Gangasagar Mela 2025

গঙ্গাসাগর: চার নদীঘাটের দায়িত্ব মন্ত্রী, বিধায়কদের মধ্যে ভাগ করে দিলেন মমতা! নজর ‘ও পারেও’

মঙ্গলবার কলকাতায় ফিরে আসার আগে গঙ্গাসাগর মেলার প্রস্তুতি, ব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তা-সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিস্তারিত তথ্য দেন মুখ্যমন্ত্রী।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২৫ ১৫:২৪
Some ministers and MLAs will be in charge of the four river ghat of gangasagar said by CM Mamata Banerjee

গঙ্গাসাগরে বিশৃঙ্খলা বা অপ্রীতিকর ঘটনা রুখতে বিশেষ নজর দেওয়ার নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। —ফাইল ছবি।

বুধবার থেকেই শুরু হচ্ছে গঙ্গাসাগর মেলা। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তো বটেই, দেশেরও নানা জায়গা থেকে পুণ্যার্থীরা ভিড় করেন এই মেলায়। গঙ্গাসাগর মেলায় যাতে কোনও বিশৃঙ্খলা বা অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সে দিকে নজর রাখার নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুণ্যার্থীরা অনেকেই বাবুঘাট, আট নম্বর লট, কচুবেড়িয়া হয়ে গঙ্গাসাগরে পৌঁছন। মঙ্গলবার মমতা মূলত এই চার নদীঘাটের দায়িত্ব ভাগ করে দিলেন রাজ্যের মন্ত্রী এবং বিধায়কদের মধ্যে। কে কোন ঘাটে দায়িত্বে থাকবেন, তার তালিকাও দিলেন তিনি। একই সঙ্গে কুম্ভমেলার প্রসঙ্গ টেনে কেন্দ্রকে নিশানা করেন মমতা। মেলার সময় যাতে ‘ও পার’ থেকে কোনও সমস্যার সৃষ্টি না হয়, সে দিকে নজর রাখার কথাও জানান মুখ্যমন্ত্রী। তার জন্য জল, স্থল এবং আকাশবাহিনীর সঙ্গে স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসনকে যোগাযোগ করতে বলেন তিনি।

Advertisement

মেলার প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে সোমবার গঙ্গাসাগর গিয়েছেন মমতা। কপিলমুণির আশ্রম, ভারত সেবাশ্রমেও যান তিনি। মঙ্গলবার কলকাতায় ফিরে আসার আগে গঙ্গাসাগর মেলার প্রস্তুতি, ব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তা-সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিস্তারিত তথ্য দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, সুন্দরবন পুলিশের পাশাপাশি কলকাতা পুলিশও নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে। তাঁর কথায়, ‘‘গঙ্গাসাগর মেলা নিয়ে যেন কোনও নেগেটিভ ন্যারেটিভ (নেতিবাচক আখ্যান) তৈরি না হয়, তা দেখতে হবে সকলকে। কোনও সমস্যা হলে প্রশাসনকে জানান। সমাধান হবে। কিন্তু বদনাম করবেন না।’’

গঙ্গাসাগর মেলা উপলক্ষে মুড়িগঙ্গা নদীর সংস্কার করা হয়েছে। জলপথে যাতে পুণ্যার্থীদের মেলায় আসতে অসুবিধা না হয়, তা মাথায় রেখে সব রকম পদক্ষেপ করা হয়েছে বলেও জানান মমতা। মেলার সময় পর্যাপ্ত চিকিৎসক, এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, ওয়াটার অ্যাম্বুল্যান্স এবং প্যারামেডিক্যাল কর্মীর বন্দোবস্ত থাকবে। বাংলা, হিন্দি, ওড়িয়া, ইংরেজি, তামিল, তেলুগু, মরাঠি ভাষায় ঘোষণার ব্যবস্থাও থাকবে মেলাপ্রাঙ্গণে। তবে এ বার মেলায় প্লাস্টিক ব্যবহারে কড়া নজরদারি চালানো হবে বলে জানান মমতা। পুণ্যার্থীদের জন্য প্লাস্টিক ব্যাগের বদলে পরিবেশবান্ধব ব্যাগের ব্যবস্থা করবে প্রশাসন।

