শাহজাহান শেখ। —ফাইল চিত্র।
কিছু দিন আগে বলেছিলেন, ‘‘আল্লা আছেন, বিচার করবেন!’’ কিন্তু সেই আল্লার উপর বোধ হয় ভরসা হারালেন শাহজাহান শেখ। বুধবার তিনি নিজেই উদ্যোগ নিলেন প্রকাশ্যে আত্মপক্ষ সমর্থনের। সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের দেখতে পেয়ে বললেন, ‘‘সব মিথ্যে! আমাকে ফাঁসানো হয়েছে।’’
বুধবার মেডিক্যাল পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সন্দেশখালির তৃণমূল নেতাকে। গাড়িতে ওঠার সময় হঠাৎই মুখ খোলেন সন্দেশখালির নেতা। উঁচু স্বরে বলেন, ‘‘ আমি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার।’’ এমনকি, মেডিক্যাল পরীক্ষা করিয়ে তাঁকে ইডি যখন সিজিও কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে তখনও আর্থিক লেনদেন নিয়ে প্রশ্নের জবাবে দু’টি শব্দই বার বার বলতে শোনা গিয়েছে শাহজাহানকে— ‘‘সব মিথ্যে, সব মিথ্যে!’’
সন্দেশখালির তৃণমূল নেতা শাহজাহানের বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির সন্ধান পাওয়া গিয়েছে বলে ইডি সূত্রে খবর। এর মধ্যে রেশন দুর্নীতি ছাড়াও রয়েছে মাছের ব্যবসার আড়ালে চালানো দুর্নীতি। ইডির দাবি, মাছের ব্যবসাকে পর্দা হিসাবে ব্যবহার করে শাহজাহান তাঁর নানা কুকর্মের মাধ্যমে অর্জিত বেআইনি অর্থ বা কালো টাকা সাদা করেছেন। ইডির সন্দেহ, এ ভাবে কোটি কোটি টাকা ঘুর পথে আইনসিদ্ধ করেছেন তিনি।
তবে বুধবার শাহজাহান দাবি করেছেন, এই সব অভিযোগই মিথ্যা। তিনি আসলে ষড়যন্ত্রের শিকার। একই সঙ্গে শাহজাহানের ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য, ‘‘বুঝতেই পারছেন, কারা এই ষড়যন্ত্র করছে!’’ কারা ষড়যন্ত্র করতে পারে শাহজাহানের বিরুদ্ধে! সন্দেশখালির নেতা ইঙ্গিত দিলেও মুখে কারও নাম নেননি।
উল্লেখ্য, রেশন দুর্নীতি কাণ্ডে গ্রেফতার মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ওরফে বালুকে গ্রেফতারির পরই ইডি শাহজাহানের নাম জানতে পারে। সেই সূত্রে শাহজাহানের বাড়িতে তল্লাশি চালাতে গিয়ে গত ৫ জানুয়ারি শাহজাহানের গ্রামে আক্রান্ত হন ইডির আধিকারিকেরা। গ্রামবাসীরা ইট, লাঠি, পাথর নিয়ে হামলা চালিয়েছিল ইডির উপর। পরে ইডি অভিযোগ করেছিল, ধরা পড়ার ভয়ে শাহজাহানই ওই হামলা সংগঠিত করেছে। এর পর শাহজাহানের বিরুদ্ধে মামলা হয়। শাহজাহান ৫৭ দিন নিখোঁজ থাকার পর গত ২৯ ফেব্রুয়ারি গ্রেফতার হয় রাজ্য পুলিশের হাতে। তার পর একে একে সিবিআই এবং ইডি গ্রেফতার করে তাকে।
তবে এই দীর্ঘ একমাসে শাহজাহানকে বিশেষ মুখ খুলতে দেখা যায়নি। বরং সংবাদ মাধ্যমে প্রতিনিধিদের দিকে না তাকিয়ে সোজা হেঁটে গাড়িতে উঠেছেন এবং গাড়ি থেকে নেমে বেরিয়ে গিয়েছেন। এর আগে এক বারই সিবিআই হেফাজতে থাকাকালীন কিছুটা ধ্বস্ত শাহজাহান মুখ খুলেছিলেন। সিবিআই দফতর থেকে বেরনো সময় বলেছিলেন, ‘‘আল্লা আছেন। তিনিই বিচার করবেন।’’ কিসের বিচার? কাদের বিচারের অপেক্ষা করছেন তিনি? তা অবশ্য বলেননি শাহজাহান। বুধবার দ্বিতীয়বার মুখ খুললেন শাহজাহান। তবে এ বার আর আল্লার ভরসায় না থেকে তিনি নিজেই ইঙ্গিত করলেন ‘ষড়যন্ত্র’ এবং ‘ষড়যন্ত্রকারী’দের দিকে।