Rujira Banerjee

অভিষেকের বিদেশযাত্রা আটকানো উচিত হবে না: ইডিকে সুপ্রিম কোর্ট, স্ত্রীকে বাধা দেওয়া নিয়েও প্রশ্ন

রুজিরার বিরুদ্ধে লুক আউট নোটিস জারি হয়েছিল কেন, ইডির কাছে তা জানতে চেয়েছে আদালত। আগামী শুক্রবার ইডিকে এই বিষয়ে জবাব দিতে হবে। ওই দিনই এই মামলার পরবর্তী শুনানি।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০২৩ ১৫:৪৬
Supreme Court asked ED on look out notice against Abhishek Banerjee\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\'s wife Rujira Banerjee

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (বাঁ দিকে) এবং তাঁর স্ত্রী রুজিরা নারুলা বন্দ্যোপাধ্যায়। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিদেশযাত্রা আটকানো উচিত হবে না বলে সোমবার ইডিকে জানাল সুপ্রিম কোর্ট। এর পাশাপাশি অভিষেক-পত্নী রুজিরা নারুলা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিদেশে যেতে বাধা দেওয়া হয়েছে কেন, তা ইডির কাছে জানতে চেয়েছে শীর্ষ আদালত। রুজিরার বিরুদ্ধে লুক আউট নোটিস জারি হয়েছিল কেন, তা-ও কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটির কাছে জানতে চেয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। আগামী শুক্রবার ইডিকে এই বিষয়ে আদালতে জবাব দিতে হবে। ওই দিনই এই মামলার পরবর্তী শুনানি। এই মামলায় ইডির উদ্দেশে শীর্ষ আদালতের মন্তব্য, “তদন্তেরপ্রয়োজনে বার বার সমন করুন। সুপ্রিম কোর্টের আগের নির্দেশ মতো তদন্ত করতে বাধা কোথায়?”

সোমবার বিচারপতি সঞ্জয় কিসান কউলের বেঞ্চে এই মামলাটির শুনানি হয়। বিনা কারণে বিদেশে যেতে বাধা দিচ্ছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি— এই অভিযোগ তুলে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন অভিষেকের স্ত্রী রুজিরা। বিষয়টি নিয়ে শীর্ষ আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন রুজিরার আইনজীবী কপিল সিব্বল। আদালতে অভিষেক-পত্নীর বক্তব্য ছিল, ইডি দীর্ঘ দিন ধরে তদন্ত চালালেও আগে কখনও বিদেশযাত্রার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করেনি। কিন্তু সম্প্রতি কোনও কারণ ছাড়াই তাঁকে বিদেশে যেতে বাধা দেওয়া হয়। উল্লেখ্য, গত ৫ জুন কলকাতা বিমানবন্দরে রুজিরাকে আটকান অভিবাসন দফতরের কর্মীরা। রুজিরার ঘনিষ্ঠমহল সূত্রে জানা যায়, দুই সন্তানকে নিয়ে তিনি দুবাইয়ের বিমান ধরার জন্য বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন। বিমান ধরার আগেই তাঁকে ‘বাধা’ দেয় অভিবাসন দফতর। বিমানবন্দরে তাঁকে ইডি দফতরে হাজিরা দেওয়ার জন্য নোটিস ধরানো হয়। বেশ কিছু ক্ষণ অপেক্ষা করার পর বিমানবন্দর ছেড়ে বেরিয়ে যান অভিষেক-পত্নী।

Advertisement

ইডি সূত্রে খবর, বুধবার চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে চেয়ে কলকাতা হাই কোর্টে একটি হলফনামা জমা দিয়েছেন অভিষেক। তাঁর আবেদনটি শুনানির জন্য সোমবার বিকেলে ওঠার কথা কলকাতা হাই কোর্ট বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের একক বেঞ্চে। ইডি সূত্রে খবর, হলফনামায় অভিষেক লিখেছেন, তিনি ইতিমধ্যেই ইডিকে তাঁর বিদেশ সফরের বিশদ বিবরণ জানিয়ে একটি চিঠি দিয়েছিলেন। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক এ কথাও জানিয়েছেন যে, গত ১৫ জুলাই এই সফরের কথা ইডিকে জানালেও, তাদের দিক থেকে কোনও জবাব আসেনি। সোমবার হাই কোর্টে ওই হলফনামায় অভিষেক জানিয়েছেন, আগামী ৮ অগস্ট বিকেল সাড়ে ৪টেয় চোখের চিকিৎসকের সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্ট রয়েছে তাঁর। সেই চিকিৎসার জন্য প্রায় ২৪ দিন আমেরিকায় থাকতে চান তিনি। অভিষেকের এই আবেদন সোমবার বিকেল ৪টে ২৫ মিনিটে শুনানির জন্য উঠবে বলে খবর ইডি সূত্রে।

