সিবিআই-এর প্রতিনিধি দলের গাড়ির চাকার হাওয়া খুলে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। নিজস্ব চিত্র
নদিয়ার চাপড়ায় বিজেপিকর্মী ধর্ম মণ্ডলের মৃত্যুর ঘটনায় দু’জনকে গ্রেফতার করল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিবিআই)। ধৃতদের নাম বিজয় ঘোষ ও অসীমা ঘোষ। ‘ভোট পরবর্তী হিংসা’র অভিযোগে ধৃত দু’জনেরই নাম ছিল এফআইআর-এ। শনিবার সিবিআই-এর প্রতিনিধি দল গিয়েছিল নদিয়ার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকা চাপড়া থানার হৃদয়পুর গ্রামে। সেখান থেকেই বিজেপিকর্মীকে পিটিয়ে মারায় অভিযুক্ত দু’জনকে গ্রেফতার করে তারা।
কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে ‘ভোট পরবর্তী হিংসার’ তদন্ত করতে শনিবার হৃদয়পুর গ্রামে প্রয়াত বিজেপিকর্মীর বাড়িতে যায় সিবিআই। গত ১৪ মে দুষ্কৃতীদের হাতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৫৬ বছরের ধর্ম। গুরুতর আহত অবস্থায় প্রথমে তাঁকে শক্তিনগর হাসপাতাল, পরে অবস্থার অবনতি হলে কলকাতার এনআরএস হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ১৬ মে মৃত্যু হয় তাঁর।
বিজেপি-র অভিযোগ, ভোটের সময় সক্রিয় ভাবে দলের সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে ধর্মকে খুন করেছে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। এই ঘটনায় মৃতের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে প্রথমে ৮ জনের নামে খুনের অভিযোগ দায়ের করা হয়। পরে পরিবারের সদস্যদের গোপন জবানবন্দিতে আরও ১৫ জনের নাম উঠে আসে। সেই মামলার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে শনিবার চাপড়ায় যায় সিবিআই-এর প্রতিনিধি দল।
অন্য দিকে, শনিবার সকালেই হৃদয়পুর গ্রামে পঞ্চায়েত অফিসে দুয়ারে সরকারের শিবিরে ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্পের ডেটা এন্ট্রির কাজ চলছিল। কাজ করছিলেন এক জন ডেটা অপারেটর। হাজির ছিলেন নাইট গার্ডও। অভিযোগ, সেই সময় সিবিআই-এর প্রতিনিধি দল স্থানীয় প্রশাসনকে সঙ্গে না নিয়ে পঞ্চায়েত অফিসে ঢুকে পড়ে। সিবিআইয়ের দাবি, ধর্মের খুনের মামলায় পঞ্চায়েতের নাইট গার্ডের নাম রয়েছে। সিবিআই তাঁকে বেশ কিছু ক্ষণ জেরা করে। অভিযোগ, সেই সময় রাজ্য সরকারের ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্প নিয়ে কটাক্ষ করেন এক সিবিআই আধিকারিক। তা জানাজানি হতেই তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা পঞ্চায়েত অফিসে ভিড় করেন। সিবিআই অফিসারদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা। সিবিআই-এর প্রতিনিধি দলের গাড়ির চাকার হাওয়া খুলে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। পরে পুলিশ এসে কেন্দ্রীয় দলকে উদ্ধার করে।
ধর্মের ছেলের দাবি, তৃণমূলের গুন্ডা বাহিনী তাঁর বাবাকে বাড়ি থেকে বার করে মারধর করেছিল। বিজেপি করার কারণেই তাঁর বাবাকে পরিকল্পিত ভাবে খুন করা হয়েছে বলে দাবি। তাঁর বাবা এক জন সক্রিয় বিজেপি কর্মী ছিলেন বলেও দাবি করেছেন তাঁ ছেলে। তিনি বলেন, ‘‘পুলিশি তদন্তে পরিবার খুশি নয়। প্রথম যখন অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চাপড়া থানায় যাওয়া হয়, তখন অভিযোগ নিতে অস্বীকার করেছিল পুলিশ। মূল অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা কালু শেখ, মহেশ মণ্ডল, লাল্টু ঘোষ, উজ্জ্বল ঘোষ, বিভাস বিশ্বাস, কিঙ্কর বিশ্বাসকে পুলিশ এখনও গ্রেফতার করেনি। সিবিআই-কে পুরো ঘটনা জানিয়েছি। সিবিআই সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।’’