গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
‘সর্ষের মধ্যে ভূত’ নাকি সার্ভার ‘হ্যাক’ করে ট্যাব কেলেঙ্কারি?
কলকাতার একাধিক ট্যাব কেলেঙ্কারির অভিযোগের তদন্তে আপাতত এই প্রশ্নের উত্তরই খুঁজছে লালবাজার। ‘ভূতের’ খোঁজে বিকাশ ভবনে গিয়ে ‘ট্যাব সার্ভার’-সহ, ‘ট্যাব’ সংক্রান্ত কারা কী দায়িত্বে ছিলেন তা খতিয়ে দেখেছেন তদন্তকারীরা। পাশাপাশি স্কুলগুলির হাতে এই সংক্রান্ত কী কী দায়িত্ব ছিল, সেই তথ্যও খতিয়ে দেখা শুরু হয়েছে। গোটা চক্রের পিছনে ‘বড় মাথা’ থাকার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না। শনিবার রাতে কোচবিহারের দিনহাটার এক শিক্ষককে গ্রেফতার করেছে মালদহ পুলিশ। কলকাতায় ট্যাব কেলেঙ্কারির তদন্তে এমন কোনও যোগ রয়েছে কি না, সেই দিকও খতিয়ে দেখতে চাইছেন লালবাজারের তদন্তকারীরা। ‘ট্যাব’ কেলেঙ্কারিতে জড়িত সন্দেহে রবিবার পাঁচজনকে আটক করেছে ইসলামপুর থানার পুলিশও।
এ দিন বিকেলে ইসলামপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মালদহগামী উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের একটি বাস থামিয়ে পুলিশ চার জনকে আটক করে। তাঁদের বাড়ি চোপড়া থানার বিভিন্ন এলাকায়। আর এক জনকে ইসলামপুরের সুজালি এলাকা থেকে ধরা হয়েছে। ইসলামপুর পুলিশ জেলার সুপার জবি টমাস জানিয়েছেন, ‘ট্যাব’ কেলেঙ্কারির তদন্তে পূর্ব মেদিনীপুর ও মালদহ জেলা পুলিশের অফিসাররা সন্দেহভাজন ওই পাঁচ জনকে আটক করেছেন।
তার আগে শনিবার রাতে মালদহ সাইবার ক্রাইম বিভাগের তদন্তকারীরা কোচবিহারের দিনহাটা থেকে মনোজিৎ বর্মণ নামে এক প্রাথমিক শিক্ষককে গ্রেফতার করে। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, মনোজিতের নামে বিভিন্ন ব্যাঙ্কে ১৫-২০টি অ্যাকাউন্ট রয়েছে। অভিযোগ, তার মধ্যে আটটি অ্যাকাউন্টে ‘ট্যাব’ কেলেঙ্কারির টাকা ঢুকেছে। ওই শিক্ষকের সব অ্যাকাউন্টই ‘ফ্রিজ়’ করেছে পুলিশ।
তদন্তে লালবাজার জানতে পেরেছে, প্রাথমিক ভাবে স্কুল থেকে ‘ট্যাব’ প্রাপকদের তালিকা গিয়েছিল জেলা স্কুল পরিদর্শকের কাছে। প্রতিটি স্কুলে নির্দিষ্ট শিক্ষক ‘ট্যাব’ সংক্রান্ত তালিকা-সহ যাবতীয় কাজের দায়িত্বে ছিলেন। জেলা স্কুল পরিদর্শক প্রতিটি স্কুল থেকে তালিকা পাওয়ার পরে তা বিকাশ ভবনে পাঠান। বিকাশ ভবন থেকে তালিকা গিয়েছিল ট্রেজারিতে।
গোটা প্রক্রিয়ায় তাই ‘সর্ষের মধ্যে ভূত’ থাকার আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না তদন্তকারীরা। চক্রীদের সঙ্গে মিলে বা সাহায্য করে কেউ কেলেঙ্কারির প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদত দিয়েছিলেন কি না, তা-ও দেখা হচ্ছে।
কলকাতা পুলিশ জানিয়েছে, ইতিমধ্যেই শহরের ১০৭ জন পড়ুয়ার টাকা হাতানোর অভিযোগ সামনে এসেছে। শহরের ন’টি থানায় দশটি অভিযোগও হয়েছে। তদন্তে নেমে উত্তর দিনাজপুরের চোপড়া থেকে দু’জনকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ। তবে ‘ট্যাব চক্রের’ জালের বড় অংশ যে চোপড়া এবং সংলগ্ন এলাকায় ছড়িয়ে, তা নিয়ে এক প্রকার নিশ্চিত তদন্তকারীরা। ইতিমধ্যেই ঘটনার তদন্তে চোপড়ায় গিয়েছে লালবাজারের বিশেষ তদন্তকারী দল। সেখানে অ্যাকাউন্ট ভাড়া দেওয়ায় অভিযুক্ত কয়েক জনের কাছ থেকে কয়েকটি নামও পেয়েছে পুলিশ। তাঁদের পিছনে আরও কেউ যুক্ত থাকার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না।
ট্যাব কেলেঙ্কারির যোগ মিলেছে কেরলেও। পুলিশ সূত্রে খবর, উত্তর দিনাজপুরের গোয়ালপোখরের কিচকটলা হাইস্কুলের ১১ জন ছাত্রছাত্রীর টাকা অন্য অ্যাকাউন্টে গিয়েছে। তাদের এক জনের টাকা ঢুকেছে কেরলের একটি অ্যাকাউন্টে।