BGBS 2025

‘কর্মসংস্থান ছাড়া পরবর্তী প্রজন্ম টিকতে পারবে না’, বাণিজ্যমঞ্চে বিনিয়োগের হিসাবও দিলেন মুখ্যমন্ত্রী

বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রশাসনিক দীর্ঘসূত্রিতা কাটানোর বিষয়ে আশ্বস্ত করেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে একটি শিল্পবিষয়ক সমন্বয় কমিটি তৈরি করছে রাজ্য সরকার।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৮:৩৪
Next generation cannot survive without employment, says Mamata Banerjee at BGBS inauguration

বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের মঞ্চ থেকে বিনিয়োগের অঙ্ক জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: এক্স (সাবেক টুইটার)।

কর্মসংস্থান। শিল্পায়ন। বিনিয়োগ। বাংলার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের দিকে তাকিয়েই তাঁর শিল্পনীতি বা বাণিজ্যদিশা, বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন (বিজিবিএস)-এর মঞ্চ থেকে ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

২০২১ সালে তৃতীয় দফায় মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিয়েই মমতা বলেছিলেন, এ বার তাঁর প্রধান লক্ষ্য হবে বাংলার শিল্পায়ন। সে ব্যাপারে তিনি যে তাঁর কর্মকাণ্ড জারি রেখেছেন, তা বোঝাতে চাইলেন বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। বক্তৃতায় স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, পরবর্তী প্রজন্মের কর্মসংস্থানের জন্য বাংলায় বিনিয়োগ নিয়ে আসাই তাঁর অগ্রাধিকার। না-হলে পরবর্তী প্রজন্মকে রক্ষা করা যাবে না। মমতা বলেন, ‘‘কর্মসংস্থান ছাড়া পরবর্তী প্রজন্ম সার্ভাইভ করবে (টিকে থাকবে) না।’’

Next generation cannot survive without employment, says Mamata Banerjee at BGBS inauguration

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

দেশ-বিদেশের বণিকমহলের সামনে দাঁড়িয়ে এ রাজ্যের বিরোধীদের তোলা প্রশ্নেরও জবাব দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বুধবার নিউ টাউনের বিশ্ব বাংলা কনভেনশন সেন্টারে শুরু হল দু’দিনের সম্মেলন। শুরুর আগে বিজেপি এবং সিপিএম নেতারা কটাক্ষ করেছিলেন আগের বাণিজ্য সম্মেলন থেকে বিনিয়োগের অঙ্ক নিয়ে। মমতা সেই প্রসঙ্গেরই অবতারণা করে বলেন, ‘‘আজকে সকালবেলাও কেউ কেউ বলেছেন, এত দিনে ১৪-১৫ টাকাও বিনিয়োগ হয়নি। আমার কাছে নথি আছে। আমি নথি দেখিয়ে বলছি, বাংলায় ১২ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। কোনও প্রকল্পের কাজ চলছে। কোনও প্রকল্পের কাজ শেষের মুখে। তোমাদের কা‌ছে কোনও প্রমাণ আছে?’’

Next generation cannot survive without employment, says Mamata Banerjee at BGBS inauguration

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

বাংলায় শিল্পস্থাপনে সরকারি লালফিতের ফাঁস যে কেটেছে, তা গত কয়েক বছর ধরেই বলে আসছেন রাজ্য এবং রাজ্যের বাইরের শিল্পপতিরা। বিনিয়োগ এলে যাতে সরকারি স্তরে শিল্পপতিদের কোনও প্রক্রিয়াগত দীর্ঘসূত্রিতার মধ্যে পড়তে না-হয়, সে ব্যাপারে বুধবার আবারও শিল্পমহলকে আশ্বস্ত করেছেন মমতা। শুধু আশ্বস্তই করেননি, মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে একটি শিল্পবিষয়ক সমন্বয় কমিটি তৈরি করছে রাজ্য সরকার। যে কমিটি শিল্পের সঙ্গে জড়িত দমকল, পরিবেশ-সহ সমস্ত দফতরের সঙ্গে সমন্বয় করবে। চলতি মাসেই সেই কমিটি গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

তাঁর শাসনে বাংলায় কর্মসংস্কৃতি বদলের কথাও উল্লেখ করেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আগে এখানে বিনিয়োগ আসত না। কারণ এখানে ধর্মঘট, হরতাল লেগেই থাকত। আমরা সে সব করতে দিই না। এখন বাংলায় একটা কর্মদিবসও নষ্ট হয় না।’’ মমতা এ-ও ঘোষণা করেছেন, চাইলে বৃহস্পতিবার থেকেই বীরভূমের ডেউচা পাচামির কয়লাখনিতে উত্তোলনের কাজ শুরু হয়ে যাবে। ডানকুনি-কল্যাণী, খড়্গপুর-মোড়গ্রাম, পুরুলিয়া-জোকা-সহ কিছু পণ্য করিডোর নির্মাণের ঘোষণাও করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

Next generation cannot survive without employment, says Mamata Banerjee at BGBS inauguration

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

বাণিজ্য সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সস্ত্রীক উপস্থিত ছিলেন ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন, ভুটানের মন্ত্রী ইওন ক্যান পুনসো। শিল্পপতিদের মধ্যে ছিলেন মুকেশ অম্বানী, সঞ্জীব গোয়েঙ্কা, সঞ্জীব পুরী, সজ্জন জিন্দল, হর্ষ নেওটিয়া, হর্ষবর্ধন আগরওয়াল। ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ও শিল্প সংস্থার হয়েই ছিলেন বাণিজ্য সম্মেলনে।

প্রত্যেকেই বাংলার শিল্পবান্ধব পরিস্থিতি এবং বদলে যাওয়া বাং‌লার প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন। হেমন্তের সঙ্গেই বিজিবিএসে প্রধান অতিথি হিসাবে আমন্ত্রিত ছিলেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু বুধবার মমতা তাঁর আসা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছিলেন। বলেছিলেন, ‘‘জানি না দিল্লি কী করবে।’’ বুধবার দেখা গেল ভুটানের প্রধানমন্ত্রী আসেননি। কিন্তু তাঁর দূত হিসাবে এসেছিলেন এক মন্ত্রী। গোটা সম্মেলনের আয়োজন এবং উদ্যোগের জন্য মমতা এ দিন ভূয়সী প্রশংসা করেন বাংলার প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী এবং বর্তমানে মুখ্যমন্ত্রীর অর্থ বিষয়ক উপদেষ্টা অমিত মিত্রের।

বৃহস্পতিবার বিজিবিএসের সমাপ্তি। ওই দিন প্রথমার্ধে আলোচ্য বিষয়: ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প। দ্বিতীয়ার্ধে হবে সমাপ্তি অনুষ্ঠান।

Advertisement
আরও পড়ুন