অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
নিজের লোকসভা কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবারে ‘সেবাশ্রয়’ খুলে সাধারণ জনতাকে স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কয়েক দিনেই সেই শিবিরে বিপুল সাড়া মিলেছে বলে তাঁর দফতর সূত্রের দাবি। আর খোদ অভিষেকের মতে, ‘‘একটা লোকসভা কেন্দ্র কী ভাবে স্বাস্থ্য-ব্যবস্থায় বিপ্লবের দিকে নিয়ে যেতে পারে, তার নতুন অধ্যায় রচিত হচ্ছে!’’ রাজনৈতিক শিবিরে প্রশ্ন, দৈনন্দিন চিকিৎসায় সরকারি পরিকাঠামো কি যথেষ্ট হতে পারছে না?
কয়েক দিনে যে বিপুল সংখ্যক মানুষ শিবিরগুলিতে উপস্থিত হয়েছেন, তাতেই সেই প্রশ্নের উত্তর রয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক শিবির। রাজনৈতিক স্তরে শুরু এই প্রকল্প এখন রাজ্যের শাসক শিবিরকেই সামগ্রিক স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে। রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে থাকায় এই ‘অস্বস্তি’ আরও তীব্র!
অভিষেক গত ২ জানুয়ারি এই প্রকল্পের সূচনা করেছেন। নিজের লোকসভা কেন্দ্রের ৭টি বিধানসভা এলাকার প্রত্যেকটিতে অন্তত ৪০টি শিবিরের মাধ্যমে প্রাথমিক চিকিৎসা, শারীরিক পরীক্ষা ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতে সেখানে আছেন ১২০০ চিকিৎসক। বিভিন্ন পরীক্ষা, প্রয়োজনীয় পরামর্শ এবং প্রয়োজন মতো কলকাতার সরকারি হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করা হচ্ছে সেই শিবির থেকেই। সাংসদের দফতর সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রথম ৭ দিনে এক লক্ষ ১০ হাজার মানুষ এসেছেন ডায়মন্ড হারবারের শিবিরগুলিতে। এখনও পর্যন্ত ৩২ হাজারের বেশি পরীক্ষা হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে মোট ১,৬৩১ জনকে। চিকিৎসক, চিকিৎসা-কর্মী ছাড়াও এই কর্মসূচি রূপায়ণে সাংসদেরএকটি বড় দলও কাজ করছে। এবং শিবির কতটা সাড়া ফেলেছে, তা ফলাও করে প্রচারও করা হচ্ছে। সূত্রের খবর, শিবির চালাতে খরচ হয়েছে বেশ কয়েক কোটি টাকা। তৃণমূলের ডায়মন্ড হারবার সংসদীয় দলের পাশাপাশি বহু ‘শুভাকাঙ্ক্ষী’ এই খরচ বহনে এগিয়ে এসেছেন।
সেই সূত্রেই প্রশ্ন উঠছে, তা হলে সরকারি পরিকাঠামো কি মানুষকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিতে ব্যর্থ? অভিষেকের ব্যাখ্যা, ‘গত ১০-১৫ বছরে রাজ্যে অনেক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যায়ের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে আমরা ৬-৭টি বুথ নিয়ে এক একটি ক্লাস্টার তৈরি করেছি। সেখানে ৬-৭ হাজার মানুষ পরিষেবা পাবেন’। সারা রাজ্যেই এই রকম শিবির করে চিকিৎসার ব্যবস্থাকেও উৎসাহিত করতে চান তিনি। অন্যত্র জনপ্রতিনিধিরা এই রকম উদ্যোগ নিলে তিনি সাহায্য করবেন বলেও আশ্বস্তও করেছেন।
অভিষেকের এই উদ্যোগ চিকিৎসা সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে সরকারের সমান্তরাল হয়ে উঠেছে। ইতিমধ্যেই তৃণমূলের একাধিক বিধায়ক নিজের নির্বাচনী কেন্দ্রে এই রকম চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার তোড়জাড় শুরু করেছেন। তাতে সরকারি ব্যবস্থা নিয়ে শাসক শিবিরের দাবিই সংশয়ের মুখে পড়ছে। বিরোধীরাও এই প্রশ্ন তুলে সরব। রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের কথায়, “বাংলায় সাংবিধানিক কাঠামো ভেঙে পড়েছে। এক দিকে মুখ্যমন্ত্রী গঙ্গাসাগরে গিয়ে প্রতিরক্ষার বিষয় নিয়ে কথা বলছেন, অন্য দিকে তাঁর উত্তরসূরি সরকারি সুবিধা ব্যবহার করে সমান্তরাল ব্যবস্থা চালাচ্ছেন!” সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, “সরকারি সুযোগ ও কর্তৃত্ব কাজে লাগিয়ে ব্যক্তি-মাহাত্ম্য এবং ‘ডায়মন্ড হারবার মডেল’ তুলে ধরার জন্য যা করা হচ্ছে, সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়েই কি প্রশ্ন উঠছে না? পিসি-ভাইপোর অদ্ভুত খেলা!”
অভিষেকের এই উদ্যোগে মমতার সরকারের অস্বস্তির প্রসঙ্গ পাশ কাটিয়ে যাচ্ছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। এই কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত অভিষেক-ঘনিষ্ঠ নেতা শান্তনু সেনের কথায়, “বাম জমানায় সম্পূর্ণ ভেঙে পড়া স্বাস্থ্যব্যবস্থা আজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে এমন জায়গায় পৌঁছেছে, যেখানে পরিকাঠামো ও পরিষেবা উন্নয়নের মধ্যে দিয়ে ১০০% মানুষ বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরিষেবা পান। যা সারা দেশের জন্য রোল মডেল। তেমনই অভিষেক তাঁর কেন্দ্রে যে ঐতিহাসিক পদক্ষেপ করেছেন, সেটাও প্রত্যেকটা সংসদীয় ক্ষেত্রের জন্য মডেল হতে পারে।” এমন কর্মসূচির দরকার হল কেন? শান্তনুর বক্তব্য, “বছরের শুরুতে এই ধরনের বৃহৎ আকারের স্বাস্থ্য শিবির বাকি দিনগুলিতে অন্যদেরও উদ্বুদ্ধ করতে পারে।”