Bengal SSC Recruitment Case Hearing

২৬ হাজার চাকরিই বাতিল! ২০১৬ সালের শিক্ষক নিয়োগের প্যানেল খারিজ সুপ্রিম কোর্টের, নির্দেশ নতুন নিয়োগের

এসএসসি-র শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। কলকাতা হাই কোর্ট এই সংক্রান্ত শুনানির পর ২০১৬ সালের সম্পূর্ণ নিয়োগপ্রক্রিয়াই বাতিল করে দিয়েছিল।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০২৫ ১০:৪২

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

২০১৬ সালের এসএসসিতে নিয়োগের পুরো প্যানেল বাতিল করল সুপ্রিম কোর্ট। বলল, পুরো প্রক্রিয়ায় কারচুপি করা হয়েছে। ওই নিয়োগপ্রক্রিয়ার কোনও বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। সেই সঙ্গে রাজ্যের ২৬ হাজার চাকরি (আদতে ২৫,৭৩৫) বাতিল করে প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্না এবং বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চ জানিয়েছে, নতুন নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, যাঁরা অন্য সরকারি চাকরি ছেড়ে ২০১৬ সালের এসএসসির মাধ্যমে স্কুলের চাকরিতে যোগদান করেছিলেন, তাঁরা চাইলে পুরনো কর্মস্থলে ফিরে যেতে পারবেন।

Advertisement

ঘোষিত রায়ে বলা হয়েছে, যোগ্য-অযোগ্য বাছাই করা সম্ভব হয়নি। ২০১৬ সালের এসএসসি পেয়ে যাঁরা চাকরি করছিলেন, তাঁরা নতুন নিয়োগপ্রক্রিয়ায় যোগ্যতা পরীক্ষার জন্য আবেদন করতে পারবেন বলেও জানিয়েছে শীর্ষ আদালত। প্রসঙ্গত, ফেব্রুয়ারিতেই এই মামলার শুনানি শেষ করে রায় ঘোষণা স্থগিত রেখেছিল আদালত। বুধবার জানানো হয়, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ এই মামলার রায় ঘোষণা করবে। সেই সময়সীমা মেনেই ঘোষিত হয় রায়।

২০১৬ সালের এসএসসি-র শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। কলকাতা হাই কোর্ট এই সংক্রান্ত শুনানির পর ২০১৬ সালের সম্পূর্ণ নিয়োগপ্রক্রিয়াই বাতিল করে দিয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গ সরকার এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়। গত ১০ ফেব্রুয়ারি শীর্ষ আদালতে শেষ হয়েছিল এই মামলার শুনানি। বুধবার সুপ্রিম কোর্ট যে তালিকা প্রকাশ করে, তাতে বলা হয়েছিল, বৃহস্পতিবার সকালে ২৬ হাজার চাকরি বাতিল মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। সেইমতোই ঘোষণা হল রায়।

এসএসসির ২৬ হাজার চাকরি বাতিলের এই মামলায় একাধিক জটিলতা ছিল। যার মধ্যে অন্যতম হল যোগ্য এবং অযোগ্যদের বাছাইয়ের সমস্যা। কী ভাবে যোগ্য এবং অযোগ্যদের আলাদা করা হবে, সেই প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। শুনানির শেষ দিন পর্যবেক্ষণে শীর্ষ আদালত জানিয়েছিল, এই মামলায় আসল তথ্য জানা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেহেতু আসল উত্তরপত্র বা ওএমআর শিট উদ্ধার করা যায়নি, তাই কোন ওএমআর শিটকে আসল বলে ধরে নেওয়া হবে, তা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। এসএসসিকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে কমিশনের আইনজীবী জানিয়েছিলেন, ‘র‌্যাঙ্ক জাম্প’ এবং প্যানেল-বহির্ভূত নিয়োগের তথ্য তাঁদের কাছে রয়েছে। কিন্তু ওএমআর শিট কারচুপির তথ্য কমিশনের কাছে নেই।

শীর্ষ আদালতে এই মামলার তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের বক্তব্য ছিল, এসএসসির নিয়োগপ্রক্রিয়ায় ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। সাদা খাতা জমা দিয়েই অনেকে চাকরি পেয়ে গিয়েছেন। তাই ২৬ হাজার চাকরি বাতিলের এই মামলায় হাই কোর্টের রায় বহাল থাকা উচিত। অন্য দিকে, রাজ্য সরকারের তরফে আদালতে জানানো হয়, এত জন শিক্ষকের চাকরি একসঙ্গে বাতিল করা হলে রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে। কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ ২০২৪ সালের ২২ এপ্রিলের রায়ে ২০১৬ সালের নিয়োগপ্রক্রিয়া বাতিল করে রায় দিয়েছিল। পাশাপাশি, যাঁরা মেয়াদ-উত্তীর্ণ প্যানেলে চাকরি পেয়েছিলেন, যাঁরা সাদা খাতা জমা দিয়ে চাকরি পেয়েছিলেন, তাঁদের বেতন ফেরত দেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়।

চার সপ্তাহের মধ্যে ১২ শতাংশ হারে সুদ-সহ বেতন ফেরত দিতে বলা হয় ওই চাকরিপ্রাপকদের। হাই কোর্টের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে পৃথক ভাবে শীর্ষ আদালতে মামলা করে রাজ্যের শিক্ষা দফতর, এসএসসি এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। দফায় দফায় মামলা করেন চাকরিহারারাও। প্রাথমিক শুননির পরে গত বছরের ৭ মে সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ চাকরি বাতিলের নির্দেশের উপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিয়েছিল।

গত ২৭ জানুয়ারি এই মামলার শুনানিতে নতুন করে পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে কি না, সে বিষয়ে জানতে চেয়েছিলেন শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি খন্না। নতুন করে পরীক্ষা নেওয়া কতটা কঠিন, তা-ও জানতে চান তিনি। তখন মূল মামলাকারীদের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য আদালতে জানান, অনেকে চাকরির আবেদন না করেও নিয়োগ পেয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সে ক্ষেত্রে যাঁরা চাকরির আবেদন করেছিলেন, তাঁদের আবার নতুন করে পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে বলে প্রধান বিচারপতির এজলাসে জানান বিকাশ। সেই সঙ্গে নিয়োগের পুরো প্যানেলই বাতিল করার পক্ষেও সওয়াল করেছিলেন তিনি। এ বার সেই মামলার রায় ঘোষণা করল প্রধান বিচারপতি খন্নার বেঞ্চ।

ভ্রম সংশোধন: এই খবরটি প্রথম প্রকাশের সময়ে লেখা হয়েছিল, তিন মাসের মধ্যে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে বলেছে আদালত। কিন্তু এই তিন মাসের সময়সীমা সমগ্র নিয়োগ প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। আদালতের রায়ের প্রতিলিপিতে লেখা হয়েছে, চাকরিহারা যে প্রার্থীরা আগে কোনও সরকারি দফতরে বা সরকার পোষিত দফতরে চাকরি করতেন, তিন মাসের মধ‍্যে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতরকে তাঁদের চাকরি ফেরত দিতে হবে। অনিচ্ছাকৃত এই ত্রুটির জন্য আমরা দুঃখিত এবং ক্ষমাপ্রার্থী।

Advertisement
আরও পড়ুন