Bikash Bhattacharya

পারিশ্রমিক নিয়ে ‘ভগবান’ বিকাশের কুৎসা করা হচ্ছে, চাকরিপ্রার্থীদের আর একটি অংশের দাবি, বিতর্ক তুঙ্গে

দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়ছেন বলেই বিকাশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার, অভিযোগ এসএসসি গ্রুপ-সি, গ্রুপ-ডি চাকরপ্রার্থীদের। এসএলএসটি চাকরিপ্রার্থীদের পাল্টা দাবি, টাকা যে নিয়েছেন তা তদন্ত হলেই বেরোবে।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৪:৪২
Other group of Job Seekers stood by Bikash Bhattacharya amid money taking allegations

সিপিএম সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। —ফাইল চিত্র।

আইনজীবী তথা সিপিএম সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের ‘পারিশ্রমিক গ্রহণ এবং নৈতিকতা’ বিতর্কে এ বার তাঁর পাশে দাঁড়ালেন চাকরিপ্রার্থীদের অন্য একটি অংশ। শনিবার এসএলএসটি (নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি)-র কর্মশিক্ষা, শারীরশিক্ষার চাকরিপ্রার্থীরা দাবি করেন, তাঁদের মামলার জন্য সব মিলিয়ে ২৭ লক্ষ টাকা বিকাশকে দেওয়া হয়েছিল তাঁরই জুনিয়রের মাধ্যমে। একই সঙ্গে অভিযোগ, পরবর্তীতে তাঁদেরই চাকরি আটকাতে মামলা করেছেন বিকাশ। এই বিতর্কে বিকাশের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁকে ভগবানের সঙ্গে তুলনা করলেন এসএসসির গ্রুপ-সি, গ্রুপ-ডি চাকরিপ্রার্থীরা। বিকাশের বিরুদ্ধে কুৎসা করার অভিযোগ তুলে তাঁদের পাল্টা দাবি, মামলা লড়তে তিনি এক পয়সাও নেননি।

Advertisement

গ্রুপ-সি, গ্রুপ-ডি প্রার্থীদের তরফে রবিবার সকাল থেকে বিকাশের সমর্থনে একাধিক ফেসবুক পোস্ট দেখা যায়। তাঁদের বক্তব্য, দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিকাশ লড়াই করছেন। তাই তাঁর বিরুদ্ধে অপপ্রচারও চলছে। ওই চাকরিপ্রার্থীদের প্রতিনিধি অষ্টপদ সাসমল বলেন, ‘‘বিকাশবাবু টাকা নিয়েছেন, এটা ভুলভাল কথা। যাঁরা বলছেন, তাঁদের নিশ্চয় কেউ উস্কেছেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিকাশবাবু লড়ছেন। আমাদের কাছ থেকে উনি এক টাকাও নেননি। আমরা কোনও টাকা দিইনি। বরং উনি ছিলেন বলেই এত বড় দুর্নীতি প্রকাশ্যে এসেছে।’’

অষ্টপদ আরও বলেন, ‘‘আমাদের মতো গরিব ছেলেমেয়েদের পক্ষে এই মামলা লড়ার ক্ষমতাই ছিল না। কামানের সামনে মশার সমান ছিলাম আমরা। বিকাশবাবু না-থাকলে আমরা টিকতে পারতাম না। মামলা ফাইল করার সময়ে আমরা যৎসামান্য কিছু টাকা দিয়েছি বটে, তবে তা না-দিলেই নয়।’’ ওই চাকরিপ্রার্থীদের বক্তব্য, ‘‘এত বড় দুর্নীতির বিরুদ্ধে উনি লড়ছেন। অপপ্রচার, কুৎসা তো হবেই। ওঁকে সরানোর চেষ্টা চলছে। এতে আখেরে অযোগ্য প্রার্থীদের লাভ হবে। সরকারপক্ষের ইন্ধনেই এটা হচ্ছে।’’

