West Bengal Panchayat Election 2023

ভোটের দিনেও হিংসায়, খুনোখুনিতে সবার উপরে মুর্শিদাবাদ! রাত থেকে দুপুর পর্যন্ত নিহত পাঁচ

চলছে পঞ্চায়েত ভোটগ্রহণ। তার মধ্যেই উত্তপ্ত মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকা। সমস্যা শুরু হয়েছিল মনোনয়নের প্রথম দিন থেকেই। তবে পঞ্চায়েত ভোটের আগের রাত থেকে পরিস্থিতি চরমে পৌঁছেছে।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
বেলডাঙা শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৩ ০৮:১৬
Clashes in Murshidabad since night before panchayat election, three tmc workers died

মুর্শিদাবাদে গুলিতে আহত কংগ্রেস কর্মী। শনিবার। —নিজস্ব চিত্র।

পঞ্চায়েত ভোট চলাকালীন উত্তপ্ত মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকা। সমস্যা শুরু হয়েছিল মনোনয়নের প্রথম দিন থেকেই। তবে পঞ্চায়েত ভোটের আগের রাত থেকে পরিস্থিতি চরমে পৌঁছেছে। অনেক জায়গা থেকেই বোমাবাজি এবং গুলি চালানোর অভিযোগ উঠে আসছে শাসক এবং বিরোধী দু’পক্ষের বিরুদ্ধেই। শুক্রবার রাত থেকে শনিবার ভোটের দিন দুপুর পর্যন্ত সেই জেলায় পাঁচ জন খুন হয়েছেন। অভিযোগ, শুক্রবার রাত থেকে মুর্শিদাবাদে শুধুমাত্র শাসকদলেরই তিন জন কর্মী খুন হয়েছেন। এক কংগ্রেস কর্মী এবং এক জন সিপিএম সমর্থককেও খুনের অভিযোগ উঠেছে।

শুক্রবার রাতে মুর্শিদাবাদে রাজনৈতিক হিংসার বলি হন তৃণমূলের কর্মী বাবর আলি (৪০)। ঘটনাটি ঘটেছে মুর্শিদাবাদ জেলার বেলডাঙা থানার অন্তর্গত কাপাসডাঙা ষষ্ঠীতলা এলাকায়। শুক্রবার রাতে গ্রামের একটি চায়ের দোকানে বসেছিলেন বাবর এবং ফুলচাঁদ শেখ। তখনই দুষ্কৃতী এসে দু’জনকে বেধড়ক মারধর করে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করেন। গুরুতর আহত অবস্থায় দু’জনকে বহরমপুরে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করানো হলে সেখানকার চিকিৎসকেরা বাবরকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত রয়েছে কংগ্রেস আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন স্থানীয় কংগ্রেস নেতৃত্ব। খুনের ঘটনায় আতঙ্কিত স্থানীয় বাসিন্দারা।

Advertisement

এর পর শনিবার সকালে রেজিনগর থানার নাজিরপুরে মৃত্যু হয়েছে ইয়াসিন শেখ নামে এক শাসকদলের কর্মীর। অভিযোগ, দুষ্কৃতীদের ছোড়া বোমের আঘাতে মৃত্যু হয়েছে ইয়াসিনের। ভোটের সকালে মুর্শিদাবাদের খড়গ্রামেও একটি ফাঁকা জমি থেকে তৃণমূল কর্মী সাবিরুদ্দিন শেখের দেহ উদ্ধার হয়। অভিযোগ, শনিবার ভোর ৩টে নাগাদ খড়গ্রাম থানার অন্তর্গত রতনপুর নলদ্বীপ গ্রামে সাবিরুদ্দিনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুন করে কংগ্রেস আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। সাবিরুদ্দিনকে ঘুম থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে খুন করা হয় বলে অভিযোগ। যদিও কংগ্রেসের তরফে এই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। খড়গ্রামের রতনপুরেই মনোনয়নের প্রথম দিন খুন হন কংগ্রেস কর্মী ফুলচাঁদ শেখ। স্থানীয় সূত্রে খবর, সাবিরুদ্দিনই সেই খুনের মূল অভিযুক্ত ছিলেন। যদিও মৃতের পরিবারের সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

