Encounter and Justice

এনকাউন্টার নয়, বিচারের পথে শাস্তিই কাম্য

পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীন কী ভাবে বন্দির হাতে বন্দুক পৌঁছয়? এটা অনেক বড় প্রশ্ন।

Advertisement
অতীন্দ্র চৌধূরী
শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০২৫ ০৬:৫৩
—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

এনকাউন্টার।’ উত্তরপ্রদেশের পরে এ বার পশ্চিমবঙ্গেও পরিচিত শব্দ হয়ে উঠল। সেই পদক্ষেপ জনকল্যাণমূলক যে কোনও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার চূড়ান্ত ব্যর্থতা বলে মনে করি। মানবাধিকারে মান্যতা না দিয়ে বিচার ব্যবস্থার চোখে ধুলো দিয়ে পুলিশের স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাবের প্রতিচ্ছবি হল ‘এনকাউন্টার’। যা অসাংবিধানিক।

Advertisement

যোগী-রাজ্যে জনপ্রিয় ‘এনকাউন্টার’ এ বার পশ্চিমবঙ্গেও ব্যবহৃত হতে দেখে রীতিমতো হতবাক। পলাতক বিচারাধীন বন্দি সাজ্জাক আলমের এনকাউন্টারে মৃত্যুতে আসলে চাপা দেওয়ার চেষ্টা হল পুলিশের ব্যর্থতা এবং পশ্চিমবঙ্গের সংশোধনাগারগুলির অচল ব্যবস্থার কাহিনিই।

পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীন কী ভাবে বন্দির হাতে বন্দুক পৌঁছয়? এটা অনেক বড় প্রশ্ন। তদন্ত দরকার পশ্চিমবঙ্গের সংশোধনাগারগুলির ভিতরে অপরাধজগতের কারবার কী ভাবে সংগঠিত হচ্ছে রাষ্ট্রের নীরব ব্যবস্থাপনায়। নিহত সাজ্জাক বেঁচে থাকলে সে সব তথ্য উঠে আসতে পারত। পুলিশ সাজ্জাককে বাঁচিয়ে রাখতে চায়নি তাদের নিজেদের স্বার্থেই।

‘এনকাউন্টার’ উত্তরপ্রদেশ বা পশ্চিমবঙ্গ যেখানেই হোক না কেন, তা মানবাধিকার-বিরোধী এক পন্থা। রাষ্ট্র-কর্তৃক অভিযুক্তের সাংবিধানিক অধিকার অস্বীকার করা, যা নিন্দানীয় পদক্ষেপ।

নিঃসন্দেহে পুলিশের হাতে ক্ষমতা রয়েছে, এমন কোনও পরিস্থিতিতে নিজেদের বাঁচানোর জন্য প্রতিপক্ষকে প্রতিহত করার স্বার্থে গুলি করে মৃত্যু সুনিশ্চিত করা। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ‘এনকাউন্টার’ নিয়ে বিচারবিভাগীয় তদন্তের প্রয়োজন। যেখানে দেখা উচিত, আদৌ সেই ধরনের কোনও পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল কিনা, যার জন্য পুলিশকে ‘এনকাউন্টার’ করতে হল। যদি এই এনকাউন্টারের প্রক্রিয়া দিনে দিনে বাড়তে থাকে, তা হলে অদূর ভবিষ্যতে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় পুলিশের একনায়কতন্ত্রকে প্রাধান্য দেওয়া হবে বলে মনে করি। তাই যে কোনও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন নাগরিক সমাজের কাছে এনকাউন্টার নয়, বরং বিচার প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে অভিযুক্তকে শাস্তি প্রদান এবং সংশোধনের মধ্যে দিয়ে নতুন সমাজ তৈরিই কাম্য।

লেখক কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী

Advertisement
আরও পড়ুন