দার্জিলিঙের ম্যাল-চৌরাস্তায় সরস মেলার উদ্বোধনী মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে অনীত থাপা। নিজস্ব চিত্র।
‘নকল’ দার্জিলিং চায়ের বাজার রুখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার বিকেলে দার্জিলিং ম্যাল-চৌরাস্তায় সরস মেলার উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে দার্জিলিং চা নিয়ে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা বলে, সে চায়ের নাম করে খারাপ চা বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। বিশ্বখ্যাত দার্জিলিং চায়ের বদনাম হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমি আমেরিকা, ব্রিটেনে গিয়েছি। সেখানে বিমানবন্দরে দার্জিলিং চায়ের প্যাকেট দেখে খুব খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু আজকাল কিছু সমস্যা হচ্ছে। দার্জিলিং চায়ের নামের বাজে চা বাজারে ছাড়া হচ্ছে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘পরিস্থিতি যা, তাতে দার্জিলিং চায়ের বদনাম করা হচ্ছে। এটা আমরা হতে দেব না। আমরা সরকারি ভাবে এ বিষয়টি বন্ধ করতে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’’
প্রশাসন সূত্রের খবর, ২০১৭ সালে ১০৪ দিন পাহাড়ে বন্ধের সময়ে দার্জিলিঙের চা বাগানগুলি বন্ধ ছিল। পরে ধীরে ধীরে সে বাগান খুললেও, তত দিনে নেপালের চা বাজারে ছড়িয়ে পড়ে। দেশের ভিতরের বাজারে নেপালের চাকে ‘দার্জিলিং চা’ বলে বিক্রি শুরু হয়ে যায়। সে চায়ের গুণমান, স্বাদ দার্জিলিং চায়ের থেকে অনেকটাই কম। কিন্তু দাম কম বলে নেপাল থেকে চা আমদানি করে, তা দার্জিলিং চা বলে বিক্রি করার প্রবণতা দিনের পর দিন বাড়ছে। এক শ্রেণির ব্যবসায়ী ওই নেপালের চা বা অসম থেকে চা এনে তা সংমিশ্রণ করে দার্জিলিং চায়ের নাম করে বাজারে ছাড়ছেন বলে অভিযোগ। যা নিয়ে ‘দার্জিলিং টি অ্যাসোসিয়েশন’ থেকে শুরু করে বিভিন্ন চা সংগঠন কেন্দ্রীয় সরকারের পাশাপাশি রাজ্যের কাছে আবেদন করেছে।
বিশেষ করে, নেপাল থেকে আসা চায়ের মান পরীক্ষার দাবি জানানো হয়েছে। সম্প্রতি ‘ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ড অথরিটি অফ ইন্ডিয়া’ (এফএসএসএআই)-র তরফে নেপাল থেকে আমদানি করা চায়ের পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করার কথা বলা হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারি থেকে সে নির্দেশিকা থাকলেও তা ঠিকঠাক মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ।
সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, নেপালে চায়ের উৎপাদন খরচ দার্জিলিঙের থেকে ৪০-৪৫ শতাংশ কম। ভারত প্রতি বছর নেপাল থেকে প্রায় এক কোটি ৬০ লক্ষ কেজি চা আমদানি করে। সেখানে দার্জিলিঙের চা শিল্প বছরে ৬৫ লক্ষ কেজি চা উৎপাদন করে।
দার্জিলিং চা বাগান মালিকেরা জানিয়েছেন, দার্জিলিং চায়ের ভৌগোলিক নির্দেশক বা ‘জিআই ট্যাগ’ রয়েছে। সেখানে নেপালের চা যে ভাবে ঢুকছে তাতে দার্জিলিং চা শিল্প ধীরে ধীরে রুগ্ণ হয়ে পড়ছে।