— প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
ট্যাব দুর্নীতির ছায়া এ বার দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায়। এ বার ট্যাব কেনার সরকারি অনুদান পেল না জেলার ছ’জন পড়ুয়া। বদলে সেই টাকা চলে গেল চোপড়ার বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে! একই স্কুলের ছয় পড়ুয়ার ট্যাবের টাকা অন্য অ্যাকাউন্টে চলে যাওয়ায় শোরগোল পড়ে গিয়েছে দক্ষিণ দিনাজপুরের তপন ব্লকে।
ঘটনাটি ঘটেছে আরসিএ মাগুরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে। অভিযোগ, ওই স্কুলে ‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্পে ১০২ জন পড়ুয়ার ট্যাবের টাকা পাওয়ার কথা ছিল। সেই মতো গত অক্টোবর মাসে ওই পড়ুয়াদের মধ্যে ৯৬ জনের টাকা অ্যাকাউন্টে ঢুকে যায়। কিন্তু ছ’জন সেই টাকা পায়নি। এর পর ব্যাঙ্কে গিয়ে খোঁজ নিতেই জানা যায়, স্কুলের তরফে আপলোড করা নথিতে ওই ছয় জন পড়ুয়ার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বদলে গিয়েছে! পরিবর্তে সেই টাকা ঢুকেছে অপরিচিত কোনও অ্যাকাউন্টে। এর পরে সাইবার অপরাধ দমন শাখার দ্বারস্থ হয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার সাইবার ক্রাইম থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
স্কুলের তরফে এমন অভিযোগ পেতেই নড়েচড়ে বসেছে সাইবার ক্রাইম থানা। তদন্তে জানা গিয়েছে, ওই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টগুলির প্রতিটি আলাদা আলাদা শাখার হলেও সব ক’টির ঠিকানাই উত্তর দিনাজপুর জেলার চোপড়া ব্লকে। দ্রুত অভিয়ুক্তদের শনাক্ত করে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এ বিষয়ে ওই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় সেন বলেন, ‘‘এক পড়ুয়া প্রথমে এসে জানায় ট্যাবের টাকা তার অ্যাকাউন্টে ঢোকেনি। এর পরেই আর কার কার অ্যাকাউন্টে টাকা ঢোকেনি, জানতে নোটিস জারি করা হয়। মোট ছ’জন এমন পড়ুয়াকে পাওয়া যায়, যাদের অ্যাকাউন্টে টাকা ঢোকেনি। খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ওই পড়ুয়াদের টাকা অন্যের অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে। যাদের অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকেছে, তারা সবাই উত্তর দিনাজপুর জেলার চোপড়া ব্লকের বাসিন্দা। বিষয়টি নিয়ে আমি থানায় অভিযোগ করেছি।’’ উল্লেখ্য, ট্যাব প্রতারণাকাণ্ডে শুক্রবার পর্যন্ত শুধু মালদহ থেকেই ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুর থেকে এবং চোপড়া থেকে ধরা পড়েছেন আরও দু’জন। পড়ুয়াদের অ্যাকাউন্ট ‘হ্যাক’ করে তাঁরাই ট্যাব কেনার টাকা হাতিয়েছেন বলে অভিযোগ।
রাজ্য সরকার ‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্পের অধীনে ট্যাব কেনার জন্য একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের এককালীন ১০ হাজার টাকা দেয়। সেই টাকা সরাসরি ঢোকে পড়ুয়াদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। অভিযোগ, চলতি বছরে বহু পড়ুয়ার টাকা অ্যাকাউন্টে ঢোকেনি। কোথাও কোথাও আবার অভিযোগ, এক জনের টাকা চলে গিয়েছে অন্য জনের অ্যাকাউন্টে। এ ছাড়াও, ‘হ্যাক’ করে ট্যাবের টাকা পড়ুয়াদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে হাতানোর অভিযোগ উঠেছে। সবচেয়ে বেশি অভিযোগ উঠেছে পূর্ব বর্ধমান থেকে। এখনও পর্যন্ত ট্যাব কেলেঙ্কারিতে নাম জড়িয়েছে রাজ্যের অন্তত ১৫টি জেলার। তদন্তে নেমে কলকাতা পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, ট্যাব জালিয়াতিচক্রের আঁতুড়ঘর উত্তর দিনাজপুরের চোপড়া এবং তার সংলগ্ন এলাকা।