ফাইল চিত্র।
বুধবারের মতো শেষ হল নারদ মামলার শুনানি। পরবর্তী শুনানি হবে বৃহস্পতিবার দুপুর ২টোয়। ফলে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত হেফাজতেই থাকতে হবে সুব্রত, ফিরহাদ, মদন, শোভনকে
মামলা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত গড়াতে পারে। বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় ফের শুনানি হতে পারে। এ নিয়ে দু'পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে বাদানুবাদ চলছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কিছুক্ষেণের মধ্যেই জানাবেন বিচারপতি।
৫ মিনিটের বিরতি নিয়েছিলেন প্রধান বিচারপতি। জানিয়েছিলেন, তিনি এবং সুব্রত, ফিরহাদদের আইনজীবী কিছুক্ষণ কথা বলবেন নিজেদের মধ্যে। সেই বিরতি শেষে ফের শুরু হল শুনানি।
গণতান্ত্রিক দেশে লোক রাস্তায় নেমেই প্রতিবাদ করে। আইনকে নিজের পথেই চলতে দেওয়া উচিত, বললেন সিঙ্ঘভি
অভিষেককে বিচারপতির পাল্টা প্রশ্ন, ঘটনাটিকে প্রশাসককের নজর দিয়ে দেখা উচিত নয় কি? মুখ্যমন্ত্রী সিবিআই দফতরে। আইনমন্ত্রী সিবিআই আদালতে। তাহলে বিচার হবে কোথায়? রাস্তায়?
অভিষেক বললেন, সিবিআই দফতরে মুখ্যমন্ত্রীর যাওয়ায় কোনও প্রভাব খাটানো হয়েছে বলে মনে করি না। এটি কেন্দ্রীয় সংস্থার অফিস। মুখ্যমন্ত্রী যদি কলকাতা পুলিশ বা রাজ্য পুলিশের দফতরে বসে থাকতেন, তা হলে বিচার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার অভিযোগ মানা যেত।
অভিষেককে বিচারপতি প্রশ্ন: আপনার মতে একজন নেতার কর্তব্য কি? অনুগামীদের প্ররোচিত করা?
অভিষেকের জবাব: আইনজীবী হিসাবে বলব, কোনও নেতারই বিচারপ্রক্রিয়ায় বাধা দেওয়া উচিত নয়।
অভিষেক বলেছেন, আইনমন্ত্রী নিম্ন আদালতে গিয়েছিলেন ঠিকই। কিন্তু মন্ত্রীর হওয়ার পাশাপাশি তিনি বিধায়ক। সেখানে এই ঘটনাটিকে অস্বাভাবিক ভাবে দেখব কেন? অনেক বিধায়ক তো এমনও বলছেন, আমাদের সতীর্থদের ধরে নিয়ে যাওয়া হল কারণ হারটা ঠিক হজম হয়নি।
অভিষেককে বিচারপতির পাল্টা প্রশ্ন, সহকর্মী মানছি। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী তো অল্প সময়ের জন্য যাননি। ৫-৬ ঘন্টা ছিলেন নিজাম প্যালেসে। এ ব্যাপারে আপনি কী বলবেন? কেন শুনানি চলাকালীন নিম্ন আদালতে ছিলেন রাজ্যের আইনমন্ত্রী? প্রধান বিচারপতি জানতে চাইলেন, আপনি কী বলতে চান এটা গুরুতর নয়। আমাদের পর্যবেক্ষণে পরিস্থিতি যদি স্বাভাবিক থাকত। তা হলে অভিযুক্তদের আদালতে নিয়ে আসা যেত। কিন্তু তা হয়নি। এ দিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন।
অভিষেক বললেন, মুখ্যমন্ত্রীর জন্য অশান্তি হয়নি। বরং তিনি এবং অন্য বিধায়কেরা অশান্তির বিরোধিতা করেছেন। তাঁরা কর্মীদের বার বার শান্ত থাকতে বলেছেন। কোনও প্ররোচনা দেওয়ার উদাহরণ নেই। আসলে যাঁরা গ্রেফতার হয়েছেন তাঁর মুখ্যমন্ত্রীর সহকর্মী। তাই হয়তো মুখ্যমন্ত্রী গিয়েছিলেন। এ নিয়ে অযথা বিতর্ক তৈরি করা হয়েছে।