মুর্শিদাবাদের নওদায় মৃত্যু হয়েছে এক কংগ্রেস কর্মীরও। অভিযোগ, শনিবার সকাল থেকেই ওই এলাকায় ব্যাপক বোমাবাজি করে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। তার মধ্যেই একটি বোমা এসে লাগে হাজী নিয়াকত আলি নামে ওই কংগ্রেস কর্মীর গায়ে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে প্রথমে প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাঁকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। সেখানেই চিকিৎসা চলাকালীন মৃত্যু হয় তাঁর। ময়নাতদন্তের জন্য তাঁর দেহ বহরমপুর মর্গে পাঠানো হয়েছে। যদিও শাসকদলের তরফে সেই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। একই সঙ্গে লালগোলায় এক সিপিএম সমর্থককে খুনের অভিযোগও উঠেছে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে।

শনিবার সকালে ভোটগ্রহণ পর্ব শুরু হতে না হতেই একাধিক জায়গা থেকে গোলাগুলি চালানোর এবং খুনের অভিযোগ উঠে এসেছে। খবর মিলেছে শাসক এবং বিরোধী সংঘর্ষের।

স্থানীয় সূত্রে খবর, শনিবার সকালে রানিনগরে সিপিএম-তৃণমূল সংঘর্ষে কমপক্ষে ২৪ জন আহত হয়েছেন। এর পর বেশ কিছু ক্ষণ ভোটগ্রহণ বন্ধ ছিল। সেই এলাকায় একাধিক বুথ থেকে সিপিএমের এজেন্টদের বার করে দেওয়ার অভিযোগও উঠে এসেছে। রানিনগরের হূর্সি অঞ্চলে এক সিপিএম কর্মীর উপর গুলি চালানোর অভিযোগও উঠেছে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে।

এ ছাড়াও ডোমকল ব্লকের গড়াইমারি অঞ্চলে সিপিএম এজেন্টদের বুথের ভেতর ঢুকতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। ডোমকলের কুশিবাড়িয়ায় দুই তৃণমূল কর্মী এবং এক জন কংগ্রেস কর্মীর উপর গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি ইসলামপুরেও দু’জন তৃণমূল কর্মীর গুলিবদ্ধ হওয়ার খবর মিলেছে। তাঁরা দু’জনেই আশঙ্কাজনক অবস্থায় সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বলে স্থানীয় সূত্রে খবর।

প্রসঙ্গত, মনোনয়নের প্রথম দিন থেকেই একাধিক হিংসার ঘটনার জন্য বার বার শিরোনামে এসেছে মুর্শিদাবাদ। অশান্তি, হানাহানিতে প্রাণও গিয়েছে কয়েক জনের। মনোনয়ন শুরুর দিনেই মুর্শিদাবাদের খড়গ্রামে কংগ্রেস কর্মী ফুলচাঁদ শেখকে খুনের অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। যদিও সেই ঘটনার সঙ্গে পঞ্চায়েত ভোটের কোনও সম্পর্ক রয়েছে কি না, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।

শুক্রবার মুর্শিদাবাদে সফরে গিয়েছিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। সেখানে নবগ্রামে খুন হওয়া তৃণমূল নেতা মোজাম্মেল শেখের বাড়ি গিয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। এর পর যান খড়গ্রামের নিহত কংগ্রেস কর্মীর বাড়ি। রাজ্যপালের এই সফরের মধ্যেই রানিনগরের ইসলামপুরে কংগ্রেস প্রার্থীর দাদাকে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। এর পর ফের রাজনৈতিক খুনের ঘটনা ঘটল বেলডাঙায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement