শাহজাহান শেখ। —ফাইল চিত্র।
এর আগে তিনি দাবি করেছিলেন, তাঁকে ফাঁসানো হচ্ছে। গত শুক্রবার আবার বলেছিলেন, ‘‘সব মিথ্যা। ওরা বিজেপির দালাল।’’ তবে সেই শাহজাহানই মঙ্গলবার তাঁর ‘ষড়যন্ত্র-তত্ত্ব’ নিয়ে মুখ খুলতে রাজি হলেন না। জানালেন, এই বিষয়ে তিনি কোনও উত্তর দিতে রাজি নন।
মঙ্গলবার মেডিক্যাল পরীক্ষার জন্য সিজিও কমপ্লেক্স থেকে বার করা হয় শাহজাহানকে। সন্দেশখালির সাসপেন্ড হওয়া এই তৃণমূল নেতাকে নিয়ে যাওয়া হয় জোকার ইএসআই হাসপাতালে। সিজিও থেকে বেরোনোর পরেই সংবাদমাধ্যমের তরফে শাহজাহানকে প্রশ্ন করা হয়, “আপনার বিরুদ্ধে কে ষড়যন্ত্র করছে?” উত্তরে খানিক নিস্পৃহ ভঙ্গিতেই তিনি বলেন, “আমি কোনও উত্তর দিতে রাজি নই।
কিছু দিন আগেও অবশ্য শাহজাহান বলেছিলেন, “আল্লা আছেন, বিচার করবেন!’’ গত বুধবার অবশ্য আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য নিজেই উদ্যোগী হন তিনি। বলেন, ‘‘সব মিথ্যে! আমাকে ফাঁসানো হয়েছে।’’ আর গত শুক্রবার ইএসআই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে শাহজাহান জানিয়েছিলেন, ‘‘সব মিথ্যা। ওরা বিজেপির দালাল।’’ কারা বিজেপির ‘দালাল’, তা অবশ্য স্পষ্ট করেননি তিনি।
রবিবার অবশ্য খানিক ভোলবদল করেছিলেন শাহজাহান। “বিজেপির কে বা কারা আপনাকে ফাঁসাচ্ছে? আপনার কার বিরুদ্ধে অভিযোগ?” এই দুই প্রশ্নের উত্তরে খানিক নিচু স্বরে তিনি বলেন, “আমার কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ নেই।” রবিবার ইএসআই হাসপাতালে পৌঁছনোর পর শাহজাহানকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, “দল তো আপনার পাশে নেই। কী বলবেন?” খানিক প্রত্যয়ের সুরে তর্জনী উঁচিয়ে শাহজাহানকে বলতে শোনা যায়, “কেউ থাকল বা না থাকল, আমার আল্লা আছে।”
সন্দেশখালিকাণ্ডে ধৃত শাহজাহান বর্তমানে ইডি হেফাজতে রয়েছেন। তাঁকে রাখা হয়েছে সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে। শাহজাহানের কন্যা সাবিনার নামে তাঁর একটি মাছ ব্যবসার সংস্থা চলে, যার নাম সাবিনা এন্টারপ্রাইজ়। ওই সংস্থার অ্যাকাউন্টে ১৩৭ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে বলে অভিযোগ। কালো টাকা সাদা করার মাধ্যম হিসাবে এই সংস্থাটিকে ব্যবহার করতেন তিনি। এর আগে সে সব অভিযোগই উড়িয়ে দেন সন্দেশখালির সাসপেন্ড হওয়া তৃণমূল নেতা। প্রশ্ন শুনে তিনি বলেছিলেন, ‘‘সব মিথ্যা কথা। কেন এগুলো বলছেন! সব দালাল। বিজেপির দালাল।’’
রেশন দুর্নীতি মামলায় প্রথম শাহজাহানের নাম জড়িয়েছিল। তাঁর বাড়িতে তল্লাশি চালাতে গিয়েছিল ইডি। কিন্তু কেন্দ্রীয় আধিকারিকদের মার খেয়ে ফিরতে হয়েছিল শাহজাহানের ডেরা থেকে। তার পর থেকে তিনি নিজেও উধাও হয়ে গিয়েছিলেন। প্রায় দু’মাস পর শাহজাহানকে গ্রেফতার করে রাজ্য পুলিশ। তার পর আদালতের নির্দেশে তাঁকে তুলে দেওয়া হয় সিবিআইয়ের হাতে। সিবিআই হেফাজতে থাকাকালীন ইডিও শাহজাহানকে গ্রেফতার করে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে সন্দেশখালিতে সাধারণ গ্রামবাসীদের উপর অত্যাচার, জমি জবরদখল, মাছের ব্যবসার আড়ালে দুর্নীতির মতো একাধিক গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। গ্রেফতারির পর শাহজাহানকে ছ’বছরের জন্য দল থেকে সাসপেন্ড করেছে তৃণমূল।