানা যায়, যন্ত্রে টাইপ করে ইস্তফার চিঠি দিয়েছিলেন তাপস। সেটি হাতে লিখে জমা দিতে হয়। তাপস জানান, বৃহস্পতিবার হাতে লেখা চিঠি তিনি নিয়ে আসবেন।
বৃহস্পতিবার ‘পদ্ধতিগত ত্রুটি’র বিষয়ে তাপস বলেন, “টাইপ করা যায় না। হাতে লিখেই দিতে হয়।” বৃহস্পতিবার হাতে লিখেই পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি। স্পিকার সেটি গ্রহণ করেন। বুধবার বিধানসভার উদ্দেশে রওনা দেওয়ার আগেই তাপস জানিয়ে দেন, বিকেলে তিনি বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন। বিজেপিতে যোগ দিয়ে প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক তাপস বলেন, ‘‘আমি আজ থেকে মোদী পরিবারের সদস্য হলাম। যত দিন রাজনীতিতে থাকব, এই পরিবারের সদস্য হিসাবে আমার দায়িত্ব পালন করব। বাংলার বুকে যে অরাজক পরিস্থিতি চলছে, তা ঘোচানোর চেষ্টা করব। দলের প্রতি আমি ১০০ শতাংশ সৎ থাকব।’’
সোমবার তৃণমূল ছাড়ার কথা আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করেছিলেন তাপস। দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভও উগরে দিয়েছিলেন তিনি। জানান, দলে তিনি অবহেলিত। তাঁর বাড়িতে জানুয়ারি মাসে পুর নিয়োগ ‘দুর্নীতি’র তদন্ত করতে ইডি হানা দিয়েছিল। তার পর থেকে দলের কেউ তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেননি বলে অভিযোগ করেন তিনি। এমনকি, দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকেও কোনও সান্ত্বনাবার্তা পাননি তাপস। এর পরেই দলত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন বলে দাবি তাপসের।