মালদহে বৃদ্ধ হত্যারহস্যে চাঞ্চল্যকর তথ্য। প্রতীকী চিত্র।
বচসা চলাকালীন রাগের মাথায় দাদুর গলায় হাঁসুয়ার কোপ বসিয়ে দিয়েছিল নাতি। তার জেরে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় দাদুর। এর পর বিষয়টি ফোন করে বাবাকে জানায় দ্বাদশ শ্রেণির ওই ছাত্র। বাবার পরামর্শে ঘরের জিনিসপত্র লন্ডভন্ড করে দেয় ওই নাবালক। এমন ভাবে ঘটনাটি সাজানো হয় যাতে প্রাথমিক ভাবে দেখে মনে হয়, ডাকাতি করতে এসে খুন করা হয়েছে ওই বৃদ্ধকে। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পুরাতন মালদহের বৃদ্ধ হত্যারহস্যের সমাধান করেছে সিআইডি। খুন এবং তথ্যপ্রমাণ লোপাটের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে অভিযুক্ত নাতি এবং তার বাবাকে।
দিন দু’য়েক আগে পুরাতন মালদার মঙ্গলবাড়ির আদর্শপল্লি এলাকায় নিজের বাড়িতে খুন হন গুণমণি শীল নামে এক বৃদ্ধ। ওই ঘটনা ঘিরে রহস্য দানা বাঁধে। কী কারণে খুন তা নিয়ে ধন্দে ছিল পুলিশ। ওই ঘটনার তদন্তভার দেওয়া হয় সিআইডিকে। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সেই হত্যারহস্যের কিনারা করল সিআইডি। ওই কাণ্ডে গ্রেফতার করা হয়েছে হত্যাকারী ওই বৃদ্ধের নাতি এবং তার বাবা পার্থসারথি শীলকে। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
সিআইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, আঘাতের চিহ্ন দেখে তদন্তকারীরা প্রথম থেকেই বুঝতে পেরেছিলেন এই খুনের পিছনে কোনও পেশাদার খুনি নেই। তাই নজর রাখা হচ্ছিল, নিহতের পরিবারের সদস্যদের গতিবিধির উপর। বৃদ্ধের নাতির বয়ানে ধরা পড়ে বেশ কিছু অসঙ্গতি। তাকে জেরা করে তদন্তকারীরা জানতে পারেন, দাদুকে হত্যার সময় বাড়িতেই ছিল সে। খুনের সময় বাড়ির সদর দরজা বন্ধ ছিল বলে জানিয়েছিল সে। এই অবস্থায় আততায়ীরা বাড়িতে কী ভাবে ঢুকল তার উত্তর খুঁজতে শুরু করেন তদন্তকারীরা। এর পর গুণমণির ছেলে পার্থকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সদর দরজা বন্ধ থাকলেও তিনি ঘরে প্রবেশ করলেন কী ভাবে, তা জানতে চাওয়া হয়। আর তাতেই হয় রহস্যভেদ। তদন্তকারীদের দাবি, পার্থসারথি জানিয়েছিলেন তিনি ছাদে উঠে ঘরে ঢুকেছিলেন। এর পর সেই সূত্র ধরে তদন্ত শুরু করে সিআইডি। বাড়ির সদস্যদের মোবাইল লোকেশন ট্র্যাক করা হয়। পাশাপাশি, আশপাশে থাকা সিসি ক্যামেরার ছবিতে দেখতে পাওয়া যায় নাতিকে। সেই সূত্রে গ্রেফতার করা হয় বৃদ্ধের ছেলে এবং নাতিকে।
তদন্তকারীদের দাবি, জেরায় ওই নাবালক স্বীকার করেছে বচসার সময় রাগের মাথায় হাঁসুয়া দিয়ে কুপিয়ে দেয় দাদুকে। ইংরেজবাজার শহরের একটি নামী স্কুলে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র ওই নাবালক। জানা যায়, খুনের পর পার্থসারথিকে ছ’বার ফোন করেছিল তার ছেলে। সেই সময় তিনি ছিলেন ইংরেজবাজারে। ওই নাবালক ফোনে তার বাবাকে জানায় সমস্ত ঘটনা। বাবার পরামর্শে সে লন্ডভন্ড করে বাড়ির জিনিস। যাতে মনে হয়, ডাকাতির জন্যই খুন করা হয়েছে ওই বৃদ্ধকে। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, দাদুকে খুনের পর টিউশনে পড়তে গিয়েছিল নাতি। রবিবার ধৃতদের নিয়ে ঘটনাস্থলে যান তদন্তকারীরা। সেখান ওই হত্যাকাণ্ডের পুনর্নির্মাণ করা হয়। তদন্তকারীরা উদ্ধার করেছেন হত্যার অস্ত্রটিও।