বালুরঘাট পুরসভায় বায়োমেট্রিক চালু হতেই টানা ‘অনুপস্থিত’ ৮০ কর্মী! —প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
কর্মীদের উপস্থিতি জানতে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি চালু করেছে বালুরঘাট পুরসভা। আর এই পদ্ধতি চালু করার পরে চক্ষু চড়কগাছ পুর কর্তৃপক্ষের। কারণ, তার পর থেকে একটানা ‘অনুপস্থিত’ রয়েছেন পুরসভার মোট ৮০ জন কর্মী। পুরনো হাজিরা খাতা দেখে যত জন কর্মীকে প্রতি মাসে বেতন দেওয়া হত, বায়োমেট্রিক পদ্ধতি চালু হতেই তাঁদের মধ্যে প্রায় ৮০ জন কর্মীর কোনও হদিস পায়নি পুরসভা। বিরোধীদের বক্তব্য, এই সবই ভুয়ো নিয়োগের ফল। পুরপ্রধান অবশ্য জানিয়েছেন, কী কারণে এমনটা হয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
৮০ জন কর্মীকে বেতন দিতে না-হওয়ায় পুরসভার প্রায় ১২ লক্ষ টাকা সাশ্রয় হয়েছে। এই ঘটনাকে ঘিরে রাজনৈতিক শোরগোল পড়ে গিয়েছে বালুরঘাট পুর এলাকায়। বিরোধীরা এই বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত দাবি করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, ৮০ জন কর্মীর বেতন এত দিন কোন অ্যাকাউন্টে ঢুকত এবং কারা এর সঙ্গে যুক্ত, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। অন্য দিকে, ঘটনার কথা স্বীকার করে নিয়ে বালুরঘাট পুরসভার পুরপ্রধান অশোক মিত্র জানিয়েছেন, এখনই ওই ৮০ জনকে ভুয়ো কর্মী বলা যাবে না। আগে সমস্ত বিষয় খতিয়ে দেখে তার পরেই পুরসভা সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, “আমরা স্বচ্ছতা বজায় রাখতে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি চালু করেছি। এর ফলে বেশ কিছু কর্মী তাঁদের উপস্থিতি জানাতে পারেননি। আমরা সেগুলি খতিয়ে দেখে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি।” তবে ৮০ জন কর্মীর বায়োমেট্রিক এক মাস ধরে কেন হল না, সেটাও খতিয়ে দেখা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
বিরোধীদের বক্তব্য, তারা দীর্ঘ দিন ধরেই দাবি করে আসছিল যে, ভুয়ো কর্মীতে জেরবার বালুরঘাট পুরসভা। অভিযোগ, ওই ভুয়ো কর্মীদের পুরসভার কোনও কাজেই লাগে না। অথচ প্রতি মাসে নাকি তাঁদের অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকে যায়।
পুরসভার প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা আরএসপি নেত্রী সুচেতা বিশ্বাস বলেন, “আমরা দীর্ঘ দিন ধরে বলে আসছি যে, কর্মী নিয়োগে স্বজনপোষণ হয়েছে। প্রচুর ভুয়ো কর্মী ঢুকে রয়েছেন পুরকর্মীদের তালিকায়। এত দিন ধরে পুরসভার প্রচুর টাকা খরচ হয়েছে। এখন ভুয়োকর্মীদের অ্যাকাউন্টে কী ভাবে টাকা গেল, তা খতিয়ে দেখা এবং ওই টাকা পুরসভার অ্যাকাউন্টে ফেরত আনার জন্য যাবতীয় উদ্যোগ নিতে হবে বর্তমান পুরবোর্ডকেই। আমরা এই দাবিতে আন্দোলনে নামব।” বিজেপি নেতা বাপি সরকার বলেন, “এত দিন ধরে এত কর্মী, যাঁদের কোনও অস্তিত্ব নেই, অথচ তাঁদের অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকছে। এটা পুর প্রশাসন জানে না, তা হতে পারে না। জেনেবুঝেই এত দিন তাঁরা টাকা দিয়েছেন। এখন বিষয়টি সামনে চলে আসায় নিজেরা গা বাঁচাতে চাইছেন। আমরা চাইব বিষয়টার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হোক।”
দীর্ঘ দিন বামেদের দখলে থাকা বালুরঘাট পুরসভায় ২০১৩ সালে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। আর ওই সময়েই প্রায় ৬৫০ জন কর্মীকে দৈনিক মজুরিতে নিয়োগ করে তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ড। ওই কর্মী নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে দীর্ঘ দিন ধরেই সরব বিরোধীরা। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ৮০০ জন দৈনিক মজুরির শ্রমিক রয়েছেন। তাঁদের বেতন দেওয়ার জন্য নিজস্ব তহবিল থেকে প্রতি মাসে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা খরচ করতে হয় পুরসভাকে।