—ফাইল চিত্র।
একটানা প্রায় ৫৩ ঘণ্টা ধরে তল্লাশি চলেছে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের বিধায়ক তন্ময় ঘোষের চালকলে। গত বুধবার থেকে চলা সেই তল্লাশি অভিযানের মাঝে বৃহস্পতিবার বিজেপির আর এক ‘দলবদলু’ বিধায়ক হরকালী প্রতিহারকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেছেন, ‘‘এ বার হরকালীর পালা।’’ তার পর থেকে বাকুঁড়া তো বটেই, রাজ্য-রাজনীতিতেও জল্পনা তৈরি হয়েছে, তন্ময়ের পর কি এ বার কোতুলপুরের হরকালীও কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তদন্তের মুখে পড়তে চলেছে? বিধায়ক অবশ্য জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি সব রকম তদন্তের মুখোমুখি হতে প্রস্তুত।
গত বুধবার তন্ময়ের পরিবারের মালিকানাধীন চালকলে হানা দেয় আয়কর দফতর। একই সঙ্গে তাঁর পরিবারের মালিকানাধীন মদের দোকান, লজ ও বিধায়ক কার্যালয়েও হানা দেন কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্তকারীরা। একটানা ৫৩ ঘণ্টা ধরে তল্লাশি চালানোর পর শুক্রবার বিকেলে তন্ময়ের চালকল ছাড়েন তাঁরা। তার পর থেকে জেলার রাজনৈতিক বৃত্তে আলোচনায় উঠে আসেন হরকালীও। নানা বিধ জল্পনা আরও জলবাতাস পেয়েছে তন্ময়ের চালকলে তল্লাশি চলাকালীন বৃহস্পতিবার জেলায় দলের বিজয়া সম্মিলনীতে গিয়ে শুভেন্দুর করা মন্তব্যে। বিষ্ণুপুরের ওই কর্মসূচিতে গিয়ে বিরোধী দলনেতা হরকালীর উদ্দেশে বলেন, ‘‘হরকালীবাবু আপনি বাঁকুড়ায় দেড় কোটি টাকার বাড়ি করেছেন সবই আমার জানা আছে। হরিবোল বলিয়ে ছেড়ে দেব।’’
গত বিধানসভা নির্বাচনে তন্ময় এবং হরকালী দু’জনেই বিজেপির টিকিটে জিতেছেন। তন্ময় শাসকদলের যোগ দেন ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক পরেই। আর হরকালী তৃণমূলে নাম লেখালেন দিন কয়েক আগে। কোতুলপুরের বিধায়ক অবশ্য এ নিয়ে মোটেই চিন্তিত নন। গুরুত্ব দিতেই নারাজ তিনি। হরকালী বলেন, ‘‘আমি পেশায় শিক্ষক। আমার স্ত্রী সরকারি হাসপাতালের নার্স। আমি ২০১২ সালে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে বাঁকুড়া শহরের প্রণবানন্দ পল্লি এলাকায় একটি দোতালা বাড়ি করেছি। ওই বাড়ি তৈরি করতে সাকুল্যে খরচ হয়েছে ৩০ লক্ষ টাকা।’’ হরকালী দাবি করেছেন, আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন কোনও সম্পত্তি তাঁর নেই। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকেই এ সব বলছেন বিরোধী দলনেতা। বিধায়কের কথায়, ‘‘বিরোধী দলনেতার অঙ্গুলিহেলনে যদি কোনও কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা আমার সম্পত্তি নিয়ে তদন্ত করতে আসে, আমি প্রস্তুত।’’
হরকালীর ‘নতুন দল’ তৃণমূলের বক্তব্য, যে ভাবে বিজেপি ভাঙছে, বাধ্য হয়েই কার্যত ভয় দেখিয়ে দলীয় বিধায়কদের ধরে রাখতে হচ্ছে বিরোধী দলনেতাকে। তৃণমূলের বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তথা বড়জোড়ার বিধায়ক অলোক মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শুভেন্দু অধিকারীর উপর আস্থা হারিয়ে বিজেপি ছেড়ে একে একে বিধায়কেরা বেরিয়ে এসে তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন। বাঁকুড়া জেলায় সেই তালিকাটা যাতে আর দীর্ঘ না হয়, সে জন্য বিরোধী দলনেতা ভয় দেখিয়ে রাখতে চাইছেন। আগে শুভেন্দু অধিকারী নিজে কেন্দ্রীয় এজেন্সির সামনে দাঁড়াক, তার পর আমাদের নিয়ে তদন্ত করতে কেন্দ্রীয় এজেন্সি পাঠাবেন।’’