চার নদীঘাটের দায়িত্ব কাকে কাকে দেওয়া হয়েছে, তা জানান মমতা। বাবুঘাটের দায়িত্বে থাকবেন দেবাশিস কুমার, অতীন ঘোষ। কচুবেড়িয়াতে থাকবেন সুজিত বসু, মানস ভুঁইয়া, মণীশ গুপ্ত, গিয়াসউদ্দিন মোল্লা। এ ছাড়াও, লট এইট নদীঘাটের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ফিরহাদ হাকিম, দিলীপ মণ্ডল, মন্টুরাম পাখিরা, নীলিমা মিস্ত্রি, যোগরঞ্জন হালদার, বাপি হালদারকে। আর মেলাপ্রাঙ্গণের ঘাটের দায়িত্বে রাখা হয়েছে অরূপ বিশ্বাস, পুলক রায়, বঙ্কিম হাজরা, স্নেহাশিস চক্রবর্তী এবং শুভাশিস চক্রবর্তীকে। শুধু মন্ত্রী, বিধায়কেরাই নন, ১০-১২ জন সচিবও দায়িত্বে থাকবেন।

গঙ্গাসাগরে পরিবহণের সুব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। সরকারি, বেসরকারি মিলিয়ে দু’হাজারের বেশি বাস থাকবে রাস্তায়। জলপথে ১০০টি লঞ্চ, ৩২টি ভেসেল, ৯টি বার্জ থাকবে। ১২টি জেটি তৈরি করা হয়েছে বিভিন্ন জায়গায়। মুড়িগঙ্গায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ থাকবে বলেও জানান মমতা। গঙ্গাসাগর মেলার সময় যাতে কেউ কোনও ভাবে নিরাপত্তা বিঘ্নিত করতে না পারেন, সে দিকে নজর রাখার কথা বলেছেন তিনি। তা বলতে গিয়েই নাম না করে টেনেছেন বাংলাদেশের প্রসঙ্গ। ও পার বাংলার বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির আঁচ যেন গঙ্গাসাগরে এসে না পৌঁছয়, তা দেখার দায়িত্ব যেমন প্রশাসনের, তেমনই কেন্দ্রীয় নিরাপত্তাবাহিনীরও, মনে করিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘দেখে নিতে হবে কেউ যেন কোনও রকম ক্ষতি করতে না পারে। আমি কোস্ট গার্ড, নেভিকে বলেছি, যাতে ও দিক থেকে এ দিকেও কোনও অসুবিধা না হয়। জলও খেয়াল রাখতে হবে। জল, স্থল, আকাশ সবটাই খেয়াল রাখতে হবে।’’

গঙ্গাসাগর নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আবার বঞ্চনার অভিযোগ তুললেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্র কুম্ভমেলাকে জাতীয় মেলা হিসাবে ঘোষণা করেছে। কুম্ভমেলার সব খরচ কেন্দ্রের। গঙ্গাসাগরও জাতীয় মেলার স্বীকৃতি পাবে এক দিন, আশা করছি। এ ব্যাপারে কেন্দ্রকে বার বার চিঠি দিয়েছি। কিন্তু বাংলা সব সময়ই বঞ্চিত।’’ কপিলমুণির আশ্রমের সামনের জায়গা পাকা করার দায়িত্ব নিজেদের নেওয়ার অনুরোধ করেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘অনেকেই কপিলমুণির আশ্রমে প্রচুর অর্থ দান করেন। এ বছর অন্তত সেই অর্থ থেকে কিছুটা দিয়ে আশ্রমের সামনের অংশ তৈরি করুক।’’ মঙ্গলবার একগুচ্ছ প্রকল্পের ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। সাগর ব্লকে ১৭টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র, রাস্তা, মণি, দ্বারকা, পিয়ালি, সুন্দরী নদীর উপর ৩টি সেতু তৈরি করা হবে বলেও জানান তিনি।

Advertisement
আরও পড়ুন