নিয়োগ দুর্নীতিতে গ্রেফতার তৃণমূলের বহিষ্কৃত যুবনেতা কুন্তল ঘোষের চিঠি সংক্রান্ত মামলায় অভিষেকের নাম জড়িয়েছে। এ ছাড়া কয়লা পাচার সংক্রান্ত মামলাতেও নাম রয়েছে অভিষেকের। সোমবার যেমন বিদেশযাত্রার জন্য হাই কোর্টের অনুমতি চেয়ে হলফনামা জমা দিয়েছেন অভিষেক, তেমনই সোমবার কয়লা পাচার মামলায় সুপ্রিম কোর্টের নজরেও বিদেশ যাওয়ার বিষয়টি উত্থাপন করেন তৃণমূলের ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ।

অন্য দিকে, অভিবাসন দফতর সূত্রে জানা যায়, ইডির একটি মামলায় ‘লুক আউট’ নোটিস জারি হয়েছে রুজিরার নামে। তাই তাঁর বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ রয়েছে বলে দাবি করে তারা। যদিও অভিষেকের ঘনিষ্ঠমহল সূত্রে জানা যায়, ইডির ওই মামলায় সুপ্রিম কোর্ট অভিষেক এবং রুজিরাকে রক্ষাকবচ দিয়ে জানিয়েছিল, তাঁদের বিদেশযাত্রার ক্ষেত্রে কোনও বাধা নেই। তা সত্ত্বেও রুজিরাকে বিমানবন্দরে বাধা দেওয়ার বিরুদ্ধে অভিষেক আইনি পদক্ষেপ করতে পারেন বলে তখনই শোনা গিয়েছিল। সেই সময় রুজিরাকে আটকানোর প্রসঙ্গ টেনে এনে কেন্দ্রীয় সরকারের ‘অমানবিকতা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি দাবি করেছিলেন, বিদেশে যাওয়ার বিষয়ে তদন্তকারী সংস্থা ইডিকে আগে জানিয়েছিলেন রুজিরা। ইডির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে মুখ্যমন্ত্রী সে সময় বলেছিলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের অনুমতি দেওয়া ছিল। যদি ও কখনও বাইরে যায়, তবে ইডিকে জানাবে। সেই অনুযায়ী ও ইডিকে জানিয়েছে অনেক দিন আগেই। তখন ইডি বলতে পারত ‘তুমি যেয়ো না।’ কিন্তু বিমানবন্দরে গিয়ে নোটিস ধরানো হাতে, যে ৮ তারিখে তুমি এসো...,অমানবিক জিনিস চলছে।’’ সরব হয়েছিলেন অভিষেকও। জানিয়েছিলেন, তাঁর জনসংযোগ যাত্রায় বাধা দেওয়ার জন্যই এ সব করা হচ্ছে।

গত ৮ জুন ইডির ডাকে সাড়া দিয়ে কলকাতায় তদন্তকারী সংস্থাটির দফতর সিজিও কমপ্লেক্সে গিয়েছিলেন রুজিরা। প্রায় চার ঘণ্টা পর ইডি দফতর থেকে বেরোন অভিষেক-পত্নী। গত বছর জুন মাসে সন্তান কোলে নিয়ে ইডি দফতরে গিয়েছিলেন তিনি। কয়লা পাচার মামলায় অভিষেক ও তাঁর স্ত্রী রুজিরাকে বেশ কয়েক দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ইডি। অতীতে ডায়মন্ড হারবারের তৃণমূল সাংসদ ও তাঁর স্ত্রীকে দিল্লিতেও তলব করেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। সমন পেয়ে দিল্লিতে ইডির দফতরে হাজিরা দিয়েছিলেন অভিষেক। কিন্তু রাজধানীর ইডি দফতরে হাজিরা দেননি রুজিরা। পরিবর্তে কলকাতার ইডির দফতরে হাজিরা দেন অভিষেক-পত্নী।

Advertisement
আরও পড়ুন