নিহত বিজেপি এজেন্টের দেহ। পাশে দাঁড়িয়ে কোচবিহার দক্ষিণের বিজেপি বিধায়ক নিখিলরঞ্জন দে। — নিজস্ব চিত্র।
পঞ্চায়েত ভোটগ্রহণকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত কোচবিহার। কোচবিহারের দক্ষিণ বিধানসভার ফলিমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের ভোটেরহাট ৩৮ নম্বর বুথের মধ্যেই ব্যাপক বোমাবাজি এবং গুলি চালানোর অভিযোগ। এই ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে মাধব বিশ্বাস নামে এক বিজেপি এজেন্টের। বেশ কয়েক জন আহতও হয়েছেন। বোমের আঘাতে জখম হয়েছেন বিজেপি প্রার্থী মায়া ভৌমিক সরকারও। জখম হয়েছেন এক পুলিশকর্মী এবং প্রিসাইডিং অফিসারও। আহতদের নিশিগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
বিজেপি প্রার্থী মায়া বলেন, ‘‘আমরা বুথের ভিতর সই করছিলাম। বুথের ভিতর আমি ছাড়াও তৃণমূল এবং সিপিএম প্রার্থী ছিল। হঠাৎ করে এক দল দুষ্কৃতী এসে বোমাবাজি শুরু করে। বাইরে যারা ছিল, তারা দৌড়ে পালিয়ে গেলেও আমরা বুথের ভিতরেই ছিলাম। এক জন পুলিশকর্মী দরজা আটকে দিলেও দুষ্কৃতীরা এসে লাথি মেরে দরজা ভেঙে দেয়। ওরা বুথের ভিতর ঢুকে বিজেপি প্রার্থীর খোঁজ করছিল। এর পর ওরা বিজেপির এজেন্ট মাধব বিশ্বাসকে বেরিয়ে যেতে বলে। ও বেরিয়ে যাওয়ার সময় ওকে লক্ষ্য করে বোমা ছোড়া হয়। মাধব ওখানেই মারা যায়।’’
নিহত মাধবের ভাই রতন বিশ্বাসের অভিযোগ তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের হাতে খুন হয়েছেন তাঁর দাদা। তাঁর কথায়, ‘‘দাদা সকালে বুথে গিয়েছিল। আমি বাড়িতেই ছিলাম। শুনলাম বুথে ব্যাপক বোমাবাজি হয়েছে। পরে জানলাম আমার দাদাকেই খুন করা হয়েছে। আমি পৌঁছনোর আগেই দাদার দেহ সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। শুনলাম গুন্ডাবাহিনী আমার দাদাকে বোমা মেরেছে।’’
তবে কোচবিহার দক্ষিণের বিধায়ক নিখিলরঞ্জন দে-র দাবি, গুলি করে খুন করা হয়েছে বিজেপির ওই এজেন্টকে। তাঁর অভিযোগ, পর্যাপ্ত পরিমাণ বাহিনী না থাকার কারণেই এই ঘটনা ঘটেছে। তিনি বলেন, ‘‘শুক্রবার রাত পর্যন্ত দেখলাম কোচবিহারে পর্যাপ্ত পরিমাণে কেন্দ্রীয় বাহিনী আসেনি। তখনই মনে হচ্ছিল ভোটের নামে প্রহসন হবে। যে ঘটনা ঘটার, তাই ঘটল। ফলিমারি গ্রাম পঞ্চায়েত ভোটেরহাটে আমাদের বিজেপি এজেন্টকে বুথ থেকে বার করে মাথায় গুলি করে খুন করেছে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। বিভিন্ন জায়গায় বোমাবাজি চলছে। পুলিশ আমাদের ফোন তুলছে না। হাই কোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও পর্যাপ্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী নেই। আর তাই একটা প্রাণ চলে গেল। এর দায়ভার কার? রাজ্য এবং রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে এর দায়ভার নিতে হবে।’’
অন্য দিকে, তৃণমূল মুখপাত্র পার্থ প্রতিম রায়ের দাবি, বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীদের হাতেই ওই বিজেপি এজেন্ট খুন হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘যে কোনও মৃত্যুই দুঃখজনক এবং নিন্দাজনক। তবে আমি ওখানকার তৃণমূল কর্মীদের কাছ থেকে খোঁজ নিয়েছি। শুনলাম ফলিমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের বেশ কয়েকটি বুথে সকাল থেকেই বোমাবাজি করছে বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। ৩৮ নম্বর বুথেও হামলা চালানো হয়। মূল লক্ষ্য ছিল তৃণমূল কর্মীদের উপর হামলা চালানো। কিন্তু ওদের হামলায় ওদেরই কর্মী নিহত হয়েছেন। বিজেপি মিথ্যাচার করেছে। বেশ কয়েকটি বুথে বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীদের আঘাতে বেশ কয়েক জন তৃণমূল কর্মী আহত হয়েছেন।’’