Banduan Tiger Scare

বাঘিনির খোঁজেই কি তার পথে বাঘ

বিভিন্ন গ্রামে পায়ের ছাপ মিললেও ফাঁদ ক্যামেরায় বাঘের ছবি ধরা পড়েনি। বান্দোয়ানের জঙ্গলেও গত এক সপ্তাহ ধরে সেই পায়ের ছাপ পাওয়া যায়।

Advertisement
প্রশান্ত পাল 
শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০২৫ ০৬:২৪
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

বাঘিনি জ়িনতের খোঁজেই কি বান্দোয়ানের জঙ্গলে ঘুরছিল রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার? আমজনতার মনে উঁকি দেওয়া এই প্রশ্ন যে ভিত্তিহীন, জোর করে বলতে পারছেন না বন কর্মী ও বনাধিকারিকেরাও। বরং টানা এক সপ্তাহ ধরে বাঘটির পিছু ধাওয়া করা বনকর্মীদের একাংশও মনে করছেন, হয়তো জ়িনতের খোঁজেই সে এসেছিল।

Advertisement

মুখ্য বনপাল (দক্ষিণ-পশ্চিম চক্র) বিদ্যুৎ সরকার বলেন, ‘‘বাঘেদের মনস্তত্ব বোঝা খুবই মুশকিল। সে কাউকে খুঁজে বেড়াচ্ছে কি না, তা স্পষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। তবে এটা ঠিক যে এই বাঘটি আগের বাঘিনির পথ ধরেই এসেছে। তাই হয়তো কেউ কেউ মনে করছেন সে বাঘিনিকে খুঁজছে।’’

ওড়িশার সিমলিপাল ব্যাঘ্র প্রকল্প থেকে ঝাড়খণ্ড হয়ে ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ির শিমূলপালের জঙ্গল ঘুরে বান্দোয়ানের জঙ্গলে ২২ ডিসেম্বর এসেছিল জ়িনত। বান্দোয়ানের রাইকা পাহাড়ের জঙ্গলের গভীরে ঘাপটি মেরে থাকার পরে সে মুকুটমণিপুর জলাধারের পাশে রানিবাঁধের গোঁসাইডির জঙ্গলে যায়। সেখানে ২৯ ডিসেম্বর ঘুমপাড়ানি গুলিতে কাবু হয়ে ধরা দেয় জ়িনত।

এ ক’দিন পরে ৩১ ডিসেম্বর চাণ্ডিল রেঞ্জের জঙ্গলে একটি গবাদি পশুর আধখাওয়া দেহ মেলে। বিভিন্ন গ্রামে পায়ের ছাপ মিললেও ফাঁদ ক্যামেরায় বাঘের ছবি ধরা পড়েনি। বান্দোয়ানের জঙ্গলেও গত এক সপ্তাহ ধরে সেই পায়ের ছাপ পাওয়া যায়। তল্লাশি চালান বনকর্মীরা। শেষে শনিবার রাইকা পাহাড়ের জঙ্গলে ফাঁদ ক্যামেরায় রয়্যাল বেঙ্গলের টাইগারের ছবি ধরা পড়ে।

অভিযানে থাকা এক আধিকারিক বলেন, ‘‘দেখে মনে হচ্ছে আগের বাঘিনি ঠিক যে পথ ধরে জঙ্গলে ঘুরে বেড়িয়েছে, এই বাঘও সেই পথেই ঘুরেছে। খাঁচায় দেওয়া টোপে আগ্রহ ছিল না। মনে হচ্ছিল কাউকে খুঁজে বেড়াচ্ছে।’’ অভিযানে শামিল সুন্দরবনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘বাঘেদের ঘ্রাণশক্তি খুব প্রখর। বাঘ যাওয়ার পথে প্রস্রাব করে। হতে পারে জ়িনত যখন ঝাড়খণ্ডের জঙ্গলে ছিল, তখন হয়তো এই বাঘের সঙ্গে ওর সাক্ষাৎ হয়েছিল। হয়তো সেই টানেই বাঘটি এখানে এসেছিল। কারণ ঠিক যে পথে বাঘটি ঘুরে বেড়িয়েছে, বাঘিনির বিচরণও ছিল সেই পথ ধরেই।’’ যে কারণে কলকাতার চিড়িয়াখানা থেকে অন্য বাঘিনির মূত্র এনে খাঁচার চারপাশে ছড়ালেও লাভ হয়নি।

ডিএফও (কংসাবতী দক্ষিণ) পূরবী মাহাতো বলেন, ‘‘বাঘিনি পাঁচ দিন ধরে রাইকা পাহাড়ে ছিল। বাঘটিও পাঁচ দিনই রাইকা ও ভাড়ারিয়া পাহাড়ে ঘুরে বেড়িয়েছে। দেখে মনে হওয়া স্বাভাবিক, ওই বাঘিনির সন্ধানেই সে ঘুরছে।’’

স্থানীয়দের দাবি, বাঘিনি রাইকা পাহাড়ের জঙ্গল থেকে মানবাজার ২ ব্লকের জঙ্গলে ঢুকেছিল। বাঘটির অভিমুখও সে দিকেই ছিল। পটকা ফাটিয়ে না তাড়ালে হয়তো বাঘটি বাঘিনির খোঁজে মানবাজার ২ ব্লকের জঙ্গলের দিকেই যেত।

মুখ্য বনপাল (পশ্চিম চক্র) এস কুলানডেইভেল বলেন, ‘‘দু’জনের বিচরণ ধরে আমাদের মনে হচ্ছে, বাঘটি যেন বাঘিনিকে খুঁজছে। কিন্তু এই মনে হওয়ার পিছনে কোনও তথ্য প্রমাণ নেই। তবে আমরা খুশি যে বান্দোয়ানের জঙ্গলকে বাঘেরা নিরাপদ আশ্রয় বলে মনে করছে।’’

Advertisement
আরও পড়ুন