ফাইল চিত্র।
কেউ বলছেন, সুতো ছিঁড়ে গেলে তা আবার জোড়া লাগানো কঠিন কাজ, আবার কারও মত, দুর্নীতিকে ঢাকা দিতে এখন সৌজন্যতাকেও রাজনৈতিক ঢাল হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। কেউ-কেউ আবার একে নিছক সৌজন্যতা বলেই ব্যাখ্যা করছেন।
সম্প্রতি মুকুল রায়কে কেন্দ্র করে ফের নদিয়ার রাজনীতিতে বেশ আলোড়ন পড়েছে। হাসপাতালে অসুস্থ মুকুল রায়ের স্ত্রীকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দেখতে গিয়েছিলেন। তারপরেই মুকুল পুত্র শুভ্রাংশু প্রশংসাসূচক বাক্যে অভিষেককে ভরিয়ে দিয়েছেন। সব মিলিয়ে রায় পরিবারের সঙ্গে তৃণমূলের বরফ গলছে কিনা সে দিকেই নজর রাজনৈতিক মহলের, বিশেষ করে কৃষ্ণনগরের। কারণ, কৃষ্ণনগর-উত্তর থেকেই বিজেপির টিকিটে জিতে মুকুল রায় বিধায়ক।
নদিয়ার সঙ্গে মুকুল রায়ের রাজনৈতিক সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। তৃণমূলে থাকাকালীন দীর্ঘদিন তিনি এই জেলায় দলের সংগঠন দেখে এসেছেন। অনেক নেতার সঙ্গেই তাঁর সুসম্পর্কও রয়েছে। সেই মুকুল রায়কেই কৃষ্ণনগর-উত্তরে প্রার্থী করেছিল বিজেপি। নির্বাচনে অনায়াস জয় পেয়েছেন, তবে সেই সময় থেকেই নিজেকে অনেকটা গুটিয়েই রেখেছেন। এ বার সেখানে সাম্প্রতিক ঘটনা পরম্পরায় রাজনৈতিক মহলের নজর রয়েছে। বিজেপি থেকে মুকুল ‘ঝরে যাওয়া’র আশঙ্কা অবশ্য ভোটের ফলের পর থেকেই একাধিক বার একাধিক মহল থেকে উঠেছে। নতুন করে আবার জল্পনা দেখা দিলেও বিজেপি এবং তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্বের অনেকে এখনই তা মানছেন না।
বিজেপির নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলার মিডিয়া কনভেনর সন্দীপ মজুমদার বলেন, “রাজনৈতিক ভেদাভেদ মুছে এক জন অসুস্থ মানুষকে আরেকজন দেখতে যাবেন, গণতন্ত্রের সার্থকতা তো এখানেই। এটাই স্বাভাবিক।” তবে একে দুর্নীতির ইস্যু ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা বলেই ব্যাখ্যা করছেন যুব মোর্চার নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সৈকত সরকার। তিনি বলেন, “এটা খুব স্বাভাবিক যে, এক জন অসুস্থ মানুষের খোজ অন্যরা নেবেন। এর আগেও তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বামফ্রন্ট বা বিজেপি নেতাদের সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়েছে। তাঁরা কেউ অসুস্থ হলে তিনি হাসপাতালে দেখতে গিয়েছেন। এখন দুর্নীতির নানা বিষয়কে প্রচার থেকে ঘুরিয়ে দিতে একে সামনে আনা হচ্ছে।”
জেলা তৃণমূলের কো-অর্ডিনেটর তথা কালীগঞ্জের বিধায়ক নাসিরুদ্দিন আহমেদ বলেন, “অসুস্থের খোঁজ নেওয়াটা সৌজন্যের মধ্যে পড়ে। এর মধ্যে রাজনৈতিক সমীকরণ খুঁজতে যাওয়া ভুল হবে। পরিবার থেকে কেউ বেরিয়ে গেলে পরে আর সেই সুতো জোড়া লাগে না।” নাকাশিপাড়ার বিধায়ক তৃণমূলের কল্লোল খান বলেন, “এটাই তো গণতন্ত্র। অন্য রাজনৈতিক দলের হলেও কেউ অসুস্থ হলে তাঁর খোঁজ নেওয়াটাই সুস্থ গণতন্ত্রের লক্ষণ।”