শুক্রবার কৃষ্ণনগরে সাংবাদিক বৈঠকে মুকুল রায়। ছবি: ভিডিয়ো গ্র্যাব।
মুকুল রায়ের মুখে বিজেপি-র জয়ের ভবিষ্যদ্বাণী! কৃষ্ণনগর পুরসভা ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে একাধিক বার বিজেপি-র জয় এবং তৃণমূলের পরাজয়ের কথা বলে দৃশ্যতই অস্তস্তিতে ফেলে দিয়েছিলেন স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের। বার বার ধরিয়ে দেওয়ার পর, মুখ ফস্কানো কথা ঢোঁক গিললেন কোনও রকমে।
বিধানসভা ভোটে কৃষ্ণনগর উত্তর কেন্দ্র থেকে বিজেপি-র টিকিটে জেতেন মুকুল। তার পর দল ছেড়ে আবার নিজের পুরনো দল তৃণমূলে ফিরে যান। দলত্যাগ বিরোধী আইনে তাঁর বিধায়ক পদ খারিজের দাবিও তুলেছে বিজেপি। এই পরিস্থির মধ্যেই শুক্রবার সকালে কৃষ্ণনগর যান মুকুল। নিজের বাসভবন থেকে পুরসভায় গিয়ে কাউন্সিলরদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তার পর সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন। সেখানে তাঁর হাত ধরে কৃষ্ণনগরে বিজেপি-র জয় নিয়ে প্রশ্ন করেন এক সাংবাদিক। জানতে চান, কৃষ্ণনগর থেকেই কি রাজ্যে সাংগঠনিক প্রভাব বিস্তার করেছিল বিজেপি? জবাবে মুকুল বলেন, ‘‘সামগ্রিক ভাবে কৃষ্ণনগরে মানুষের আশীর্বাদ সঙ্গে ছিল। তারই ফল মিলেছে।’’ একটু বেসুরো শুনতে লাগছিল তখনই। এর পর তিনি সরাসরি বলে বসেন, ভোট হলে বিজেপি-ই জিতবে, তৃণমূল পর্যুদস্ত হবে।
রাজ্যে দ্রুত বিধানসভা উপনির্বাচন চেয়ে শুক্রবারই মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকে কাছে তদ্বির করেছে তৃণমূল। সে নিয়ে জানতে চাইলে মুকুল বলে বসেন, ‘‘ভারতীয় জনতা পার্টির পক্ষ থেকে আমি বলতে পারি, তৃণমূল পর্যুদস্ত হবে এবং এই কৃষ্ণনগরে নিজেদের স্বমহিমায় নিজেদের প্রতিষ্ঠা করবে বিজেপি নিজের ক্ষমতায় নিজেকে প্রতিষ্ঠা করবে।’’ মুকুলের মন্তব্যে অস্বস্তিতে পড়ে যান তাঁর সঙ্গে থাকা স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। চার পাশ থেকে তাঁরা ধরিয়ে দেন, ‘‘দাদা ওটা তৃণমূল হবে।’’ তাতে ভুল শুধরে নিয়ে মুকুল বলেন, ‘‘তৃণমূল কংগ্রেস হেরে যাবে মানে নিজস্ব ভূমিকায় ফিরে আসবে। নিজের ক্ষমতায় নিজেকে প্রতিষ্ঠা করবে।’’
মুকুল তাহলে বিজেপি-র পরাজয়ই চাইছেন তো? প্রশ্ন করেন এক সাংবাদিক। জবাবে তিনি বলেন, ‘‘নিঃসন্দেহে। বিজেপি-র অস্তিত্ব থাকবে না।’’
নব্বইয়ের দশকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলের সূচনা করেন মুকুল। প্রায় দু’দশক তৃণমূলে থাকার পর ২০১৭-র নভেম্বরে বিজেপি-তে নাম লেখান। পরবর্তী কালে দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতিও নিযুক্ত হন। বিজেপি-র টিকিটেই এ বছর নীলবাড়ির লড়াইয়ে নাম লেখান মুকুল। কিন্তু ভোট মিটতেই, গত ১১ জুন ফের তৃণমূলে ফিরে আসেন। বর্তমানে তৃণমূলের শীর্ষনেতাদেরই এক জন মুকুল। তাই দলের নাম নিতে গিয়ে তাঁর মতো নেতার কী করে ভুল হয়, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। তৃণমূলে ফিরে এলেও, মনের কোঠা থেকে এখনও গেরুয়া স্মৃতি ঝেড়ে ফেলতে পারেননি বলে কটাক্ষও শুরু হয়ে গিয়েছে নেটমাধ্যমে।