শুভেন্দু অধিকারী। —ফাইল চিত্র।
ডেউচা-পাঁচামির প্রস্তাবিত কয়লা খনি এলাকায় প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে তৃণমূল ‘দুর্নীতি’ করেছে বলে অভিযোগ করলেন রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা বিজেপির শুভেন্দু অধিকারী। সেই সূত্রে নাম টেনে আনলেন বীরভূমের জেলাশাসক বিধান রায় এবং রাজ্যসভার সাংসদ তৃণমূলের সামিরুল ইসলামের। সামিরুল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। জেলাশাসকের দাবি, নিয়ম মেনেই সব হয়েছে।
শনিবার সিউড়িতে বিজেপির কার্যালয়ে সাংবাদিক বৈঠকে শুভেন্দুর দাবি, খনি এলাকায় চাকরি দেওয়া, জমি কেনাবেচা এবং পাট্টা দেওয়ায় দুর্নীতি হয়েছে। ভিন্ জেলার মানুষদেরও ওই এলাকার পাট্টা দেওয়া হয়েছে। ঘোষণা করেন, এই ‘দুর্নীতির’ বিরুদ্ধে রামনবমীর পরে জেলাশাসকের দফতর ঘেরাও করবে বিজেপি। এ নিয়ে স্থানীয় আদিবাসী নেতারা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হবেন এবং বিজেপি তাঁদের সব রকম আইনি সহায়তা দেবে।
বিরোধী দলনেতার অভিযোগ, “ডেউচা-পাঁচামির প্রস্তাবিত শিল্পাঞ্চলে আদিবাসীরা প্রতারিত হন। রাজ্য সরকার শিল্পায়নের নামে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে ও ভোটে মিথ্যা প্রচার চালাচ্ছে।” তাঁর দাবি, জমির বিনিময়ে যে চাকরি দেওয়া হচ্ছে, সেগুলি অস্থায়ী এবং অল্প বেতনের। শুভেন্দু বলেন, “সামিরুল ইসলামের নির্দেশে এমন ২৬ জনকে চাকরি দেওয়া হয়েছে, যাঁদের ওখানে জমিই নেই। এই তালিকায় তাঁর আত্মীয়েরাও আছেন। এটা পুরসভা ও স্কুল শিক্ষকের মতোই নিয়োগ-দুর্নীতির একটি ধরন। যে জমিতে আদিবাসীরা বংশপরম্পরায় আছেন, সেখানে তাঁদের বাদ দিয়ে অন্য জেলার লোকদের পাট্টা দেওয়া হল!” যেখানে খননকাজ শুরু হয়েছে, সেখান থেকে গাছ প্রতিস্থাপনের যে ব্যবস্থা জেলা প্রশাসন করেছে, তাকেও কটাক্ষ করেন তিনি। শুভেন্দুর দাবি, “জেলাশাসকের নেতৃত্বে, পুলিশের সহযোগিতায় ও সামিরুল ইসলামের উদ্যোগে দুর্নীতি হয়েছে।” সামিরুলের পাল্টা দাবি, “আমার কোনও আত্মীয় ওই এলাকায় জমি দিয়ে চাকরি পাননি। শুভেন্দু মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছেন। শুনলাম, ওঁরা আদালতে যাচ্ছেন। ভালই হয়। তা হলে কে সত্যি বলছে, কে মিথ্যা, আদালতেই প্রমাণ হয়ে যাবে।” তাঁর সংযোজন, ‘‘চ্যালেঞ্জ করছি, আমার এক জনও আত্মীয়, পরিচিত, বন্ধু—চাকরিপ্রাপকদের তালিকায় আছে, প্রমাণ করুন।’’
ঘটনাচক্রে, এ দিনই সিউড়িতে জেলা প্রশাসন ভবনে ডেউচা-পাঁচামির পাঁচ জমিদাতার হাতে চাকরির নিয়োগপত্র তুলে দেন জেলাশাসক। শুভেন্দুর অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “যা হয়েছে (ডেউচায়), সরকারি নিয়ম মেনেই হয়েছে। জমির বিনিময়ে যে চাকরি দেওয়া হচ্ছে, সেগুলিও স্থায়ী চাকরি। দুর্নীতির প্রশ্নই নেই। তা-ও যদি কারও মনে কোনও প্রশ্ন থাকে, তিনি নিজে এসে সব খতিয়ে দেখতে পারেন।” জেলাশাসক জানান, যেগাছগুলি প্রতিস্থাপন করা হয়েছে, সেগুলিতে নতুন পাতা আসতেশুরু করেছে।
শুভেন্দুর বক্তব্যের পাল্টা বোলপুরের তৃণমূল কার্যালয়ে ডেউচা-পাঁচামির কয়েক জন বাসিন্দা সাংবাদিক বৈঠক করে জানান, তাঁরা স্বেচ্ছায় জমি দিয়েছেন এবং বাজার দরের তুলনায় ১০ গুণ বেশি দাম পেয়েছেন। শুভেন্দু মিথ্যা তথ্য ও বিভ্রান্তি ছড়িয়েছেন বলেও অভিযোগ।