Saayoni Ghosh in Recruitment Case

১১ ঘন্টা জেরার পর বেরিয়ে সায়নী বললেন, সহযোগিতা করেছি ১০০ শতাংশ, ফের ডাকা হল আগামী বুধবার

নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় শুক্রবার সায়নীকে তলব করেছিল ইডি। গত মঙ্গলবার তাঁকে ইডির তরফে নোটিস পাঠানো হয়েছিল। সেই ডাকে সাড়া দিয়েই শুক্রবার সাড়ে ১১টা নাগাদ তিনি সিজিও কমপ্লেক্সে পৌছঁন।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০২৩ ২২:৫০
Saayoni Ghosh comes out from cgo complex

ইডি দফতর থেকে বেরিয়ে আসছেন যুব তৃণমূলের রাজ্য সভানেত্রী তথা অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ। —নিজস্ব চিত্র।

হাজিরা দেওয়ার প্রায় সাড়ে ১১ ঘণ্টা পর ইডি দফতর থেকে বেরোলেন সায়নী ঘোষ। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় শুক্রবার তাঁকে তলব করেছিল ইডি। গত মঙ্গলবার তৃণমূল যুবনেত্রীকে ইডির তরফে নোটিস পাঠানো হয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছিল, শুক্রবার কলকাতায় ইডির সদর দফতর সিজিও কমপ্লেক্সে সকাল ১১টার মধ্যে হাজির হতে হবে সায়নীকে। সেই তলবে সাড়া দিয়ে শুক্রবার সকাল ১১টা ২১ মিনিটে কলকাতায় ইডির সদর দফতর সিজিও কমপ্লেক্সে উপস্থিত হন যুব তৃণমূলের রাজ্য সভানেত্রী। বেরোলেন ১০ টা ৪৫ মিনিট নাগাদ। ইডি সূত্রে খবর, ৫ জুলাই আবার সায়নীকে তলব করা হয়েছে।

ইডি দফতর থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে তিনি জানান, ইডির সঙ্গে ১০০ শতাংশ সহযোগিতা করেছেন। তাঁর কথায়, “আবার তলব করবেন। আমাকে যদি একশোবার তলব করা হয়, আমি একশোবারই আসব। আজ ওঁরা কিছু নথি নিয়ে আসতে বলেছিলেন। আমি সে সব জমা দিয়েছি। আরও কিছু নথি চাওয়া হয়েছে।” এর পর সাংবাদিকরা তাঁকে প্রশ্ন করেন, এর আগেও চাপ দিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম বলানোর অভিযোগ উঠেছিল, এ বারও কি সে রকম কোনও অভিযোগ আছে? উত্তরে সায়নী শুধু হাত নাড়েন এবং ‘না’ বলে চলে যান।

Advertisement

কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সূত্রে খবর, ইডি দফতরে অভিনেত্রী-নেত্রীকে তাঁর সম্পত্তি এবং লেনদেন সংক্রান্ত বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কিছু নিয়োগ মামলার তদন্তকারী আধিকারিক-সহ অন্যান্যরা তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। এঁদের মধ্যে মহিলা আধিকারিকেরা ছিলেন। ব্যাঙ্কের নথি, আয়কর রিটার্ন, সম্পত্তির নথি লেনদেনের তথ্য আনতে বলা হয়েছিল সায়নীকে। বেশ কিছু নথি এনেওছিলেন তিনি। কুন্তলের থেকে কী টাকা পেয়েছেন? কোনও আর্থিক সুবিধা পেয়েছেন কি না, কুন্তল তাঁর কোনও সম্পত্তিতে বিনিয়োগ করেছিলেন কি না, বা কোনও অনুষ্ঠানের খরচ বহন করেছিলেন কি না সে সবও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

শুক্রবার সায়নীকে জেরা চলাকালীন অবশ্য দুপুরে খাওয়ার ব্রেক দেওয়া হয়েছিল। তবে সায়নী নীচে নামেননি। তিনি সিজিও কমপ্লেক্সের ভিতরেই ছিলেন।

