মুর্শিদাবাদে জোড়া জয়ে উচ্ছ্বাস তৃণমূল কর্মীদের। —নিজস্ব চিত্র।
জঙ্গিপুর এবং শমসেরগঞ্জ মুর্শিদাবাদ জেলার এই দুই আসনই বিপুল ব্যবধানে জিতল তৃণমূল। তৃণমূল প্রার্থী তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী জাকির হোসেন জঙ্গিপুর কেন্দ্র থেকে জিতেছেন ৯২ হাজার ৩৬৫ ভোটে। শমসেরগঞ্জ থেকে তৃণমূল প্রার্থী আমিরুল ইসলাম জিতেছেন ২৬ হাজার ১১১ ভোটে। দুই প্রার্থীই এই নিয়ে দ্বিতীয় বার জিতলেন ওই আসন দু’টিতে। সব মিলিয়ে মুর্শিদাবাদ জেলার মোট ২২টি বিধানসভা আসনের মধ্যে এখন ২০টি আসনই তৃণমূলের দখলে।
রাজ্যে বিধানসভা ভোটের আগে শমসেরগঞ্জের কংগ্রেস প্রার্থী প্রয়াত হন। এর ফলে ওই কেন্দ্রে সেই সময় ভোট হয়নি। জঙ্গিপুর কেন্দ্রেও বাম প্রার্থীর মৃত্যুর ফলে ভোট স্থগিত হয়ে যায়। কংগ্রেসের হাত ঘুরে এক সময় আরএসপি-র দখলে গিয়েছিল জঙ্গিপুর। তবে ২০১৬ সালে প্রথম ওই কেন্দ্র জিতে নেন জাকির। এ বারও তার ব্যতিক্রম হল না। বরং আগের বার ২০ হাজারের সামান্য বেশি ব্যবধান এ বার বেড়েছে সাড়ে চার গুণ। জাকির বিজেপি প্রার্থী সুজিত দাসের থেকে ৯২ হাজার ৩৬৫টি ভোট বেশি পেয়েছেন। জাকির পেয়েছেন মোট এক লক্ষ ৩৫ হাজার ৯৮৫টি ভোট। বিজেপি প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোট ৪৩ হাজার ৬২০। এ ছাড়া আরএসপি প্রার্থী জানে আলম মিয়ার প্রাপ্ত ভোট আট হাজার ৯৬৭। বিপুল জয়ে উচ্ছ্বসিত জাকির বলছেন, ‘‘এই রায় জনগণ দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের ধারায় মানুষ বিশ্বাস রেখেছেন। বিজেপি যে মিথ্যা বলে এটা তার প্রমাণ। আমরা সকলে মিলে চেষ্টা করেছি। সেই চেষ্টারই ফল এটা।’’
জঙ্গিপুরে জাকিরের জনসংযোগের কাছে ম্লান বিজেপি। পরাজিত বিজেপি প্রার্থী সুজিতের অভিযোগ, ‘‘তৃণমূল বুথ দখল করে পরিযায়ী শ্রমিকদের ভোট দিয়েছে। যাঁরা আমাদের ভোট দিয়েছেন তাঁরা অর্থ এবং পেশিশক্তির কাছে বিক্রি হয়ে যাননি।’’ ঘটনাচক্রে গত ৩০ সেপ্টেম্বর ভোট চলাকালীন নৌকায় চড়ে গান গাইতে দেখা গিয়েছিল বিজেপি প্রার্থীকে। তাঁর দাবি, ‘‘বেলা ১১টার পরই ভোট লুঠ হয়েছে।’’
শমসেরগঞ্জ আসনটি দ্বিতীয় বারের জন্য জিতেছেন তৃণমূল প্রার্থী আমিরুল। তার আগে ওই আসনটি ছিল বামেদের দখলে। ২০১৬ সালের থেকে তাঁর জয়ের ব্যবধান বেড়েছে অনেকটা। এ বার তিনি জিতেছেন ২৬ হাজার ১১১ ভোটে। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেসের জইদুর রহমান পেয়েছেন ৭০ হাজার ন’টি ভোট। এই কেন্দ্রে তৃতীয় স্থানে বিজেপি প্রার্থী মিলন ঘোষ। তিনি পেয়েছেন ১০ হাজার ৭৭৭টি ভোট। ওই কেন্দ্রেই সিপিএম প্রার্থী মহম্মদ মোদাসসর হোসেন পেয়েছেন ছ’হাজার ১৪৫টি ভোট। আমিরুল বলছেন, ‘‘আমরা জিতব বলেছিলাম। মানুষ উন্নয়নের পক্ষে ভোট দিয়েছেন।’’ জয়ের গন্ধ পেতেই উৎসবের আবহ তৈরি হয় দু’টি কেন্দ্রের তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে।
শমসেরগঞ্জের লড়াইয়ে প্রথমে যোগ দিতে চাননি কংগ্রেস প্রার্থী। তবে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর অনুরোধে রাজি হন তিনি। জইদুরের সাফাই, ‘‘আমি মাত্র সাত দিন প্রচারের সুযোগ পেয়েছি। তবে মানুষ যে রায় দিয়েছেন তা আমরা মাথা পেতে নিয়েছি। কী কারণে এই পরাজয় তা আমরা বিবেচনা করে দেখব।’’ জঙ্গিপুরে তৃতীয় স্থানে থাকা বিজেপি প্রার্থীর মত, ‘‘আমাদের মানুষ কেন ভোট দেননি তা সাংগঠনিক ভাবে বিশ্লেষণ করা হবে।’’ মুর্শিদাবাদের দু’টি কেন্দ্রেই পিছনে চলে গিয়েছে বাম শক্তি। শমসেরগঞ্জের সিপিএম প্রার্থী মোদাসসর হোসেনের উপলব্ধি, ‘‘আমাদের কাছ থেকে মানুষ সরে গিয়েছেন। ভবিষ্যতে আমাদের ভুল শুধরে নিয়ে সংগঠনে জোর দিতে হবে।’’