প্রতীকী ছবি।
প্রতিদিন একটু একটু করে পাড় ভাঙছে কংগ্রেসের প্রাক্তন গড় মুর্শিদাবাদে। আর পাড় গড়ছে তৃণমূল। আগামী সপ্তাহে নাকি আরও বড় ভাঙনের অপেক্ষায় বহরমপুর শহর কংগ্রেস, এমনটাই দাবি খোদ কংগ্রেসেরই অন্দরের। আর সেই ভাঙনের আশঙ্কা জেনেও তা আগলানোর কোনও লক্ষণ নেই দলের এই মূহুর্তের জেলা নেতাদের, খেদ এক প্রবীণ কংগ্রেস নেতার। তিনি বলেন, “ভাঙন রুখতে বালির বাঁধ দিয়ে বিপর্যয় মোকাবিলায় নেমেছে জেলা কংগ্রেস। তার ফল যা হবার তাই হচ্ছে।”
ইতিমধ্যে কার্তিক সাহা, আশিস দে’র মতো অপেক্ষাকৃত তরুণ কংগ্রেস নেতারা তৃণমূলের ছাতার তলায় আশ্রয় নিয়েছে। শোনা যাচ্ছে তাঁদেরই ইশারায় আগামী দিনে ঘাসফুলের প্রাসাদে প্রবেশ করবেন এক ঝাঁক শহর কংগ্রেসের নেতা নেত্রী। তাঁদের মধ্যে পোড় খাওয়া এক কাউন্সিলরও আছেন। কিন্তু কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটিতে এমন বিপর্যয়ের কারণ কি? নেতাদের একে অপরের প্রতি অবিশ্বাস আর ‘দালালি’ এর বড় কারণ বলছেন কংগ্রেসেরই এক তরুণ নেতা।
দিন পনেরো ষোলো আগে শহর সভাপতি কার্তিক সাহার দলবদলের দিন শহর সভাপতি হিসেবে অরিন্দম দাস ওরফে পাপ্পুর নাম ঘোষণা করে জেলা কংগ্রেস। যিনি ইতিমধ্যে তৃণমূলের ঘর দুয়ার ঘুরে ফের কংগ্রেসে ঢুকেছেন। আজও যাঁর সঙ্গে তৃণমূলের সখ্য পুর শহর বহরমপুরের অজানা নয়। আর এখানেই আপত্তি প্রায় বিনা সুতোয় লেগে থাকা সেই সব কংগ্রেস নেতাদের।
তাঁদের বক্তব্য, “দলে কি পাপ্পু ছাড়া আর কেউ ছিল না? আমরা যাঁরা কংগ্রেসের পতাকা বুকে নিয়ে পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখি তারা কি পারতাম না শহর কংগ্রেস চালাতে?”
অথচ অধীর ঘনিষ্ঠ অরিন্দম দায়িত্ব নিয়ে অঙ্গীকার করেছিলেন “সংগঠনকে চাঙ্গা করতে দলের সবাইকে নিয়ে কাজ করব।” সে কাজ যে এখনও তিনি শুরু করতে পারেননি তার দিকে দলের বিক্ষুব্ধদের এই অভিযোগের আঙুলই তার প্রমাণ।
অরিন্দমের পক্ষ নিয়ে জেলা কংগ্রেস মুখপাত্র জয়ন্ত দাস বলেন, “নতুন সভাপতি হয়েছে তাঁকে সময় দিতে হবে। সেও চেষ্টা করছে শহরের কর্মীদের নিয়ে চলতে।”
অরিন্দম যদি শহর কংগ্রেস ভাঙার একটা কারণ হয় তাহলে আর একটি কারণ অবশ্যই বহরমপুরের প্রাক্তন পুর প্রধান নীলরতন আঢ্যের সঙ্গে দলের প্রকাশ্য যোগাযোগ। অথচ নীলরতন সরকারিভাবে তৃণমূলও ছাড়েননি আবার কংগ্রেসেও ঢোকেননি। যদিও নীলু কাঁটা সরিয়ে বিক্ষুব্ধদের মন রাখতে অধীরের নির্দেশে জেলা কংগ্রেস মুখপাত্র জয়ন্ত দাস পাল্টা জানিয়েছিলেন “নীলরতন আঢ্যরা একদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘উন্নয়নের শরিক’ হতে কংগ্রেস ছেড়েছিল। আজ সেখানে গুরুত্ব না পেয়ে অধীর চৌধুরীর শরিক হতে চাইছেন। কোনও বিতর্কিত নেতাদের পুনর্বাসন শিবির নয় কংগ্রেস।” যদিও তাতে মন গলেনি বিক্ষুব্ধদের।
চলতি বছর সম্ভাব্য পুরভোটের আগে কংগ্রেসের এই ভাঙনের ফায়দা তুলতে ইতিমধ্যেই প্রস্তুত তৃণমূল ও বিজেপি। আর দলের পুরনো সৈনিকদের হারিয়ে সেই পুরযুদ্ধে ব্যাকফুটেই থাকবে কংগ্রেস, দাবি রাজনীতির কারবারীদের। অথচ কংগ্রেসের হাতেই বহরমপুর শহরের পুনর্জন্ম হয়েছিল, আজ যা মিথ হয়ে আছে রাজ্যেও।
রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী ও বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তী বলেন, “যা দেখছেন তা উপর থেকে দেখছেন। কংগ্রেসের ভিত এত দুর্বল নয়। যাঁরা এতদিন দলে থেকে তৃণমূলকে তুলোধনা করেছিলেন তাঁরা কি নীতি আদর্শ মেনে যাচ্ছেন? কংগ্রেস সর্বশক্তি দিয়ে পুরভোটে লড়াই করবে। মানুষের ভরসাও কংগ্রেসের উপরে আছে।’’