রাধিকাপুর স্টেশন। —ফাইল চিত্র।
রায়গঞ্জের রমেন্দ্রপল্লির অজয় সাহা সুভাষগঞ্জ বাজারে মাছ বিক্রি করেন। অজয় দীর্ঘ দিন ধরে অসুস্থ। অজয়ের বৃদ্ধা মা রিতা হৃদরোগে ভুগছেন। তাঁরা দীর্ঘ দিন ভেলোরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা করান। অজয় বলেন, ‘‘রায়গঞ্জ থেকে বেঙ্গালুরু, মুম্বই, চেন্নাই ও দক্ষিণভারতগামী ট্রেন নেই। ফলে, রায়গঞ্জ ও ইসলামপুর মহকুমার বহু রোগী ভেলোর, হয়দরাবাদ, মুম্বই ও চেন্নাইয়ের নানা হাসপাতালে যেতে দুর্ভোগে পড়েছেন। তাঁরা মালদহ, বারসই ও হাওড়ায় গিয়ে ট্রেন ধরতে বাধ্য হচ্ছেন।’’
রায়গঞ্জ মহকুমা থেকে বেঙ্গালুরু, মুম্বই, চেন্নাই ও দক্ষিণ ভারতগামী ট্রেনের অভাবই শুধু নয়, মহকুমায় রেল পরিষেবা নিয়ে বাসিন্দা ও যাত্রীদের অভিযোগ কম নয়। এই মহকুমার প্রান্তিক তথা শেষ স্টেশন ভারত-বাংলাদেশ সীমানা লাগোয়া রাধিকাপুর। সেখান থেকেই লোকাল ও দূরপাল্লার সমস্ত ট্রেন কালিয়াগঞ্জ ও রায়গঞ্জ হয়ে যাতায়াত করে। বাসিন্দা ও যাত্রীদের অভিযোগ, রাতে কলকাতা যাওয়ার একমাত্র ট্রেন রাধিকাপুর এক্সপ্রেসে এক থেকে দু’সপ্তাহ আগে টিকিট না কাটলে টিকিট মেলে না। সপ্তাহে এক দিন দিল্লিগামী ট্রেনের টিকিট পাওয়ার ক্ষেত্রেও যাত্রীদের সেই ভোগান্তির মুখে পড়তে হয়। রাধিকাপুর ও দিল্লিগামী ট্রেনের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কোচে মাঝেমধ্যেই ‘বেড রোল’ অপরিষ্কার থাকে। সকালে হাওড়াগামী কুলিক এক্সপ্রেস ট্রেনের শৌচাগার অপরিষ্কার থাকে, জল মেলে না। ওই ট্রেনের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত একটি ও একটি 'চেয়ার কার' কোচে দু’সপ্তাহ আগে ছাড়া টিকিট মেলে না।
ফেব্রুয়ারির শেষে কাটিহারে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের কাটিহার ডিভিশন কর্তৃপক্ষ যাত্রী পরামর্শদাতা কমিটির বৈঠক করেন। ওই কমিটির রায়গঞ্জের সদস্য অতনুবন্ধু লাহিড়ী বলেন, ‘‘বৈঠকে ডিআরএম-সহ ডিভিশনের রেলকর্তাদের কাছে রায়গঞ্জ মহকুমা থেকে দিল্লিগামী ট্রেন প্রতিদিন চালানো, বেঙ্গালুরু-সহ দক্ষিণ ভারতগামী একাধিক ট্রেন চালু, অতিরিক্ত ট্রেন চালুর জন্য রাধিকাপুরে লাইনের সংখ্যা বাড়ানো, রাধিকাপুর ও কুলিক এক্সপ্রেস ট্রেনে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কোচে পরিষ্কার বিছানা দেওয়া-সহ একাধিক দাবি জানানো হয়েছে।’’ সে সময়ে মালিগাঁওয়ে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের জোনাল বিভাগের যাত্রী পরামর্শদাতা কমিটির বৈঠক হয়। কমিটির সদস্য তপনকুমার চৌধুরীর দাবি, রায়গঞ্জ মহকুমা থেকে দিল্লিগামী ট্রেন সপ্তাহে একদিন চলায় ও মহকুমা থেকে মুম্বই, হায়দরাবাদ, চেন্নাই, বেঙ্গালুরুগামী ট্রেন না থাকার কারণে মহকুমার বহু মানুষ ভিন রাজ্যে চিকিৎসা করাতে ও কাজে যেতে সমস্যা ও দুর্ভোগে পড়ছেন। তিনি বলেন, “যাত্রী-দুর্ভোগ রুখতে রায়গঞ্জ স্টেশনের এক নম্বর প্ল্যাটফর্ম সম্প্রসারণের কাজ দ্রুত শেষ করে সেখানে কলকাতা ও দিল্লিগামী ট্রেনের স্টপ দেওয়া, বয়স্ক যাত্রী ও রোগীদের সুবিধার্থে এক নম্বর থেকে দু'নম্বর প্ল্যাটফর্মে যাওয়ার জন্য চলমান সিড়ি, উড়ালপুল তৈরি-সহ দক্ষিণ ভারতগামী বিভিন্ন ট্রেন চালুর দাবি জানিয়েছি।’’