ইডি সূত্রে খবর, রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হাতে ধৃত তথা তৃণমূলের বহিষ্কৃত যুবনেতা কুন্তলের সূত্র ধরেই উঠে এসেছে তৃণমূল যুবনেত্রী সায়নীর নাম। কুন্তলের সম্পত্তি সংক্রান্ত বিষয়ে তদন্ত করার সময় সায়নীর নাম উঠে এসেছে বলে ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে। আর সেই বিষয়েই যুব তৃণমূলের সভানেত্রীকে ইডি জিজ্ঞাসাবাদ করেছে বলে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে খবর। ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, সায়নীকে আয়কর জমা দেওয়ার ফাইল এবং সম্পত্তির হিসাব নিয়ে আসতে বলা হয়েছিল। যুবনেত্রীর যত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট রয়েছে, তার তথ্য এবং লেনদেনের নথিও নাকি আনতে বলা হয়েছিল।

ইডি সূত্রে খবর, দুই পর্বে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় সায়নীকে। মাঝে তাঁকে চা এবং দুপুরের খাবারও দেওয়া হয়েছিল।

ইডির তরফে এই প্রথম সায়নীকে তলব করা হলেও নিয়োগকাণ্ডের তদন্ত চলাকালীন এর আগেও তাঁর নাম উঠে এসেছে। নিয়োগ মামলায় ধৃত কুন্তলের সঙ্গে একই মঞ্চে দেখা গিয়েছিল সায়নীকে। তখন নিয়োগ মামলা নিয়ে জট পাকতে শুরু করেনি। কুন্তলও ইডির নজরে আসেননি। কুন্তলের সঙ্গে সায়নীর ছবিও প্রকাশ্যে আসে (সেই ছবির সত্যতা যাচাই করে দেখেনি আনন্দবাজার অনলাইন)। যদিও সেই প্রসঙ্গ উঠে আসার পর সায়নী জানিয়েছিলেন, তাঁরা দু’জনেই একই দলের সদস্য (বর্তমানে শুধু তিনিই শাসক দলের সদস্য। কুন্তলকে তৃণমূল থেকে বহিষ্কৃত করা হয়েছে)। তাই এক মঞ্চে থাকতেই পারেন। উল্টে কুন্তলকে বহিষ্কার করতে চেয়ে সায়নী তৃণমূল নেতৃত্বকে চিঠি দিয়েছিলেন বলেও জল্পনা তৈরি হয়েছিল। যদিও তাঁর ঘনিষ্ঠ একটি সূত্রের দাবি, এমন কোনও চিঠি সায়নী দেননি। সবটাই ‘উড়ো খবর’ এবং ‘গুজব’। যুব সভানেত্রীও প্রকাশ্যে এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। ইডি সূত্রে খবর, সেই কুন্তলের যোগসূত্র ধরেই নিয়োগকাণ্ডে সায়নীর নাম জড়িয়েছে।

প্রসঙ্গত, পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে ইদানীং ব্যস্ত রয়েছেন যুব তৃণমূল সভানেত্রী। তৃণমূল সূত্রে খবর, জোরকদমে প্রচারের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। এরই মধ্যে বুধবার সকালে অভিনেত্রীকে ইডির সমন পাঠানোর কথা প্রকাশ্যে আসে। কিন্তু তার পর থেকেই ‘উধাও’ ছিলেন সায়নী। তাঁর দক্ষিণ কলকাতার বিক্রমগড়ের বাড়িতেও তৃণমূল নেত্রীর খোঁজ পাওয়া যায়নি। তৃণমূল সূত্রে খবর, দলের নেতাদের অনেকে চেয়েও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলেন না। তাই তিনি হাজিরা দেবেন কি না, তা নিয়েও ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছিল। তিনি হাজিরা এড়াতে পারেন বলে জল্পনাও তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সেই জল্পনাকে উড়িয়ে দিয়ে শুক্রবার ইডির দফতরে পৌঁছন সায়নী। শুক্রবার সকালে সিজিও কমপ্লেক্সে হাজিরা দিতে এসে সায়নী জানিয়েছিলেন, তিনি প্রচারের কাজে ব্যস্ত ছিলেন। কিন্তু তাঁকে ৪৮ ঘণ্টার নোটিসে ইডি ডেকেছে। সেই ডাকে সাড়া দিয়েই তিনি সিজিও কমপ্লেক্সে হাজির হয়েছেন। তদন্তে ১০০ শতাংশ সহযোগিতা করবেন বলেও তিনি জানিয়েছিলেন।

আরও পড়ুন
Advertisement