প্রতীকী ছবি।
সবুজ মাঠে সাদা চুনের দাগ বরাবর ছুটছে ছেলেটা। ক্রাচে ভর দিয়েও অন্যদের সঙ্গে সমানে পাল্লা টানা সেই দৌড় ছেলেটাকে তাহেরপুর নেতাজি উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ থেকে পৌঁছে দিয়েছিল বুসানে প্যারা এশিয়ান গেমসের মাঠে। সেটা ২০০২ সাল। সোনা জিতে গোটা দেশকে গর্বিত করেছিলেন নদিয়ার সোমনাথ মালো।
তিন বছর বয়সে পোলিয়ো আক্রান্ত সোমনাথ সব প্রতিবন্ধকতাকে নস্যাৎ করে আন্তর্জাতিক স্তরে দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন। স্কুল জীবন থেকে অ্যাথলিট হওয়ার স্বপ্ন। নিয়মিত অনুশীলনে জেলাস্তরে আসতে শুরু করে সাফল্য। ১৯৯৮ সালে শুরু স্পোর্টস অথরিটি অব ইণ্ডিয়ায় (সাই) প্রশিক্ষণ নেওয়া এবং জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতায় যোগদাজান। চূড়ান্ত সাফল্য বুসান প্যারা এশিয়াডে সোনা। ২০০৬-এ কুয়ালা লামপুরে প্যারা এশিয়ান গেমসেও নামেন সোমনাথ। তবে পদক আসেনি।
নদিয়া জেলাসদরে শ্রীরামকৃষ্ণ পাঠাগার ১৯৫৫-৫৬ সালে গড়ে ওঠা। অন্য কর্মকাণ্ডের সঙ্গে অ্যাথলেটিক্সে নজির স্থাপন করেছে তারা। সম্পাদক চন্দন সরকার জানান, সাতের দশকে রাজ্যস্তরের স্প্রিন্টার প্রণব সরকার, লং জাম্পে শেফালী বিশ্বাস, অনিরুদ্ধ পালচৌধুরী বা ইউনিভার্সিটি ব্লু অপরাজিত পালচৌধুরীর গড়া নানা রেকর্ডের পাশাপাশি বর্তমান প্রজন্মের অ্যাথলিটদের কথা। লোটাস বিশ্বাস, রেজওয়ানা মল্লিক হেনা বা সাবিনা খাতুনদের একের পর এক রেকর্ডের দৌলতে গত তিন বছর ধরে শ্রীরামকৃষ্ণ পাঠাগার নদিয়া জেলা অ্যাথলেটিক্সে তৃতীয় স্থান ধরে রেখেছে।
দক্ষিণ নদিয়ার বিরহী থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে তুলনায় অপরিচিত নাম সোনাখালি। অ্যাথলেটিক্স দুনিয়ায় ক্রমশ পরিচিত হয়ে উঠছে সোনাখালি বাকসা ওয়াইএমএ। ক্লাবের প্রতিষ্ঠা ১৯৮০ সালে হলেও অ্যাথলেটিক্সে পা রাখা মাত্র বছর সাতেক। এরই মধ্যে ২০২১ সালে জেলায় চতুর্থ স্থানে উঠে এসেছে তারা। জনা পঞ্চাশ ছেলেমেয়ে যোগদান করেছিল এ বারের জেলা প্রতিযোগিতায়। তার মধ্যে জনা ছয়েক প্রথম, জনা পাঁচেক দ্বিতীয় এবং ১১ জন তৃতীয় হয়েছেন নানা ইভেন্টে। ক্লাবের সহ-সম্পাদক আরিফুল হক বলেন, “অনূর্ধ্ব ২০ বছরের মহিলা লং জাম্পে বেবি খাতুন নতুন রেকর্ড করেছেন ৫.০৭ মিটার। বেবি বছর দুয়েক আগে স্কুল ন্যাশনাল মিটে সপ্তম হয়েছিল এবং রিলায়েন্স ন্যাশনাল মিটে রূপো জিতেছিলেন। সুস্মিতা সরকার শটপাটে অনূর্ধ্ব ১৪ বছর এবং পরে অনূর্ধ্ব ১৬ বছর বিভাগে রেকর্ড করে ১০.১৩ মিটার ছুড়ে।”
ডিস্ট্রিক্ট স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি গৌতম বিশ্বাস বলেন, “আমরা চেষ্টা করি প্রতিটি জ়োনকে কিছু আর্থিক সাহায্য করতে। যদিও নিজেরাই বড় আর্থিক সঙ্কটে আছি। করোনা কালে বন্ধ হয়ে গিয়েছে যাবতীয় সরকারি সাহায্য। বেসরকারি স্পনসর কোনও দিনই সাহায্য করে না আমাদের। তবু অদম্য জেদ আর ইচ্ছাশক্তিতে নদিয়ার অ্যাথলেটিক্স চর্চা এগিয়ে চলেছে।”