Sunita Williams Return

বিজ্ঞানে মিশে গেল রূপকথা

আমরাও, অর্থাৎ আমজনতা, চিরুর চেয়ে পিছিয়ে নেই। আকাশ নামের জিনিসটাকে আমরাই বা কতটা বুঝি! কবির আকাশ আর বিজ্ঞানীর আকাশও তো এক নয়। ওই মোলায়েম নীলিমাকে যতটা নিরীহ বলে মনে হয়, ততটা যে নয়, তা এক নভশ্চর বা বিজ্ঞানী হাড়ে হাড়ে জানেন।

Advertisement
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০২৫ ০৭:৩৬
ড্রাগন ক্যাপসুল থেকে বেরোনোর পরে স্পেসএক্সের উদ্ধারকারী জাহাজে সুনীতা উইলিয়ামস।

ড্রাগন ক্যাপসুল থেকে বেরোনোর পরে স্পেসএক্সের উদ্ধারকারী জাহাজে সুনীতা উইলিয়ামস। ছবি: নাসা।

আমাদের ‘চিরু খ্যাপা’ হাঁ করে আকাশ দেখত। কী দেখিস, জিজ্ঞাসা করলে বলত, ‘‘ব্যাপারটা কিছু বোঝা যাচ্ছে না।’’

Advertisement

আমরাও, অর্থাৎ আমজনতা, চিরুর চেয়ে পিছিয়ে নেই। আকাশ নামের জিনিসটাকে আমরাই বা কতটা বুঝি! কবির আকাশ আর বিজ্ঞানীর আকাশও তো এক নয়। ওই মোলায়েম নীলিমাকে যতটা নিরীহ বলে মনে হয়, ততটা যে নয়, তা এক নভশ্চর বা বিজ্ঞানী হাড়ে হাড়ে জানেন। ‘মানুষ চূর্ণিল যবে নিজ মর্ত্যসীমা’, তখন থেকেই আমরা, অর্থাৎ অ-বিজ্ঞানী আম আদমিরাও জেনে গিয়েছি, ক্যালকুলেশন কারে কয়! আর ওই ক্যালকুলেশনে চুলমাত্র ভুলও কত ধ্বংসাত্মক হতে পারে।

‘এক মুহূর্তের ভুলচুক’ কল্পনা চাওলাকে অনস্তিত্বে নিক্ষেপ করেছিল, আমরা আজও ভুলিনি। তাই নভশ্চারণা যতটা না রোমাঞ্চকর, তার চেয়ে অনেক বেশি তথ্যনির্ভর ও ক্যালকুলেটিভ। তিলমাত্র ভুলচুকও গ্রাহ্য নয়। আর তাই ন’মাস আগে মাত্র দিনকয়েকের জন্য সুনীতা উইলিয়ামস যখন মহাকাশ স্টেশনে গিয়েছিলেন, তখন আমাদের তেমন কোনও উদ্বেগ ছিল না। অগাধ আস্থা ছিল, ঠিক ফিরে আসবেন। কিন্তু ফেরিযানটি বিগড়োল আর সুনীতা এবং বুচ আটকে রইলেন মহাকাশে। সেই থেকে আমাদের দুশ্চিন্তার শুরু, যন্ত্রনির্ভরতার উপরে সন্দেহের সূচনা এবং অতল ভয়ের অঙ্কুরোদ্গম।

মাঝেমধ্যেই সাপের ফণার মতো প্রশ্ন মাথা তুলেছে, ওঁরা দু’জন ফিরবেন তো? না কি ত্রিশঙ্কুর মতো আটকে থাকবেন ওখানেই? ওঁদের খাবার ফুরিয়ে যাবে না তো? টান পড়বে না তো অক্সিজেনে? রকেট সায়েন্সের উপরে আমাদের অগাধ বিশ্বাসেও চিড় ধরতে শুরু করেছিল। হঠাৎ হঠাৎ, টিভিতে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির খেলা দেখতে দেখতে, সাউথ সিটি মলে ঘুরতে ঘুরতে, মোবাইল ফোনে কিছু দেখতে দেখতে বা ঘুম আসার আগের মুহূর্তে আবছায়া মাথায় খুচ করে একটা সূচিকাভেদের মতো মনে পড়ত, আহা, ওঁরা যে ওই অত উপরে আটকে আছেন, ঘুরপাক খাচ্ছেন, ওঁদের কী হবে ভগবান? জীবন যে কত অনিশ্চয়তায় ভরা! আজও! বিজ্ঞান এত আগুয়ান হল, তবু এই জীবনকে এত নিয়তি-নির্ভর মনে হয় কেন? আমাদের বিজ্ঞান আছে বটে, অ-বিজ্ঞানও কি নেই? নইলে প্রিয়জনদের জন্য আমাদের মন কু-ডাক ডাকে কেন?

অবশেষে উজ্জ্বল উদ্ধার। ব্রাহ্মমুহূর্তে অতলান্তিক সাগরে, ফ্লরিডার উপকূলে তাঁদের অবতরণ। নিখুঁত বৈজ্ঞানিক ক্যালকুলেশনে, অতন্দ্র হিসেবনিকেশে। তবু ওর মধ্যেও মিশে গেল রূপকথা। অতলান্তিকের ডলফিনেরা তাঁদের ভাসমান ক্যাপসুলের চার দিকে ঘুরে ঘুরে এই ঘরে ফেরাকে স্বাগত জানিয়েছে। এটা হয়তো সত্যিই তেমনটা নয়, তবে কবি-কল্পনায় কত অসম্ভবই তো মিলেমিশে যায়। আজ আমাদের নিশ্চিন্তির শ্বাস মোচন আর উদ্বেগের অবসানে ডলফিনেরা শামিল হলে তেমন ক্ষতিই বা কী?

Advertisement
আরও পড়ুন