Narendra Modi & Mamata Banerjee

ব্রিগেডে মোদীর গীতাপাঠের দিনেই টেট! ‘রাজনীতি’ বলছে বিজেপি, মন্তব্যে নারাজ উদ্যোক্তারা

বড়দিনের আগেই বড়দিন করতে চায় রাজ্যের গেরুয়া শিবির। ২৪ ডিসেম্বর ব্রিগেডে লক্ষ কণ্ঠে গীতাপাঠের কর্মসূচি সেই কারণেই। লোকসভা নির্বাচনের আগে সেই অনুষ্ঠানে থাকার কথা প্রধানমন্ত্রীরও।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩ ২০:৪৭
Primary TET exam will be held on the same date when Narendra Modi will present on Brigade

নরেন্দ্র মোদী-মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

ব্রিগেডে আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আগামী ২৪ ডিসেম্বর ‘লক্ষ কণ্ঠে গীতাপাঠ’ কর্মসূচিতে তিনি যোগ দেবেন বলেই আগেই জানিয়ে দিয়েছেন কর্মসূচির আয়োজকরা। বিভিন্ন হিন্দু ধর্মীয় সংগঠনের যৌথ প্রয়াসে হলেও এই কর্মসূচির নেপথ্যে রয়েছে রাজ্য বিজেপি। ঘটনাচক্রে, এ বার রাজ্য জুড়ে টেট হবে ওই দিনই। সোমবারই সেই ঘোষণা করা হয়েছে।

Advertisement

প্রধানমন্ত্রী শহরে এলে মধ্য কলকাতা এলাকায় যান নিয়ন্ত্রণ হবে। কিন্তু তার চেয়েও বড় কথা— ব্রিগেডে এক লক্ষ লোকের জমায়েত করতে গেলে কলকাতা শহর এবং লাগোয়া এলাকার রেল এবং যান চলাচলে তার প্রভাব পড়বে। ২৪ ডিসেম্বর রবিবার হওয়ায় নিত্যযাত্রীদের ভিড় থাকবে না ঠিকই। কিন্তু ওইদিন টেটের পরিবর্তিত সূচি (প্রথমে ওই পরীক্ষার দিন ছিল ১০ ডিসেম্বর) অনুযায়ী ওই দিন পরীক্ষার্থীরা বিভিন্ন পরীক্ষাকেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে যাবেন। ব্রিগেডমুখী জনতার চাপ তাঁদের যাতায়াতে প্রভাব ফেলতে পারে। তবে উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, টেট থাকলেও তাঁদের পক্ষে গীতাপাঠের অনুষ্ঠানের দিন বদল করা সম্ভব হবে না। বিজেপির একাংশ মনে করছে, ওই দিন পরীক্ষা থাকায় অনেকেই ইচ্ছা থাকলেও গীতাপাঠে যোগ দিতে পারবেন না।

