Jiban Krishna Saha’s Property

জীবনের নামে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি! খতিয়ে দেখা হচ্ছে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, দাবি সিবিআই সূত্রে

সিবিআইয়ের দাবি, জীবনকৃষ্ণ নিয়োগ দুর্নীতির এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। তাঁর মাধ্যমে নিয়োগ দুর্নীতির বহু টাকার লেনদেন হত বলেও অনুমান করছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তদন্তকারীরা।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০২৩ ১২:২০
Property worth crores of rupees found in name of Arrested TMC MLA Jiban Krishna Saha, says CBI source.

মুর্শিদাবাদের পাশাপাশি অন্য জেলায় তৃণমূল বিধায়কের নামে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট রয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ফাইল চিত্র ।

এ বার কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির হদিস মিলল তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহার নামে। এমনটাই খবর সিবিআই সূত্রে। সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সদ্য গ্রেফতার হওয়া তৃণমূল বিধায়কের মোট সম্পত্তির পরিমাণ নাকি বহু কোটি টাকা! পাশাপাশি বেনামে একাধিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে বলেও সিবিআই সূত্রে খবর। খোঁজ মিলেছে তাঁর স্ত্রীর নামে থাকা অ্যাকাউন্টেরও। সেই অ্যাকাউন্টগুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও সিবিআই সূত্রে খবর। সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, মুর্শিদাবাদের পাশাপাশি অন্য জেলায় তৃণমূল বিধায়কের নামে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট রয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

বিভিন্ন সূত্রে দাবি করা হয়েছে, সাঁইথিয়ায় একটি চালকল, দু’টি হিমঘর, একটি বাড়ি ছাড়াও সাঁইথিয়া থানার অন্তর্গত লাউটরি মৌজায় প্রায় ২০-২২ কাঠা জমি রয়েছে জীবনকৃষ্ণের। এ ছাড়াও সরকারি তথ্য অনুযায়ী, সাঁইথিয়া পুরসভা এলাকায় একাধিক জায়গায় তাঁর জমি রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। সেই জমির আনুমানিক বাজারমূল্যই নাকি প্রায় চার-পাঁচ কোটি টাকা। শুধু সাঁইথিয়াতেই নয়, বোলপুরের তাতারপুর, বাঁধগোড়া, তালতোড় মৌজা মিলিয়ে তাঁর প্রায় ২১৫.৪৭ শতক অর্থাৎ ১৩০ কাঠার বেশি জমি রয়েছে। স্থানীয় সূত্রের দাবি, এই জমির আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ৬ কোটির উপর। সরকারি নথি অনুযায়ী, জীবনের নামে এই সমস্ত জমি রেকর্ড হয়েছে ২০১৩-২০২২ সালের মধ্যে। জীবনকৃষ্ণের স্ত্রী টগরের নামেও আন্দি বাজার এলাকায় জমি এবং বাড়ি আছে। যার বর্তমান মূল্য প্রায় দু’কোটি টাকা।

Advertisement

অনেকের দাবি, বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে বিশেষ দহরম মহরম ছিল জীবনকৃষ্ণের। আর সেই সূত্রেই তাঁর যাবতীয় ‘লক্ষ্মীলাভ’। ২০১২-১৩ সাল থেকে কৃষ্ণ-কেষ্ট আঁতাঁত তৈরি হয় বলেও অনেকে দাবি করছেন। সেই সূত্রে জীবনকৃষ্ণ বীরভূমের ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা শুরু হয়েছে।

সিবিআই সূত্রে এ-ও জানা গিয়েছে, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার অনুমান ২০১৪ সালে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় চাকরি বিক্রির এজেন্ট হিসাবে কাজ করতেন জীবনকৃষ্ণ। চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি টাকা তুলতে শুরু করেন বলেও অভিযোগ। সেই সময়ে চাকরি বিক্রি করে তিনি অনেক টাকা কামিয়েছিলেন বলেও সিবিআই সূত্রে খবর।

প্রসঙ্গত, সোমবার ভোর সওয়া ৫টা নাগাদ তৃণমূল বিধায়ককে তাঁর বড়ঞার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে সিবিআই। নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে তদন্তে অসহযোগিতা এবং তথ্যপ্রমাণ লোপাট করার চেষ্টা, মূলত এই দুই অভিযোগে প্রাথমিক ভাবে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে সিবিআই সূত্রে খবর।

শুক্রবার বেলা সাড়ে ১২টা থেকে জীবনকৃষ্ণকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার একটি দল। তল্লাশি চালানো হয় তাঁর অফিস-সহ একাধিক জায়গায়। সিবিআই সূত্রে খবর, সেই তল্লাশি চলাকালীন তৃণমূল বিধায়কের বাড়ি থেকে তাঁর সুপারিশে হওয়া চাকরিপ্রার্থীদের নথির পাশাপাশি এসএলএসটির গোটা নিয়োগ প্রক্রিয়ার ডেটাবেসই পাওয়া গিয়েছে। সব মিলিয়ে উদ্ধার হয়েছে প্রায় দু’বস্তা নথি। সিবিআইয়ের একটি সূত্র দাবি করছে, তৃণমূল বিধায়কের বাড়ি থেকে প্রায় ৩,৪০০ প্রার্থীর তথ্য উদ্ধার হয়েছে। যার মধ্যে নাকি রয়েছে নবম এবং দশম শ্রেণির চাকরিপ্রার্থীদের নাম এবং রোল নম্বর সমেত বহু নথি। সিবিআইয়ের সূত্রে খবর, বাড়ির একটি ঘরকেই নিয়োগ দুর্নীতির আস্তানা বানিয়ে রেখেছিলেন জীবনকৃষ্ণ।

সিবিআই সূত্রে দাবি, তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় শুক্রবার বিকেলের দিকে অসুস্থতার কথা বলে শৌচালয়ে যাওয়ার নাম করে গিয়ে নিজের দু’টি মোবাইল বাড়ির পিছনের পুকুরে ছুড়ে ফেলে দেন তিনি। ছোড়েন দু’টি পেনড্রাইভ এবং একটি হার্ডডিস্কও। সেগুলিরও খোঁজ চালানো হচ্ছিল। তবে অনেক চেষ্টার পর সেই মোবাইল দু’টি উদ্ধার করা হয়েছে। একটি মোবাইল পুকুর থেকে উদ্ধার করা হলেও অপরটি পুকুরপাড়ের একটি গাছের নীচ থেকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকেরা।

সিবিআইয়ের দাবি, জীবনকৃষ্ণ নিয়োগ দুর্নীতির এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। তাঁর মাধ্যমে নিয়োগ দুর্নীতির বহু টাকার লেনদেন হত বলেও অনুমান করছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তদন্তকারীরা।

আরও পড়ুন
Advertisement