এরকম অনেক মামলায় বিক্ষোভ হয়। জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে জড়িত ঘটনায় মানুষের ক্ষোভ থাকেই। এটা ঠিকই এ ধরনের বিক্ষোভ দেখানো উচিত নয়। তবে এই বিক্ষোভকে যে ভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে তা-ও ঠিক নয়, বললেন ফিরহাদ, সুব্রতদের আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি।
দল বেঁধে মুখ্যমন্ত্রী আরও লোকজন নিয়ে সিবিআই দফতরে ঢুকে যান। তাঁকে গ্রেফতার করার দাবি জানান। ধর্নাতেও বসে যান। এটা নজিরবিহীন, বলেন সিবিআইয়ের আইনজীবী। তাঁর কথায় এটা সাধারণ মামলা নয়। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী ধর্নায় বসছেন। এটা কি হতে পারে? এরপর থেকে সাধারণ গ্রেফতারেও তো এটা ট্রেন্ড হয়ে যাবে। তুষার বলেন, অভিযুক্তদের হেফাজতে নিয়ে তদন্তের সুযোগ দেওয়া হোক।
সিবিআইয়ের আইনজীবী তুষার মেহতা বলেন, সেদিনের বিশৃঙ্খলা সম্পূর্ণ পরিকল্পিত ছিল। নিজামে প্রচুর মানুষ এসে ভিড় করেছিলেন। অফিসারদের পক্ষে তাই বাইরে আসা সম্ভব হয়নি। বেআইনি ভাবে ভিড় করে বিক্ষোভ দেখানো উন্মত্ত জনতাকে সামলানোও সম্ভব হয়নি। বাধ্য হয়েই অভিযুক্তদের ওখানে রাখা হয়। পরে মুখ্যমন্ত্রী নিজে সেখানে পৌঁছে যান। বলেন, ‘‘আমাকেও গ্রেফতার করুন।’’ এরপর কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ দেখানো হয়। তুষারের কথায়, ‘‘সিবিআইয়ের বিচারককে এই পরিস্থিতিতে জামিনের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল।’’
গ্রেফতার ৪ প্রভাবশালী নেতা মন্ত্রীর প্রভাব এতটাই বেশি যে, তাঁদের যাতে সশরীরে হাজিরা না দিতে হয়, তার আর্জি করেন আইনজীবীরা। ভার্চুয়ালি হাজিরা দেওয়ার প্রস্তাবও রাখা হয়। আইনমন্ত্রী নিজে আদালতে যান। এমন নজির আগে দেখা যায়নি। এতে আইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আদালতে বললেন মেহতা।
রিকল মামলা শুনতে গেলে আপনাদের সেদিনের পরিস্থিতি বিবেচনা করতেই হবে। ওই পরিস্থিতি ‘এক্সট্রা অর্ডিনারি’ ছিল। বিচারপতিকে জানালেন সিবিআইয়ের আইনজীবী তুষার মেহতা। বললেন, দল বেঁধে মুখ্যমন্ত্রী আরও লোকজন নিয়ে সিবিআইয়ের দফতরে ঢুকে যান। বলেন আমাকে গ্রেফতার করুন। এমনকি ধর্নাতেও বসে যান। এটা নজিরবিহীন, বললেন সিবিআইয়ের আইনজীবী।
শুধু অ্যাটর্নি জেনারেলকে নোটিস দেওয়া হয়। সিবিআই পুলিশের সাহায্য না নিয়ে সরাসরি কোর্টে চলে এল। আদালতে বললেন ফিরহাদদের পক্ষের আইনজীবী সিদ্ধার্থ লুথরা।
সিবিআই আমাদের জানিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী এবং আইনমন্ত্রী গিয়েছিলেন। এটা কি গ্রহনযোগ্য? প্রশ্ন করলেন বিচারপতি বিন্দাল।
গত পাঁচ বছরে এই মামলা নিয়ে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। ২০১৬ সাল থেকে ২০২১ পর্যন্ত এই মামলায় কোনও গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। আদালতকে বললেন অভিষেক।
আদালতকে সিঙ্ঘভি জানালেন, মানছি ১৭ মে কোভিড বিধি মানা হয়নি। তা বলে ৪০৭ ধারায় নারদ মামলা অন্যরাজ্যে নিয়ে যাওয়া ঠিক নয়।
করোনা পরিস্থিতিতে নেতা এবং মন্ত্রীদের জেলে রাখা কি একান্তই জরুরি? সিবিআইয়ের কাছে জানতে চেয়ে প্রশ্ন আদালতের।