জঙ্গল ঘিরে জ়িনতকে ধরার চেষ্টা করছেন বনকর্মীরা। —নিজস্ব চিত্র।
রাতভর বাঁকুড়ার জঙ্গলে চলছে বাঘবন্দির খেলা! দু’বার ঘুমপাড়ানি গুলি ছোড়া হয় জ়িনতকে লক্ষ্য করে। লক্ষ্যভেদও হয়। কিন্তু তাতেও কাবু করা যায়নি বাঘিনিকে। সাময়িক ঝিমিয়ে পড়লেও আবার চাঙ্গা হয়ে স্বমেজাজে বনকর্মীদের সঙ্গে লুকোচুরি খেলছে সে! তাকে বাগে আনতে রবিবার সকালে পরিকল্পনা বদল করেছে বন দফতর।
শনিবার সকালে বাঁকুড়ার রানিবাঁধ থানার গোঁসাইডিহি গ্রাম লাগোয়া জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছিল জ়িনত। তার পরই বাঘিনির অবস্থান নিশ্চিত হতেই তৎপর হয় বন দফতর। তাকে কাবু করতে ঘুমপাড়ানি গুলি ছোড়ার বন্দোবস্ত করেন বনকর্মীরা। বন দফতর সূত্রে খবর, জ়িনত নজরে আসতেই শনিবার দুপুর নাগাদ গুলি ছুড়েছিলেন বনকর্মীরা। কিন্তু তাতেও তাকে কাবু করা যায়নি। তার পর পরিকল্পনা পাল্টে জ়িনতকে জঙ্গলের মধ্যে ঘিরে ফেলার চেষ্টা করেন বনকর্মীরা। জঙ্গল ঘিরে আগুন জ্বালিয়ে জ়িনতকে খাঁচাবন্দি করার চেষ্টা হয়। কিন্তু পাতা ফাঁদে পা দেয়নি জ়িনত।
জ়িনতকে ধরতে আনা হয় বুলডোজ়ার। জঙ্গলের ঘেরা অংশে সেই বুলডোজ়ার এবং অন্যান্য গাড়ি নিয়ে বাঘিনির খোঁজ শুরু করেন বনকর্মীরা। বন দফতর সূত্রে খবর, শনিবার রাতে দু’বার জ়িনতকে দেখতে পান বনকর্মীরা। প্রথম বার রাত ১টা নাগাদ, আর দ্বিতীয় বার ভোর ৩টে। দেখামাত্রই ঘুমপাড়ানি গুলি ছোড়া হয়। গুলি তার গায়েও লাগে। গুলি লাগার ফলে ঝিমিয়ে পড়েছিল জ়িনত। তবে তা সাময়িক। কিছু ক্ষণ পরেই ঘুমের ঘোর কাটিয়ে আবার চাঙ্গা হয়ে বনকর্মীদের নাগালের বাইরে চলে যায় সে।
রবিবার সকাল থেকে জ়িনতকে ধরতে পরিকল্পনা পরিবর্তন শুরু করেছে বন দফতর। জঙ্গলের যে এলাকায় জ়িনতকে দেখা গিয়েছে, সেই এলাকা জাল দিয়ে ঘেরা হচ্ছে। আরও ছোট করা হচ্ছে জালের পরিধি। এ ভাবেই জ়িনতকে কোণঠাসা করার চেষ্টা চলছে। বনকর্মীরা নিশ্চিত, রানিবাঁধ ব্লকের পুড্ডি পঞ্চায়েতের বারুনিয়া ও গোসাঁইডিহি গ্রাম সংলগ্ন জঙ্গলের মধ্যেই রয়েছে বাঘিনি।
গত কয়েক দিন ধরে পুরুলিয়ায় বন দফতরকে কার্যত নাকানিচোবানি খাইয়েছিল জ়িনত। শনিবার আস্তানা বদলে সে পৌঁছয় গোঁসাইডিহি গ্রামে। ভোরের দিকে বাঘিনির গর্জন শুনতে পেয়েছিলেন গ্রামবাসীরা। এলাকায় তার পায়ের ছাপও দেখা যায়। তা থেকে গ্রামবাসীরা নিশ্চিত হয়েছিলেন, গ্রাম থেকে মাত্র কয়েকশো মিটার দূরে জঙ্গলে লুকিয়ে রয়েছে সে। জ়িনতের ভয়ে আতঙ্কিত গোঁসাইডিহি। বাঘিনির গলায় থাকা রেডিয়ো কলার সিগন্যাল ট্র্যাক করে সেখানে পৌঁছে যান বনকর্মীরাও। তাঁরা জানতে পারেন, গ্রামের অদূরেই মুকুটমণিপুর জলাধার লাগোয়া ছোট জঙ্গলে রয়েছে জ়িনত। এর পরেই দ্রুত গোটা জঙ্গল ঘিরে ফেলা হয় নাইলন দড়ি দিয়ে। সারা দিন ধরে জ়িনতকে ধরার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন বনকর্মীরা। রবিবার ভোর থেকে নতুন উদ্যমে জ়িনতকে খাঁচাবন্দির চেষ্টা শুরু করেছেন তাঁরা।