মঙ্গলবার শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানের ফাঁকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।
আগামী সপ্তাহে বিদেশসফরে যাওয়ার আগে রাজ্য মন্ত্রিসভায় রদবদল করতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই মর্মে প্রশাসনিক মহলে জোর জল্পনা এবং গুঞ্জন তৈরি হয়েছে। এর আগে গত বছর ৩ অগস্ট শেষ বার মন্ত্রিসভায় রদবদল ঘটিয়ে মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তার পর থেকে এক বছরে সে ভাবে আর মন্ত্রিসভায় কোনও রদবদল হয়নি। কিন্তু বিদেশযাত্রার আগে প্রশাসনিক দায়িত্ব বণ্টনের পাশাপাশি বেশ কিছু মন্ত্রীর দফতর অদলবদল করতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রশাসনিক সূত্রের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী কাউকে দিতে পারেন অতিরিক্ত দায়িত্ব। পাশাপাশিই কারও কারও দায়িত্ব কমানো হতে পারে।
তবে রাজ্য মন্ত্রিসভায় নতুন কোনও সংযোজন করা হচ্ছে না বলেই খবর। তার একটি সম্ভাব্য কারণ হিসাবে বলা হচ্ছে, নতুন মন্ত্রী করতে গেলে তাঁকে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসকে দিয়ে শপথবাক্য পাঠ করাতে হবে। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বোসের এখন যা সম্পর্ক, তাতে সেই বিষয়টি ‘স্পর্শকাতর’ বলে অনেকের ব্যাখ্যা। যদিও এরই পাশাপাশি অনেকে বলছেন, রাজভবন-নবান্নের মধ্যে সম্পর্কের টানাপড়েনের কারণে তো সরকারি কাজ বা নতুন মন্ত্রীর শপথগ্রহণ আটকে থাকে না। যে প্রক্রিয়ার যা ‘আনুষ্ঠানিকতা’, সেটা মেনেই সরকার এবং প্রশাসন চলে। ফলে মুখ্যমন্ত্রী যদি নতুন মন্ত্রী আনতে চান, তা হলে বর্তমান রাজ্যপালের তাঁকে শপথবাক্য পাঠ করানোর মতো নেহাতই ‘ঔপচারিক’ কারণে সেটি আটকে থাকবে না। প্রসঙ্গত, গত বছর যখন শেষবার মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণ করেছিলেন মমতা, তখন রাজ্যের অস্থায়ী রাজ্যপাল ছিলেন লা গণেশন। আনন্দ বোস দায়িত্বে আসার পর নতুন কোনও মন্ত্রী শপথ নেননি।
এ বারে দায়িত্ব অদলবদলের তালিকায় নাম শোনা যাচ্ছে মানস ভুঁইয়া এবং বাবুল সুপ্রিয়র। জলসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী মানসের দায়িত্ব বদল হতে পারে। কয়েক মাস আগে তাঁর হাত থেকে পরিবেশ দফতরের দায়িত্ব নিজের হাতে নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। এ বার নবান্ন সূত্রের জল্পনা, মানসের হাত থেকে জলসম্পদ উন্নয়ন দফতরটিও যেতে পারে অন্য কোনও মন্ত্রীর কাছে। সে ক্ষেত্রে মমতা তাঁকে অন্য কোন দফতর দেন, তা-ও দেখার। বাবুলেরও একটি দফতর বদল হতে পারে। এখন বাবুল তথ্যপ্রযুক্তি এবং পর্যটন দফতরের মন্ত্রী। বালিগঞ্জের বিধায়ক বাবুলের অধীন পর্যটন দফতরটি অন্য কাউকে দেওয়া হতে পারে বলে জল্পনা তৈরি হয়েছে। যদিও এর আনুষ্ঠানিক কোনও সমর্থন মেলেনি। তবে সম্প্রতি বিধানসভায় মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর বাবুলের সঙ্গে প্রাক্তন পর্যটনমন্ত্রী তথা অধুনা পর্যটন উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান ইন্দ্রনীল সেনের প্রকাশ্যেই বাদানুবাদ হয়েছিল।
বাবুল শিবিরের অভিযোগ, ইন্দ্রনীল সকলের সামনেই বলেছিলেন, পর্যটন দফতরের অধীন পর্যটন উন্নয়ন নিগমের একটি ফাইলও মন্ত্রীর কাছে পাঠাবেন না। যার জবাবে বাবুল বলেন, ইন্দ্রনীল ওই ভাবে সরকারি কাজ আটকাতে পারেন না।
সর্বসমক্ষে বাবুলের সেই অভিযোগ শুনে ইন্দ্রনীল শুধু বলেছিলেন, তিনি যেন সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে (দিদিকে) বিষয়টি জানান। সেই ঘটনার প্রেক্ষিতেই বাবুলকে নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়ে থাকতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। বস্তুত, এমন জল্পনাও তৈরি হয়েছে যে, বাবুলের হাত থেকে পর্যঠন দফতর নিয়ে সেটি আবার ইন্দ্রনীলকেই দেওয়া হতে পারে। যদিও সেটিও এখনও জল্পনার স্তরেই আছে। তবে পর্যটনে না-থাকলেও বাবুলের হাতে তথ্যপ্রযুক্তির মতো গুরুত্বপূর্ণ দফতর থাকবে।
বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের হাতে রয়েছে অচিরাচরিত শক্তি দফতরও। তাঁর হাত থেকে সেই দফতরটি অন্য কোনও মন্ত্রীকে দেওয়া হতে পারে। তার বদলে জ্যোতিপ্রিয় পেতে পারেন অন্য একটি দফতর। জল্পনা এই যে, জ্যোতিপ্রিয়কে আবার খাদ্য দফতরে ফেরানো হতে পারে। সে ক্ষেত্রে খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষকে অন্য কোনও দফতরের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে।
রাজ্য মন্ত্রিসভায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস এবং প্রবীণ রাজনীতিক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। বিদেশসফরের আগে এই মন্ত্রীদের দায়িত্ব মুখ্যমন্ত্রী আরও খানিকটা বৃদ্ধি করতে পারেন বলে জল্পনা তৈরি হয়েছে। তবে অরূপকে বিদ্যুৎ দফতর নিয়ে আরও বেশি মনোযোগী হতে বলতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। কারণ, নবান্ন সূত্রের খবর, সম্প্রতি বিদ্যুৎ নিয়ে ‘সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী’ কর্মসূচিতে বেশ কিছু অভিযোগ জমা পড়েছে। তাই অরূপকে বাড়তি দায়িত্ব দেওয়ার পাশাপাশি নিজের দফতরেও বাড়তি সময় দিতে বলা হতে পারে। বন দফতরের প্রতিমন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদার দায়িত্ব বাড়তে পারে বলেও জল্পনা রয়েছে। বিরবাহার কাজে মুখ্যমন্ত্রী সন্তুষ্ট বলেই প্রশাসনিক মহলের বক্তব্য।
তবে এই রদবদলের বিষয়ে কোনও আনুষ্ঠানিক সমর্থন মঙ্গলবার পর্যন্ত মেলেনি। সবটাই প্রশাসনিক এবং রাজনৈতিক মহলে জল্পনা হিসেবে রয়েছে। যদিও শাসকদলের অন্দরের খবর, মুখ্যমন্ত্রী বিদেশসফরের আগে রদবদলের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।