—প্রতীকী চিত্র।
শিলিগুড়ি করিডর লাগোয়া কোথাও বাংলাদেশ সীমান্ত উন্মুক্ত থাকবে না— এমনই নির্দেশ এসেছে সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনী তথা বিএসএফের কাছে। নির্দেশ পাওয়ার পরেই জলপাইগুড়ি জেলায় কাঁটাতারহীন প্রায় ১৯ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বেড়া বসানোর তোড়জোড় শুরু করেছে বিএসএফ। কাঁটাতারের বেড়া বসাতে প্রয়োজনীয় জমি বিএসএফের হাতে তুলে দিতে জেলা প্রশাসনের তরফে গ্রামবাসীদের সঙ্গে একের পর এক বৈঠক করা হয়েছে। জমির সমীক্ষাও শেষের পথে। সীমান্তবর্তী ছ’টি গ্রামে বেড়া বসানোর জমি বিএসএফ কার্যত পেয়ে গিয়েছে। বসানো হয়েছে খুঁটিও। বিএসএফের এক অফিসারের কথায়, “জমি সমীক্ষার কাজ দ্রুতগতিতে চলছে। কোনও বাধা আপাতত নেই।”
জলপাইগুড়ি জেলায় বাংলাদেশ সীমান্তে ১৮-২০ কিলোমিটার এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া নেই। জলপাইগুড়ির গ্রামগুলিতে কাঁটাতারহীন সীমান্তে ‘জ়িরো পয়েন্ট’ এবং ‘নো ম্যানস ল্যান্ড’-এরও ঠিকঠিকানা নেই। ‘জ়িরো পয়েন্ট’ অর্থাৎ যেখান থেকে দু’দেশের ভূখণ্ড পৃথক হয়েছে, তার দু’পাশে কমবেশি দেড়শো গজ এলাকায় চলাফেরা নিষিদ্ধ। তাকে বলে ‘নো ম্যানস ল্যান্ড’। উন্মুক্ত সীমান্তে সে সব নিয়ম কিছুই মানা হয় না বলে দাবি।
সম্প্রতি বাংলাদেশে রাজনৈতিক পালাবদলের পরে জলপাইগুড়ির উন্মুক্ত সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশি দুষ্কৃতীরা বিএসএফ জওয়ানদের উপরে হামলা চালায় বলে অভিযোগ। বাংলাদেশে ক্রমাগত ভারত-বিরোধী জিগির চলায় এবং সে দেশের জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের ভারত থেকে গ্রেফতার করার পরিপ্রেক্ষিতে বিএসএফের কাছে শিলিগুড়ি করিডর লাগোয়া বাংলাদেশ সীমান্ত কোথাও উন্মুক্ত না রাখার নির্দেশ এসেছে। সীমান্তে বেড়া বসাতে জমি পাওয়া নিয়ে রাজ্যের বিরোধী নেতাদের অভিযোগের মধ্যেই সীমান্তে জমি সমীক্ষা হয়ে অধিগ্রহণ-পর্ব শুরু হয়েছে জলপাইগুড়িতে।
জলপাইগুড়ির দক্ষিণ বেরুবাড়ির চিলাহাটি, বড়শশী, নাওতরি দেবোত্তর, কাজলদিঘি-পরাণিগ্রাম সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া ছিল না। বিএসএফ নির্দেশ পেয়ে জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করে। ওই এলাকাগুলি সবই একসময়ে বিতর্কিত বলে চিহ্নিত ছিল। ভারতীয় গ্রাম হলেও দেশের মানচিত্রে তারা ছিল না। বিএসএফ সূত্রে খবর, ওই চারটি এলাকায় অন্তত ১৬টি গ্রাম রয়েছে। ছিটমহল বিনিয়মের পরে সেই সমস্যা মিটে গেলেও কাঁটাতারের বেড়া বসেনি। ওই বসতিগুলি ছাড়াও নগর বেরুবাড়ির সিংপাড়া-খুদিপাড়াতেও কাঁটাতারের বেড়া ছিল না। সেখানেও আলোচনার মাধ্যমে জমিজট মিটেছে।
জলপাইগুড়ির সদর ব্লকের বিডিও মিহির কর্মকারের নেতৃত্বে একটি ‘দল’ তৈরি করা হয়। ওই দলের তরফে বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলা হয়। তার পরেই জমিজট কেটেছে। জট মিটতেই বাঁশের খুঁটি পুঁতে কাঁটাতারের বেড়া বসানোর জন্য এলাকা চিহ্নিত করা হয়। প্রশাসনের এক আধিকারিকের কথায়, “একটি গ্রামে মন্দির নিয়ে একটি বিষয় তৈরি হয়েছে। কাঁটাতারের বেড়া বসলে মন্দিরটি অন্য দিকে পড়তে পারে। বাসিন্দারা অনুরোধ করেছেন, মন্দিরটি যাতে বেড়ার এ দিকে থাকে। তা নিয়ে বিএসএফের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে।”
জলপাইগুড়ি জেলা পুলিশ সুপার উমেশ খণ্ডবহালে বলেন, “সীমান্তে বিএসএফ কাঁটাতারের বেড়া বসাচ্ছে। কোথাও সেন্সর বসছে। নতুন বেড়া বসানোর সমীক্ষা চলছে। প্রশাসনের কাছে যা সহযোগিতা চেয়েছে, সবই করা হচ্ছে।”