বিকাশ ভট্টাচার্য। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
নিয়োগ মামলা তাঁকে ‘জনপ্রিয়’ করেছে। সেই নিয়োগ মামলাতেই এ বার চাকরিপ্রার্থীদের একাংশের অভিযোগের মুখে আইনজীবী তথা সিপিএম সাংসদ বিকাশ ভট্টাচার্য। এসএলএসটি (নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি)-র কর্মশিক্ষা, শারীরশিক্ষার চাকরিপ্রার্থীদের দাবি, বিকাশ তাঁর জুনিয়রের মাধ্যমে ২৭ লক্ষ টাকা নিয়ে তাঁদের হয়ে মামলা লড়েছিলেন। একই সঙ্গে তাঁদের অভিযোগ, যখন চাকরি দিতে রাজ্য সরকার পদ তৈরি করেছে, তখন সেই বিকাশই তা আটকাতে চাইছেন এবং আটকাচ্ছেন। অভিযোগ শুনে বিকাশের পাল্টা দাবি, এই সবটাই তৃণমূলের পরিকল্পিত।
দিন কয়েক আগে এই এসএলএসটি চাকরিপ্রার্থীরাই সল্টলেকে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বাড়ির সামনে চলে গিয়েছিলেন। তার পর তাঁরা গিয়েছিলেন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষের বাড়িতেও। সে দিন কুণালের সঙ্গে দেখা না হলেও শনিবার চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। তার পরেই চাকরিপ্রার্থীরা অভিযোগ করেন আইনজীবী তথা রাজ্যসভায় সিপিএম সাংসদ বিকাশ ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে।
চাকরিপ্রার্থীদের তরফে রাজু দাস বলেন, ‘‘২০১৯ সালে বিকাশ ভট্টাচার্য আমাদের হয়ে মামলা লড়েছিলেন। তাঁর জুনিয়র দিব্যেন্দু (চট্টোপাধ্যায়) পারিশ্রমিক হিসাবে ২৭ লক্ষ টাকা নিয়েছিলেন আমাদের থেকে। শারীরশিক্ষার প্রতি শুনানিতে এক লক্ষ ২০ হাজার টাকা এবং কর্মশিক্ষার প্রতি শুনানিতে ৭০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছিল। এই টাকা জুনিয়রের হাত দিয়ে বিকাশকে দিতে হত।’’ রাজু আরও বলেন, ‘‘এখন যখন সরকার আমাদের চাকরির ব্যবস্থা করেছে, তখন উনি (বিকাশ) আটকাচ্ছেন। যাঁকে দিয়ে আটকাচ্ছেন সেই সোমা রায়ের সার্টিফিকেট জাল। পর্ষদ তা জানিয়েও দিয়েছে।’’ রাজুর প্রশ্ন, ‘‘উনি (বিকাশ) পারিশ্রমিক হিসাবে টাকা নিয়েছেন, ঠিক আছে। কিন্তু এখন কেন আটকাচ্ছেন? এটা তো সাপ ও ব্যাঙের গালে চুমু খাওয়া হয়ে যাচ্ছে। কোনও নৈতিকতা নেই? একবার আমাদের পক্ষে লড়লেন, এখন বিরুদ্ধে লড়ছেন?’’
বিকাশের বক্তব্য, ‘‘সবাই জানে মক্কেলদের সঙ্গে আমার সরাসরি কথা হয়ও না, আমি সরাসরি টাকা নিইও না, নিতেও পারি না। মুশকিল হচ্ছে, জুনিয়রের মাধ্যমে তাঁরা এসেছেন, তাঁকে তাঁরা টাকা দিয়েছেন কি দেননি, তা তো আমি বলতে পারব না। আমাকে সরাসরি টাকা দিয়েছেন বলে তো তাঁরা বলতে পারছেন না, তা হলে আমার নাম জড়াচ্ছেন কেন? এটা তো পরিকল্পিত।’’ রাজ্যসভায় সিপিএম সাংসদের আরও বক্তব্য, ‘‘কে কাকে কত টাকা দিয়েছেন মামলার জন্য, তার জবাবদিহি আমি করব না। জবাবদিহি করবেন যিনি টাকা নিয়েছেন। মামলা তো আর বিনা পয়সায় হয় না। যে জুনিয়রকে টাকা দিয়েছেন ওঁরা নিশ্চয়ই দেখিয়েছেন যে কত টাকা লাগতে পারে!’’ বিকাশবাবু বলেন, ‘‘এঁদের তো দল বেঁধে আমার বাড়িতে পাঠিয়েছিল তৃণমূল। বাড়ি ঘেরাওয়ের চেষ্টা করেছিল। একই দলকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বাড়িতে।ওরা চাইছে সমস্ত প্রক্রিয়াটাকে দুর্নীতির মধ্যে দিয়ে কার্যকরী করা হোক। সেটাই শিখিয়ে পাঠানো হয়েছিল।’’ বিকাশের দাবি, গোটাটাই রাজনৈতিক অভিসন্ধি নিয়ে করা হচ্ছে। সিপিএম সাংসদ বলেন, ‘‘এর আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন আমার নামে ফাইল খুলবেন। পেরেছেন কি? এটাও ওদের কাছে ব্যুমেরাং হবে।’’
বিকাশের জুনিয়র দিব্যেন্দুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে। তিনি বলেন, ‘‘শুনানিতে স্যার এবং আমরা থাকলে যে ফিজ় হয়, তা-ই নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেটা যে ২৭ লক্ষ টাকা কি না সেটা আমি বলতে পারব না। আমরা এককালীন কোনও টাকা নিই না।’’ দিব্যেন্দুর আরও বক্তব্য, ‘‘এই মামলায় সুবীর সান্যাল নামের আরও এক জন সিনিয়র ছিলেন। আমাদের মামলার ভিত্তিতেই ওঁদের নাম তালিকায় বেরিয়েছিল। সেই নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি মৌসুমী ভট্টাচার্য। এখন সেই নির্দেশে স্থগিতাদেশ রয়েছে।’’
এ প্রসঙ্গে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষের দাবি, কিছু আইনজীবী ইচ্ছাকৃত ভাবে মামলা করে নিয়োগ আটকে রাখছেন। তাঁর কথায়, ‘‘নিজেদের আর্থিক লাভের স্বার্থে অনেকে চাইছেন মামলা দীর্ঘায়িত হোক। একই সঙ্গে রাজনৈতিক ফায়দা তোলারও চেষ্টা জড়িয়ে রয়েছে এর সঙ্গে।’’