বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ছবি: আনন্দবাজার আর্কাইভ।
প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শেষযাত্রা হবে শুক্রবার। বৃহস্পতিবার তাঁর দেহ শায়িত রয়েছে পিস ওয়ার্ল্ডে। শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় সেখান থেকে দেহ বার করা হবে। তার পরে শেষযাত্রা শুরু হবে রাজ্য বিধানসভার উদ্দেশে। সকাল ১১টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত বিধানসভায় মরদেহ থাকবে। সেখান থেকে বেলা ১২টা নাগাদ দেহ নিয়ে যাওয়া হবে সিপিএমের রাজ্য দফতর আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে। সেখানেই মরদেহ শায়িত থাকবে বিকাল ৩টে পর্যন্ত।
সেখান থেকে প্রয়াত বুদ্ধদেবের দেহ নিয়ে যাওয়া হবে দীনেশ মজুমদার ভবনে। সিপিএমের ছাত্র ও যুব সংগঠনের রাজ্য দফতরে। বুদ্ধদেব ছিলেন প্রাদেশিক যুব সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। সভাপতি ছিলেন তাঁর বন্ধু এবং কমরেড দীনেশ মজুমদার। তাঁর নামেই ওই ভবনটি নামাঙ্কিত। পৌনে ৪টে পর্যন্ত বুদ্ধদেবের দেহ শায়িত থাকবে সেখানে। সেখান থেকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের পরে মিছিল করে দেহ নিয়ে যাওয়া হবে শিয়ালদহের এনআরএস হাসপাতালে। সেখানেই বুদ্ধদেবের দেহ দান করা হবে ভবিষ্যতের চিকিৎসার গবেষণার কাজে। প্রসঙ্গত, বুদ্ধদেবের পূর্বসূরি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর দেহও দান করা হয়েছিল। ২০১০ সালের জানুয়ারিতে সেই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছিল এসএসকেএম হাসপাতালে।
পিস ওয়ার্ল্ডে যাওয়ার আগে বৃহস্পতিবারই বুদ্ধদেবের মরদেহের চক্ষু থেকে কর্নিয়া সংগ্রহের প্রক্রিয়া সমাপ্ত হয়েছে পরিকল্পনা মতো। প্রাথমিক ভাবে সিপিএম নেতৃত্ব যে শেষযাত্রার সূচি নির্ধারিত করেছিলেন, তাতে বিধানসভার উল্লেখ ছিল না। পরে বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বুদ্ধদেবের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও পাম অ্যাভিনিউয়ে পৌঁছেছিলেন। তার পরেই সিপিএম নেতৃত্ব স্থির করেন, বিধানসভায় নিয়ে যাওয়া হবে বুদ্ধদেবের দেহ। উল্লেখ্য, জ্যোতিবাবুর দেহও বিধানসভায় শায়িত রাখা হয়েছিল। বুদ্ধদেবকে সেখানে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ পাবেন বিধায়কেরা। সেই সুযোগ পাবেন বিধানসভার কর্মীরাও। শাসকদল এবং বিরোধীদল বিজেপির বিধায়কেরা শ্রদ্ধা জানাবেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে। প্রাক্তন সিপিএম এবং অধুনা বিজেপির দুই বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ, বঙ্কিম ঘোষও উপস্থিত থাকবেন। শঙ্কর ছিলেন শিলিগুড়ির সিপিএম নেতা। যুব আন্দোলনের নেতা থাকার সময়ে শঙ্করকে স্নেহও করতেন বুদ্ধদেব। আর বঙ্কিম সপ্তম বামফ্রন্ট সরকারের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন।
শুক্রবার সকালেই সিপিএমের সর্বভারতীয় নেতারা কলকাতায় পৌঁছবেন। প্রকাশ কারাট, বৃন্দা কারাট, এমএ বেবিরা আসবেন দিল্লি থেকে। আগরতলা থেকে কলকাতায় পৌঁছবেন ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার। অন্য পলিটব্যুরোর সদস্যদের মধ্যে তপন সেন এবং নীলোৎপল বসু এখন কলকাতাতেই রয়েছেন। তবে সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি শুক্রবার কলকাতায় আসছেন না। সিপিএম সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবারই সীতারামের চোখে ছানির অস্ত্রোপচার হয়েছে। তিনি নিজে কলকাতায় আসার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু মহম্মদ সেলিমেরা তাঁকে সেই ঝুঁকি নিতে বারণ করেছেন। রাজ্য সিপিএমের তরফে সীতারামকে বলা হয়েছে, চলতি মাসেই বুদ্ধদেবের স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে সীতারামকে আসতে হবে। তাই ঝুঁকি নিয়ে শুক্রবার তাঁর না আসাই ভাল।