খুঁটির জঙ্গল থেকে তরুণীর দেহাংশ উদ্ধার হয়েছে। প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
দিল্লির শ্রদ্ধাকাণ্ডের ছায়া এ বার ঝাড়খণ্ডে। লিভ ইন সঙ্গীকে ডেকে নিয়ে এসে শ্বাসরোধ করে খুনের পর দেহ ৫০ টুকরো করে জঙ্গলে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠল ঝাড়খণ্ডের এক যুবকের বিরুদ্ধে। খুঁটি জেলার ঘটনা।
অভিযুক্তের নাম নরেশ বেঙরা। তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, ঝাড়খণ্ডের খুঁটি জেলার জরিয়াগড় থানা এলাকার বাসিন্দা নরেশ। কর্মসূত্রে তিনি তামিলনাড়ুতে থাকতেন। সেখানে একটি মাংসের দোকানে কাজ করতেন। তামিলনাড়ুতে থাকার সময় এক তরুণীর সঙ্গে লিভ ইন সম্পর্কে জড়ান। গত দু’বছর ধরে তাঁরা একসঙ্গেই থাকছিলেন। সম্প্রতি ঝাড়খণ্ডে নিজের গ্রামের বাড়ি জোরডাগে ফিরে আসেন নরেশ। গ্রামে ফিরে আবার পরিবারের পছন্দের পাত্রীকে বিয়েও করেন। তাঁর লিভ অন সম্পর্কের কথা স্ত্রীর কাছে যেমন গোপন করেছিলেন, তেমনই লিভ ইন সঙ্গীর কাছে বিয়ের কথা জানাতে চাননি নরেশ।
নববিবাহিতা স্ত্রীকে গ্রামের বাড়িতে রেখে আবার কর্মস্থলে ফিরে যান নরেশ। তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, তামিলনাড়ুতে নরেশ পৌঁছতেই তাঁকে বিয়ের জন্য চাপ দেওয়া শুরু করেন লিভ ইন সঙ্গী। গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য জোরাজুরিও করতে থাকেন ওই তরুণী। গত ৮ নভেম্বর লিভ ইন সঙ্গীকে ঝাড়খণ্ডে নিয়ে আসেন নরেশ। গ্রামের বাড়িতে না নিয়ে গিয়ে তরুণীকে একটি জঙ্গলে নিয়ে যান। অভিযোগ, সেখানে নিয়ে গিয়ে প্রথমে তরুণীকে শ্বাসরোধ করে খুন করেন। তার পর দেহ লোপাট করতে তা টুকরো টুকরো করেন। তার পর জঙ্গলের এ দিক-ও দিক দেহাংশ ছড়িয়ে দিয়ে গ্রামে ফিরে আসেন। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে গত ২৪ নভেম্বর।
জঙ্গলের কাছেই অভিযুক্ত যুবক নরেশের গ্রাম। ওই দিন সকালে গ্রামবাসীরা দেখেন, একটি কুকুর মুখে করে কাটা হাত নিয়ে যাচ্ছে। এই দৃশ্য দেখে গ্রামে হুলস্থুল পড়ে যায়। তার পরই পুলিশে খবর দেন গ্রামবাসীরা। তদন্তে নেমে পুলিশ ওই জঙ্গল থেকে একটি ব্যাগের ভিতরে দেহাংশ উদ্ধার করে। তবে কিছু অংশ গায়েব ছিল বলে জানিয়েছেন তদন্তকারী এক আধিকারিক।
খুঁটির পুলিশ সুপার অশোক সিংহ জানিয়েছেন, লিভ ইন সঙ্গীকে খুঁটিতে নিয়ে আসেন নরেশ। তার পর তাঁকে বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে অটোতে করে নিয়ে যান। সেখানে দু’জনে নামেন। তরুণীকে অপেক্ষা করতে বলে নিজের গ্রামে যান নরেশ। ধারালো অস্ত্র নিয়ে আসেন। তরুণীকে জঙ্গলে টেনে নিয়ে গিয়ে ওড়না দিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করেন। তার পর তাঁর দেহ টুকরো করে জঙ্গলে ফেলে দিয়ে আবার গ্রামে ফিরে যান। পুলিশ জানিয়েছে, নরেশের লিভ ইন সঙ্গী খুঁটি পৌঁছে তাঁর মাকে ফোন করেন। সেটিই ছিল তাঁর শেষ ফোন। জঙ্গল থেকে তরুণীর দেহাংশের পাশেই আধার কার্ড উদ্ধার হয়েছে। সেই আধার কার্ড দেখে তরুণীর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে পুলিশ। খবর পেয়ে খুঁটিতে পৌঁছে কন্যার দেহ শনাক্ত করেন তাঁর মা। তার পরই নরেশের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তরুণীর মা। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয় নরেশকে। পুলিশের দাবি, জেরায় নরেশ খুনের ঘটনাটি স্বীকার করেছেন।
২০২২ সালে দিল্লির শ্রদ্ধা ওয়ালকরের খুনের ঘটনা গোটা দেশে তোলপাড় ফেলে দিয়েছিল। লিভ ইন সঙ্গীকে খুনের অভিযোগ ওঠে আফতাব পুনাওয়ালার বিরুদ্ধে। শ্রদ্ধাকে খুনের পর তাঁর দেহ টুকরো করে দক্ষিণ দিল্লির মেহরৌলির জঙ্গলে ফেলে এসেছিলেন বলে অভিযোগ। সেই ঘটনায় গ্রেফতার হন আফতাব।