সোমবার প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ জানিয়েছে, ১০ ডিসেম্বরের পরিবর্তে পরীক্ষা হবে ২৪ ডিসেম্বর। দিন পরিবর্তনের কোনও কারণ আনুষ্ঠানিক ভাবে জানানো হয়নি। বিজেপি শিবির মনে করছে, ‘রাজনীতি’ করার জন্যই পর্ষদ এ ভাবে পরীক্ষার দিন বদল করল। গীতাপাঠের অনুষ্ঠানে ‘ব্যাঘাত’ ঘটাতেই পরীক্ষার দিন বদলের সিদ্ধান্ত বলেও দাবি করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত বছর প্রায় সাড়ে ছ’লক্ষ পরীক্ষার্থী টেট দিয়েছিলেন। তাতে বিএড পাশ পরীক্ষার্থীরাও অংশ নিতে পেরেছিলেন। কিন্তু এ বছর আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী শুধু মাত্র বিএলএড উত্তীর্ণেরাই পরীক্ষায় বসতে পারবেন। ফলে পরীক্ষার্থী অনেক কম। পর্ষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বার পরীক্ষার্থীর সংখ্যাটা ৩ লাখ ১০ হাজারের কাছাকাছি। ওই দিন জেলার পরীক্ষার্থীরা জেলাতেই পরীক্ষা দেবেন। তার জন্য কলকাতায় ব্রিগেডে গীতাপাঠেরে সমাবেশে আদৌ কোনও অসুবিধা হবে কি? জবাবে বিজেপি নেতা তথা মেদিনীপুরের সাংসদ দিলীপ ঘোষ সোমবার বলেন, ‘‘অসুবিধা তো হবেই! গীতাপাঠের কর্মসূচি তো শুধু বিজেপির নয়। রাজ্যের সনাতন ধর্মের মানুষের। পরীক্ষার দিন হওয়ায় অনেকেই গীতাপাঠে যোগ দিতে পারবেন না।’’ মোদীর গীতাপাঠের অনুষ্ঠানের জন্য ইতিমধ্যেই দেওয়াল লিখন এবং প্রচার শুরু করেছেন দিলীপ। তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘এ রাজ্যের শাসকদল এবং মুখ্যমন্ত্রী যে সনাতন বিরোধী, তা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। উনি নিজেই তাঁর নানা কাজকর্ম দিয়ে সেটা বুঝিয়ে দেন। পরীক্ষা পিছিয়ে একটি সনাতন কর্মসূচির দিনে ফেলা সেই মনোভাবেরই পরিচয়।’’

আয়োজকেরা প্রথমে জানিয়েছিলেন, ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। সঙ্গে অতিথি হিসাবে আমন্ত্রণ জানানো হবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। এর পরে জানা যায়, রাষ্ট্রপতির পরিবর্তে ওই অনুষ্ঠানে হাজির থাকবেন প্রধানমন্ত্রী। গত ১৭ নভেম্বর বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের নেতৃত্বে সাধুসন্তেরা মোদীকে গীতাপাঠের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়ে আসেন। মোদী ওই অনুষ্ঠানে আসার বিষয়ে সম্মতি দিয়েছেন বলেই উদ্যোক্তাদের তরফে দাবি করা হয়েছে। আয়োজকদের তরফে আরও জানানো হয়েছে, ওই অনুষ্ঠানে রাজ্যের সব সাংসদ, বিধায়ক এবং মুখ্যমন্ত্রীকেও আমন্ত্রণ জানানো হবে।

অন্যদিকে, তৃণমূল সূত্রের খবর, সোমবার মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, কলকাতায় গীতাপাঠের অনুষ্ঠানে তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বলে তিনি শুনেছেন। কিন্তু কারা ওই অনুষ্ঠান করছে, সে বিষয়ে তিনি খোঁজ নেবেন।

তবে বিজেপি পরিষদীয় দল দাবি করে, এখনও পর্যন্ত ওই অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। ওই কর্মসূচি যে সংগঠনের নামে হচ্ছে, সেই ‘অখিল ভারতীয় সংস্কৃত পরিষদ’-এর সভাপতি তথা ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের সন্ন্যাসী স্বামী প্রদীপ্তানন্দ বলেন, ‘‘আমরা এখনও মুখ্যমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানাতে পারিনি। ওঁর সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য সময়ে চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এখনও পর্যন্ত কোনও জবাব আসেনি বলেই জানি।’’ তবে ব্রিগেডে তাঁদের অনুষ্ঠানের দিনেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষার দিন হওয়া নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি তিনি। সংগঠনের সহ-সভাপতি রিষড়া প্রেম মন্দিরের সন্ন্যাসী নির্গুণানন্দ ব্রহ্মচারী বলেন, ‘‘আমরা সবে এটা জানলাম। এর ফলে কোনও প্রশাসনিক সমস্যা হবে কি না জানি না। আমরা আলোচনা করব। তবে অনেক আগে থেকে আমাদের কর্মসূচি ঠিক হয়ে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী যে আসবেন, সেটাও চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। ফলে আমাদের পক্ষে দিন বদল করা সম্ভব নয়।’’

আরও পড়ুন
Advertisement