অষ্টপদর এই বক্তব্য উড়িয়ে দিয়েছেন এসএলএসটি চাকরিপ্রার্থীদের প্রতিনিধি রাজু দাস। তিনি বলেন, ‘‘আমরা যে টাকা দিয়েছি, তদন্ত করলেই তা প্রমাণ হয়ে যাবে। বিকাশবাবুর জুনিয়রকে টাকা দিয়েছি। গ্রুপ-সি, গ্রুপ-ডি প্রার্থীদের কাছ থেকেও টাকা নেওয়া হয়েছে। সেই প্রমাণও আমরা দেখাতে পারি। লাখ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। টাকা নেওয়ার লিখিত কোনও প্রমাণ ওঁরা দেন না। তবে তদন্ত করলে সহজেই প্রমাণিত হবে। ওরা মিথ্যা বলছে। গ্রুপ-সি, গ্রুপ-ডি মঞ্চের পক্ষ থেকেও চাঁদা তোলা হয়েছে। কিসের জন্য সেই চাঁদা তুলেছে?’’

রাজুদের দাবি, বিকাশের জুনিয়র দিব্যেন্দু চট্টোপাধ্যায়কে তাঁরা খেপে খেপে মোট ২৭ লক্ষ টাকা দিয়েছেন। শারীরশিক্ষার প্রতি শুনানিতে এক লক্ষ ২০ হাজার টাকা এবং কর্মশিক্ষার প্রতি শুনানিতে ৭০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছিল।

বিকাশের টাকা নেওয়ার মধ্যে অবশ্য কোনও অন্যায় দেখছেন না এসএলএসটি চাকরিপ্রার্থীরা। তাঁদের আপত্তি অন্য জায়গায়। শনিবার রাজু দাস বলেছিলেন, ‘‘বিকাশবাবুর জুনিয়রকে আমরা টাকা দিয়েছি। উনি (বিকাশ) পারিশ্রমিক হিসাবে টাকা নিয়েছেন, ঠিক আছে। কিন্তু এখন কেন চাকরি আটকাচ্ছেন? এটা তো সাপ ও ব্যাঙের গালে চুমু খাওয়া হয়ে যাচ্ছে। কোনও নৈতিকতা নেই? একবার আমাদের পক্ষে লড়লেন, এখন বিরুদ্ধে লড়ছেন?’’

শনিবার এই অভিযোগ ওঠার পরই বিকাশ বলেন, ‘‘সবাই জানে মক্কেলদের সঙ্গে আমার সরাসরি কথা হয়ও না, আমি সরাসরি টাকা নিইও না, নিতেও পারি না। মুশকিল হচ্ছে, জুনিয়রের মাধ্যমে তাঁরা এসেছেন, তাঁকে তাঁরা টাকা দিয়েছেন কি দেননি, তা তো আমি বলতে পারব না। আমাকে সরাসরি টাকা দিয়েছেন বলে তো তাঁরা বলতে পারছেন না, তা হলে আমার নাম জড়াচ্ছেন কেন? এটা তো পরিকল্পিত।’’ রাজ্যসভায় সিপিএম সাংসদের আরও বক্তব্য, ‘‘কে কাকে কত টাকা দিয়েছেন মামলার জন্য, তার জবাবদিহি আমি করব না। জবাবদিহি করবেন যিনি টাকা নিয়েছেন। মামলা তো আর বিনা পয়সায় হয় না। যে জুনিয়রকে টাকা দিয়েছেন ওঁরা নিশ্চয়ই দেখিয়েছেন যে কত টাকা লাগতে পারে!’’

বিকাশ এই গোটা অধ্যায়ে রাজনৈতিক অভিসন্ধি দেখছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘এঁদের তো দল বেঁধে আমার বাড়িতে পাঠিয়েছিল তৃণমূল। বাড়ি ঘেরাওয়ের চেষ্টা করেছিল। একই দলকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বাড়িতে। ওরা চাইছে সমস্ত প্রক্রিয়াটাকে দুর্নীতির মধ্যে দিয়ে কার্যকরী করা হোক। সেটাই শিখিয়ে পাঠানো হয়েছিল।’’

টাকা নেওয়া প্রসঙ্গে বিকাশের জুনিয়র দিব্যেন্দু আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘শুনানিতে স্যার এবং আমরা থাকলে যে ফিজ় হয়, তা-ই নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেটা যে ২৭ লক্ষ টাকা কি না সেটা আমি বলতে পারব না। আমরা এককালীন কোনও টাকা নিই না।’’

Advertisement
আরও পড়ুন