চা শ্রমিক। - প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
পাহাড়ে চার শতাংশ বোনাস বৃদ্ধিই শুধু নয়, ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ থেকে চা শ্রমিকদের বকেয়া নিয়ে কাল, বুধবার ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে আলোচনার প্রস্তুতি নিচ্ছে চা শ্রমিক সংগঠনগুলি। কলকাতায় পাহাড়ের চা বোনাস সংক্রান্ত ওই বৈঠকে রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক থাকতে পারেন বলে খবর। সেখানেই পাহাড়ের বাগানগুলির পরিস্থিতির সার্বিক একটি রিপোর্ট সংগঠনগুলির তরফে রাখা হবে। তাদের দাবি, বোনাস বৃদ্ধি, ন্যূনতম মজুরির বাইরে বকেয়া পিএফ, গ্র্যাচুইটি প্রসঙ্গ তোলা হবে। যার পরিমাণ পাহাড়ে ৫০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে।
চা শ্রমিকদের যৌথ মঞ্চের অন্যতম নেতা তথা প্রাক্তন সাংসদ সমন পাঠক সোমবার বলেন, ‘‘পাহাড়ের বন্ধ বাগান খোলার দাবি থেকে বকেয়া, বোনাস বৃদ্ধির মতো যাবতীয় বিষয় নিয়ে আলোচনার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সরকারের মনোভাব দেখে বাকিটা ঠিক হবে।’’
এ বারে পুজোর আগে পাহাড়ে বোনাস নিয়ে পর পর ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ভেস্তে যাওয়ায় সরকারের তরফে নর্থ জ়োনের অতিরিক্ত শ্রম কমিশনার ১৬ শতাংশ বোনাসের নির্দেশিকা জারি করেন। এতে শ্রমিক অসন্তোষ শুরু হয়। পাহাড়ে বহু বছর পরে ১২ ঘণ্টার বন্ধ হয়। শ্রমিক সংগঠনগুলি একযোগে জমায়েত করে বোনাস চুক্তি পুড়িয়ে দেয়। একের পর এক অবরোধ হয়। শেষে, শ্রম দফতর ৬ নভেম্বর আবার বৈঠক ডাকার ঘোষণা করা হয়। এরই মধ্যে নতুন করে পর পর বাগান বন্ধও উদ্বেগ বাড়িয়েছে।
শ্রম দফতরের অফিসারেরা জানান, পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে পাহাড়ের চা বাগানের ইতিহাসে প্রথমবার ১৬ শতাংশ হারে সরকারি নির্দেশিকা দিয়ে বোনাস ঘোষণা করেও নতুন করে আলোচনা আবার শুরু হতে চলছে। যদিও দার্জিলিং পাহাড়ের চা বাগানগুলির পরিস্থিতি দেখিয়ে মালিকপক্ষ কতটা নমনীয় হবে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
যদিও চা শ্রমিক সংগঠনগুলির বক্তব্য, তরাই এবং ডুয়ার্সে চা পাতা ৩০০ টাকার মধ্যে কেজি দরে বিক্রি হয়। সেখানে দার্জিলিঙের চা পাতা ৪০-৫০ হাজার টাকা কেজি দরেও বিক্রি হয়। দেশে দার্জিলিং চা রেকর্ডও গড়ে। তাই সমতলের সঙ্গে তাই পাহা়ড়ের মালিকদের লাভ-লোকসানের বিষয়টি গুলিয়ে ফেললে চলবে না। বরাবর পাহাড়ের বাগানে পাতার দাম অনেকটাই বেশি থাকে। তাই সেখানে বোনাসের হিসাবও আলাদা হওয়াটাই স্বাভাবিক বলে শ্রমিক নেতারা জানিয়েছেন।
শ্রমিক নেতারা জানান, প্ল্যান্টেশন আইন অনুসারে অনেক সুযোগ সুবিধা মেলে না। ২০১৪ সালে ন্যূনতম মজুরি নিয়ে আলোচনা শুরু হলেও আজও রাজ্যে তা হয়নি। ২০২৩ সালের পর অন্তর্বর্তীকালীন মজুরি বৃদ্ধি হয়নি। কোটি কোটি টাকা পিএফ, গ্র্যাচুইটি বাকি পড়েছে। সবই এ বার ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে তোলা হবে।
পাহাড়ে ৮৭টি চা বাগানের মধ্যে ১১টি বাগান বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। একটি খুলেছে। লংভিউ চা বাগান খোলার ঘোষণার পরেও নতুন করে অচলাবস্থা শুরু হয়েছে।