জঙ্গিপুরের বাসিন্দা বাদশা খান। নিজস্ব চিত্র।
বাড়ির সকলেই পাঁচ ফুট দুই-তিন ইঞ্চির মধ্যে। মুর্শিদাবাদপুর জঙ্গিপুর শহরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের রঘুনাথপুর মাঠপাড়ার বাসিন্দা বাদশা খানও বছর কুড়ি বয়স পর্যন্ত ওই রকমই লম্বা ছিলেন। কিন্তু বাইশ তেইশ বছর বয়স থেকে ক্রমশ লম্বা হতে শুরু করেন। সম্প্রতি বছর দু’য়েক দ্রুত লম্বা হয়ে এখন ৬ ফুট ৪ ইঞ্চি।
এমন উচ্চতা অবশ্য অনেকেরই দেখা যায়। কিন্তু চিকিৎসকেরা বলছেন, এই বয়সে হঠাৎ লম্বা হতে শুরু করা অস্বাভাবিক। এর জন্য হরমোনের চিকিৎসা প্রয়োজন। না হলে, ভবিষ্যতে তিনি আরও লম্বা হবেন, আরও নানা সমস্যায় পড়বেন।
জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপার সায়ন দাস বলছেন, “এই ধরনের রোগকে জ়াইগ্যানটিজ়ম বলা হয়। গ্রোথ হরমোনের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির ফলে উচ্চতা বৃদ্ধি ঘটে। সাধারণ ভাবে ১৯/২০ বছর পর্যন্ত এই বৃদ্ধি ঘটে। এই রোগীর ক্ষেত্রে কোনও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সাহায্য নেওয়া দরকার। সাধারণ হাসপাতালে তাঁর কোনও চিকিৎসা সম্ভব নয়।”
শারীরিক অসুস্থতা ইতিমধ্যেই বাদশাকে সমস্যায় ফেলেছে। বাবা আসগর শেখ রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। তিন ছেলের বড় বাদশা। বাবার কথায়, ‘‘বছর ১৪ বয়সে অসুস্থ হয়ে পড়ে বাদশা। তখন নবম শ্রেণির ছাত্র। স্কুলের চেষ্টায় ছেলেকে নিয়ে যাওয়া হয় কলকাতার একটি সরকারি হাসপাতালে। মাথায় অপারেশন হয় সেখানেই। তার পর থেকেই ছেলের উচ্চতা ক্রমশ বাড়তে থাকে। শুধু লম্বা হয়ে যাচ্ছে বলে নয়, ছেলের শরীরটাও ভাল নেই। মাঝে মধ্যে ব্যথার কথা বলে।”
বাদশা বলছেন, “ঠিক মতো ঝুঁকতে গেলে সমস্যা হয়। কখনও ধাবায় কাজ করেছি, কখনও কোনও হোটেলে নিরাপত্তা কর্মীর কাজও করেছি। কিন্তু সমস্যায় পড়ে ছেড়ে দিতে হয়েছে। চিকিৎসা এখন আর করা হয় না। কিন্তু সংসারটা তো চালাতে হবে। আরও লম্বা হয়ে গেলে কী করব জানি না।’’
মা রুবিনা বিবি অবশ্য ছেলের এই কষ্টের কথা আর বলতে চান না। বলছেন, “তাতে তো ছেলের কষ্টের লাঘব হবে না। মনে আরও কষ্ট বাড়বে।”