কারিগরি কলেজের পাশে যাদবপুর

বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদনের দাবিতে মালদহের গনিখান চৌধুরী কারিগরি কলেজের পড়ুয়াদের আন্দোলনের পাশে দাড়ালেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনীরা। শুক্রবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের চার প্রাক্তন পড়ুয়া বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সামিল হন।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
মালদহ শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০১৬ ০৮:০৭
অনশন মঞ্চে ছাত্রছাত্রীরা। নিজস্ব চিত্র।

অনশন মঞ্চে ছাত্রছাত্রীরা। নিজস্ব চিত্র।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদনের দাবিতে মালদহের গনিখান চৌধুরী কারিগরি কলেজের পড়ুয়াদের আন্দোলনের পাশে দাড়ালেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনীরা। শুক্রবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের চার প্রাক্তন পড়ুয়া বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সামিল হন। এর পরে আরও অন্য বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজের ছাত্ররাও এই আন্দোলনে সামিল হবে বলে দাবি বিক্ষোভকারীদের। এ দিন তাঁদের অনশন সাত দিনে পড়ল। এর জেরে এক ছাত্রী সহ দুই জন অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসা করা হয়েছে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে।

কিন্তু এরপরেও কলেজ কর্তৃপক্ষ সুনির্দিষ্ট কোনও আশ্বাস না দেওয়ায় ক্ষুব্ধ তাঁরা। তাঁদের অভিযোগ, মাস খানেক বাদেই বি-টেক কোর্স শেষ হবে। কিন্তু এখনও গনিখান কারিগরি কলেজ কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন পায়নি। ফলে পাশ করার পরেও কোন শংসাপত্র মিলবে না। যার জন্য চাকরি কিংবা অন্যত্র ভর্তির ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়তে হবে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন গবেষক কৌশিক মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এখানে আমরা কোনও আন্দোলন করতে আসেনি। ছাত্র ছাত্রীদের পাশে দাঁড়াতে এসেছি। কারন তাঁদের দাবি যুক্তিযুক্ত। কেন ছয় বছরেও তাঁরা অনুমোদন পাবে না? তাঁদের দাবিকে সমর্থন জানাতে আমরা এখানে সামিল হয়েছে।’’

Advertisement

২০১০ সালে মালদহে গনিখান চৌধুরী কারিগরি কলেজ স্থাপিত হয়। পুরাতন মালদহের নারায়ণপুরে কলেজ ভবনের কাজের সূচনা করেন তৎকালীন প্রধান মন্ত্রী মনমোহন সিংহ ও সনিয়া গাঁধী। ২০১৪ সালে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় কলেজ ভবনের উদ্বোধন করেন। তবে ২০১০ সাল থেকেই ইংরেজবাজারের লক্ষ্মীপুর এলাকায় চলছে কলেজের পঠন পাঠন। প্রথম দিকে চালু হয় সার্টিফিকেট কোর্স। পরবর্তীতে পঠন পাঠন শুরু হয় বিটেক, ডিপ্লোমা, ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ফুড প্রসেসিং। বর্তমানে সমস্ত বিভাগে প্রায় ৮২৫ জন ছাত্র ছাত্রী রয়েছে। তার মধ্যে ৫০ শতাংশ পড়ুয়া উত্তরভারতের। কলেজ চালু হওয়ার ছ’বছর হয়ে গেলেও এখনও কোন অ্যাফিলিয়েশন মেলেনি।

কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিটি কারিগরি কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকতে হয়। যেমন ডিগ্রি কলেজগুলি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে খেকে পঠন পাঠন হয়। তবে এই কলেজ এখনও কোন বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের কারিগরি কলেজের সঙ্গে যুক্ত হয়নি। যার ফলে পড়ুয়ারা কোর্সের পর কোনও শংসাপত্র পাচ্ছেন না। শুধু মাত্র তাঁরা মার্কশিট পাচ্ছেন।

কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, এই কলেজের চেয়ারম্যান ছিলেন আবু নাসের খান চৌধুরী (লেবু)। বছর দেড়েক আগে তাঁকে চেয়ারম্যান পদ থেকে সরানো হয়। ফলে দেড় বছর কলেজের কোনও চেয়ারম্যান ছিল না। এ ছাড়া কলেজের অনুমোদনের বিষয়ে কলেজের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কোনও উদ্যোগ নেয়নি বলে অভিযোগ। তাঁদের উদাসীনতার জন্য এখনও গনিখান কলেজ অনুমোদন পায়নি বলে দাবি পড়ুয়াদের। এই বিষয়ে আবু নাসের খান বাবু বলেন, ‘‘আমি সব রকম ভাবে চেষ্টা করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত করারও চেষ্টা করেছিলাম। তবে আমাকে সরিয়ে দেওয়ায় শেষ পর্যন্ত তা হয়নি।’’

কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী জুলাই মাসে রয়েছে বিটেক কোর্সের দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা। দ্বিতীয় বর্ষে ৮০ জন ছাত্র ছাত্রী রয়েছে। আর ফল প্রকাশ হবে অগস্ট মাসে। ফলপ্রকাশের পর ছাত্র ছাত্রীরা পাশ করলেও কোনও শংসাপত্র পাবেন না। আর শংসাপত্র না থাকার ফলে বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষা হোক কিংবা অন্য কোন কলেজে ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে হবে। তাই মরিয়া হয়েই গত শনিবার থেকে প্রায় ৩০ জন পড়ুয়া কলেজেই অনশন শুরু করেছেন। সাত দিন ধরে তাঁরা লাগাতার অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন। অনশনের জেরে চারন পড়ুয়া অসুস্থ হয়ে পড়েন। কলেজের তরফ থেকে চিকিৎসা করা হয়। এক ছাত্রী মন্দিরা মন্ডল এবং ছাত্র আলমগির খান অসুস্থ হয়ে মালদহ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করানো হয়। তবে প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

ছাত্র ছাত্রীরা অবশ্য তাঁদের দাবিতে অনড় রয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, ‘‘পূর্ণাঙ্গ আশ্বাস না পেলে আমাদের অনশন চলবেই। আর অন্য কলেজের ছাত্র ছাত্রীদের আমাদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানানো হয়েছে।’’ কলেজের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক অশোককুমার দে বলেন, ‘‘অগস্ট মাসের মধ্যেই আমরা সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করছি। ওই মাসের অ্যাফিলিয়েশন দেওয়ারও চেষ্টা করছি। আর আমরা আব্দুল কালাম আজাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আমাদের কথা চলছে।’’ আর যত দিন সমস্যা না মিটছে, তত দিন ভর্তি প্রক্রিয়া বন্ধ রাখা হবে বলে জানিয়েছেন অশোকবাবু।

আরও পড়ুন
Advertisement