মদ খেয়ে বেহুঁশ হয়ে পড়লে ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্রকে গলা কেটে খুন করা হয়। ফাইল চিত্র।
চৌপাহাড়ির জঙ্গলে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া খুনে বেরিয়ে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য। বন্ধুর হাতেই খুন হয়েছেন বীরভূমের খয়রাশোলের পাথর ব্যবসায়ীর পুত্র সৈয়দ সালাউদ্দিন ওরফে জয়। দেনার দায়ে বড়লোক বন্ধুকে খুন করেছেন শেখ সলমনই। প্রাথমিক তদন্তের পর এমনটাই জানালেন বীরভূমের পুলিশ সুপার নগেন্দ্র ত্রিপাঠী।
রবিবার চৌপাহাড়ি জঙ্গল থেকে উদ্ধার হয় ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া সৈয়দ সালাউদ্দিনের দেহ। তাঁর গলার নলি কাটা ছিল। মৃতের বন্ধু সলমনের হাতেও অস্ত্রের কোপের চিহ্ন ছিল।
মৃত জয়ের মা জানান, শনিবার রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ ছেলের মোবাইল থেকে একটি ফোন আসে তাঁদের কাছে। কিন্তু ছেলের গলা শুনতে পাননি তাঁরা। তাঁর কথায়, ‘‘ফোনের ওপার থেকে জিজ্ঞেস করা হয়, ‘আপনি কে? জয়ের বাবা?’ হ্যাঁ বলার পর ও দিক থেকে জানানো হয়, ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছে। মুক্তিপণ চাওয়া হয় ৩০ লক্ষ টাকা। আমরা দিতে রাজি হয়েছিলাম। বলেছিলাম, ছেলের যেন কিছু না হয়। তার পর থানায় ডায়েরি করি।’’ মৃতের বাবা সৈয়দ আব্দুল মতিনও একই কথা জানান। তাঁর দাবি, চক্রান্ত করে খুন করা হয়েছে ছেলেকে।
সাংবাদিক বৈঠকে বীরভূমের পুলিশ সুপার জানান, ৩০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ চেয়ে পাথর ব্যবসায়ী সৈয়দ আব্দুল মতিনকে ফোন করা হয়। টাকা না দিলে তাঁর ছেলেকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। ওই ফোন পাওয়ার পর মল্লারপুর থানায় যান ওই ব্যবসায়ী। ঘটনার তদন্ত শুরু করে পুলিশ। অপহৃতের মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন চিহ্নিত করা হয়। ছাত্রের শেষ টাওয়ার লোকেশন পাওয়া যায় চোপাহাড়ি জঙ্গলে। এর পর পুলিশের তিনটি দল খোঁজ শুরু করে ওই জঙ্গলে। সকালে উদ্ধার হয় ছাত্রের ক্ষতবিক্ষত দেহ।
পুলিশ সুপার জানান, এর পর অভিযুক্ত হিসাবে সলমন নামে এক যুবককে আটক করা হয়। তিনি মৃত ছাত্রের বন্ধু। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গিয়েছে, তিনিই সৈয়দ সালাউদ্দিনকে ডেকে এনেছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদের প্রথম দিকে সলমন জানান, বন্ধুকে অন্য তিন জন ব্যক্তি খুন করেছে। নিজের হাতের চোট দেখান। কিন্তু তাঁর কথায় একাধিক অসঙ্গতি পান তদন্তকারীরা। পরে সলমন স্বীকার করেন তিনিই খুন করেছেন।
অভিযুক্ত পুলিশকে জানান, বাজারে তাঁর অনেক দেনা ছিল। তাই বড়লোক বন্ধুকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের ছক কষেছিলেন। শনিবার রাতে ফোন করে বন্ধুকে ডাকেন। প্রথমে একটি চায়ের দোকানে আড্ডা দেন তাঁরা। সেখানে তাঁদের সঙ্গে আরও কে কে ছিলেন, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে সলমন পুলিশকে জানিয়েছেন, প্রান্তিক এলাকায় একটি দোকানে বসে বিরিয়ানি খান তাঁরা। তার পর একটি মদের দোকান থেকে বিয়ার এবং মদের বোতল কেনেন। সেখান থেকে সোজা চলে যান চৌপাহাড়ির জঙ্গলে।
পুলিশের দাবি, সালাউদ্দিনকে বেশি করে মদ খাওয়ান তাঁর বন্ধু। তিনি বমি করার পর অচৈতন্য হয়ে পড়লে তাঁর মোবাইল ফোন বার করেন সলমন। ফোন করা হয় বন্ধুর বাবাকে। চাওয়া হয় মুক্তিপণ। মৃতের বাবার দাবি, রাত সাড়ে ১২টা থেকে একটা পর্যন্ত মোট সাত বার তাঁকে ফোন করে মুক্তিপণের জন্য তাগাদা দেওয়া হয়।
এই খুনে সলমনের সঙ্গে আরও কে কে জড়িত, তা এখনও জানা যায়নি। তার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। তবে পুলিশ সুপার জানান, খুনের আগে থেকেই ‘তৈরি ছিলেন’ সলমন। একটি চাকু কিনে রেখেছিলেন। সেটা দিয়েই বন্ধুর গলার নলি কাটেন। এর পর ঘটনাকে সাজানোর জন্য বিভিন্ন ভাবে নিজেকে আহত করেন।
পুলিশের দাবি, এখনও বেশ কিছু তথ্য পাওয়া বাকি রয়েছে। তার জন্য তদন্ত চালাচ্ছে তারা। ঘটনার পুনর্নির্মাণের জন্য অভিযুক্তকে ঘটনাস্থলে নিয়ে যাওয়া হবে জানিয়েছে পুলিশ।
এ নিয়ে অভিযুক্ত সলমনের মা পাপিয়া বিবি বলেন, ‘‘সালাউদ্দিন এবং সলমন দু’জনেই খুব ভাল বন্ধু। সলমন এ কাজ করতে পারে না। ও খুব ভাল ছেলে। গতকাল ও বিয়েবাড়ি যাব বলে বেরিয়েছিল। তার পর কোথায় গিয়েছে জানি না। তবে আমার ছেলে খুন করতে পারে না।’’