পদ্মার ইলিশ —ফাইল চিত্র।
পুজো উপলক্ষে হাওড়ার পাইকারি মাছ বাজারে অবশেষে এল বাংলাদেশের ইলিশ। শুক্রবার মোট ৫০ মেট্রিক টন ইলিশ এসেছে বাজারে। কিন্তু প্রথম দিনে পাইকারি বাজারেই যে দামে বিক্রি হল পদ্মার ইলিশ, তাতে তা মধ্যবিত্ত বাঙালির পাতে কতটা পৌঁছবে, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পেট্রাপোল সীমান্ত পেরিয়ে ট্রাকভর্তি পদ্মার ইলিশ ঢুকেছে বাংলায়। সেই ইলিশই এল হাওড়ার আড়তে। তক্কে তক্কে ছিলেন খুচরো বিক্রেতারাও। ইলিশের গন্ধে শুক্রবার চোখে পড়ার মতো ভি়ড় ছিল পাইকারি বাজারে। রাজ্যের ইলিশ আমদানিকারী সংস্থা ‘ফিশ ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক সৈয়দ আনোয়ার মকসুদ বলেন, ‘‘পেট্রোপোল সীমান্ত দিয়ে মোট ৭০ মেট্রিক টন ইলিশ ঢুকেছে। তার মধ্যে ৫০ টন ঢুকেছে হাওড়ায়।’’ পাইকারি বাজারের আড়তদারেরা জানান, বড়, মাঝারি বিভিন্ন আকারের ইলিশের বিভিন্ন দাম রয়েছে। নিলামে যে দাম উঠছে, তাতেই বিক্রি করা হচ্ছে। ৮০০ গ্রামের ইলিশ বিক্রি হল এক হাজার থেকে বারোশো টাকায়। আর একটু বড় মাপের ইলিশের দাম উঠল ১৫০০-১৭০০ টাকা। এই ইলিশই শুক্রবার থেকে কলকাতা এবং পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন বাজারে পৌঁছে যাবে। পাইকারি ব্যবসায়ী মহম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘এ বছর দেরিতে ইলিশ এল বাংলাদেশ থেকে। দামও চড়া। তা ছাড়া যে পরিমাণে মাছ পাঠানোর কথা রয়েছে, ততটা তো পাওয়া যাবে না।’’
বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ৩০ অক্টোবরের মধ্যে ৩৯৫০ মেট্রিক টন ইলিশ আসবে এ দেশে। মোট ৭৯ জন ইলিশ কারবারিকে ৫০ টন করে ইলিশ পাঠানোর ছাড়পত্র দিয়েছে ঢাকা। সাকুল্যে যে ৪০ দিনের মেয়াদে রাজ্যে পদ্মার ইলিশ ঢোকার ছাড়পত্র হাতে এসেছে, তার মধ্যেও বিস্তর ফাঁক রয়েছে। খাতায়-কলমে ইলিশ আমদানির মেয়াদ ৩০ অক্টোবর হলেও বাস্তবে সেই মেয়াদ ১১ অক্টোবরেই ফুরিয়ে যাচ্ছে বলে দেখা যাচ্ছে। ইলিশ আমদানিকারীরা জানতে পেরেছেন, ১২ অক্টোবর থেকে বাংলাদেশে ২২ দিনের জন্য ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে।
বাংলাদেশের বাজারে ইলিশের দাম সাধ্যের মধ্যে রাখতে রফতানিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে বহু বছর ধরেই। গত কয়েক বছর পুজোর আগে পশ্চিমবঙ্গের ইলিশপ্রেমীদের মনে রেখে রফতানিতে ছাড় দিয়েছে শেখ হাসিনা সরকার। এ বারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। কিন্তু এ বার এ পারের বাঙালির কপাল খারাপ। বাংলাদেশে বছরের কিছু সময় ইলিশের ডিম পাড়ার মরসুম হিসাবে ইলিশ ধরা বন্ধ থাকে। ওই সময়টা এ বার ঢাকার ইলিশ উপহারের মরসুমের মধ্যেই পড়ছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, ১৪ অক্টোবর মহালয়ার আগেই পদ্মার ইলিশ ঢোকা বন্ধ হয়ে যাবে। এই পরিস্থিতিতে পুজোর দিনগুলিও ইলিশের পদ নিয়ে খুব একটা নিশ্চিত থাকা হবে না আমবাঙালির।
গত বারের থেকে বাংলাদেশে এ বার ইলিশের উৎপাদন অনেকটাই কম হয়েছে। সাগরে প্রচুর ইলিশ মিললেও নদীতে ঝাঁকের দেখা সে ভাবে মেলেনি। সাগরের ইলিশ নদীর মিষ্টি জলে দিন কয়েক সাঁতরানোর পরে তাদের শরীরের নুন কাটে, পেটে জমে তেল। তাতেই বাড়ে স্বাদ-গন্ধ। কিন্তু এ বার নদীতে মাছ না-মেলায় বাংলাদেশের বাজারেও বেশি দামেই বিকিয়েছে ইলিশ। তাই শুরু থেকেই পদ্মার ইলিশের দাম নিয়ে এ পারের বিক্রেতারা তো বটেই, সাধারণ বাঙালির মনেও আশঙ্কা ছিল। চাহিদা তো রয়েছে, কিন্তু এই চড়া দামের পদ্মার ইলিশ কিনতে সাহস পাচ্ছেন না খুচরো বিক্রেতারাও। কলকাতার এক খুচরো বিক্রেতার কথায়, ‘‘এত দাম দিয়ে ইলিশ কিনে নিয়ে যাব, তার পর যদি বিক্রি করতে না পারি। তখন কী হবে! তাই একটু বুঝেশুনে মাছ কিনতে হবে। সকলেই তা-ই করছি।’’