প্রতীকী ছবি।
জেলার দক্ষিণে মতুয়া গড়ে তৃণমূল ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে বলে রাজনৈতিক মহলের খবর। বিধানসভা ভোটেও তার ছাপ স্পষ্ট। তৃণমূল-পন্থী মতুয়া সংগঠনের জেলা সভাপতিকে দু’ বছর আগে কৃষ্ণগঞ্জের উপনির্বাচনে প্রার্থী করা হলেও, বিধানসভায় প্রার্থী করা হয়নি। সেই প্রমথরঞ্জন বসুকেই এ বার জেলার দক্ষিণে দলের সভাপতি করে সেই ক্ষতেই প্রলেপ দেওয়ার চেষ্টা করছে শাসকদল।
মতুয়া-অধ্যুষিত এলাকায় ক্রমশ শক্তি বাড়়াচ্ছে বিজেপি। নদিয়ার মতুয়া গড়ে গেরুয়া শিবিরের এই উত্থান শাসক দলের কাছে অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠেছে। দু’ বছর আগের লোকসভা ভোটের মতই গত বিধানসভা ভোটেও কল্যানী, কৃষ্ণগঞ্জ, রানাঘাট উত্তর-পূর্ব, রানাঘাট দক্ষিণের মতো বিধানসভার পাশাপাশি হরিণঘাটা, চাকদহের মত জায়গাতেও পিছিয়ে পড়েছে তৃণমূল। অথচ, দল ক্ষমতায় আসার পরে বছর কয়েক আগে পর্যন্তও জেলার মতুয়া-প্রধান এলাকায় দাপট ছিল তৃণমূলই। লোকসভা ভোটের আগে বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাস খুন হওয়ার পরে মতুয়া এলাকায় শাসক দলের দাপটের চিত্র অনেকটাই বদলে যায়। লোকসভা ভোটের সময়েই রানাঘাট লোকসভায় বিপুল ভোটে জয় পায় বিজেপি। কৃষ্ণগঞ্জের উপনির্বাচনেও তারা জেতে। আবার মতুয়া-অধ্যুষিত এলাকাগুলিতেও বড় ব্যবধানে এগিয়ে যায় বিজেপি। বিধানসভা ভোটেও তা বজায় ছিল। এই কয়েক বছরে মতুয়া মন পাওয়ার জন্য চেষ্টার কসুর করেনি তৃণমূল, বিজেপি কেউই। নাগরিকত্ব কে নিয়েও নিজেদের মতো করে মতুয়াদের পাশে টানার চেষ্টা হয়েছে দুই তরফেই। দু’ বছর আগের কৃষ্ণগঞ্জ বিধানসভার উপনির্বাচনে তৃণমূলপন্থী মতুয়া সংগঠনের জেলা সভাপতি প্রমথরঞ্জন বসুকে প্রার্থী করে তৃণমূল। তিনি হেরে যান। সেই বছরেই লোকসভার নির্বাচনে রানাঘাটে মতুয়া পরিবার থেকে আসা মুকুটমনি অধিকারীর নাম ঘোষণা করে বিজেপি। যদিও সরকারি চাকরি-সংক্রান্ত জটিলতায় তিনি শেষ পর্যন্ত প্রার্থী হতে পারেননি। এর কিছু দিন পরেই তাঁকে বিজেপি-পন্থী মতুয়া সংগঠনের নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি করা হয়। বিধানসভা ভোটে কৃষ্ণগঞ্জে আর প্রমথবাবুকে প্রার্থী করেনি তৃণমূল। কিন্তু মুকুটমণিকে রানাঘাট দক্ষিণে প্রার্থী করে বিজেপি এবং তিনি জয়ী হন। বিধানসভায় প্রমথকে প্রার্থী না-করাকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের একাংশ ক্ষুব্ধ হয়েছিল। দলের নির্বাচনী প্রচারেও সে ভাবে তাঁকে দেখা যায়নি। যদিও প্রমথর দাবি, “সেই সময়ে স্ত্রী অসুস্থ থাকায় চিকিৎসার জন্য কলকাতায় ছিলাম। দলের সিদ্ধান্ত নিয়ে আমার বা অন্য কারও ক্ষোভের কথা আমার জানা নেই। আর মতুয়ারা সবাই বিজেপির দিকে চলে গিয়েছেন এই প্রচারও ঠিক নয়।’’ জেলায় দলের সংগঠনকে ফের দু’ভাগে ভাগ করেছে তৃণমূল। নদিয়ার দক্ষিণভাগে জেলা সভাপতির সঙ্গে নিয়োগ করা হয়েছে এক জন চেয়ারম্যানও। এবং সেই পদেই আনা হয়েছে প্রমথকে। জেলার দক্ষিণে মতুয়া-প্রভাব বেশি। মতুয়া ক্ষতে প্রলেপ দিতেই এই কৌশল বলে অনেকে মনে করছেন। এই সমস্ত এলাকায় ইতিমধ্যে মতুয়াদের মধ্যে জনসংযোগ, সম্মেলনের পরিকল্পনা নিয়েছে তৃণমূল। মতুয়া গড়ে জমি শক্ত করতে তৃণমূল ঝাঁপাচ্ছে।