মুর্শিদাবাদে কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। —ফাইল চিত্র।
প্রায় সপ্তাহব্যাপী অশান্তির পর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে মুর্শিদাবাদ। জঙ্গিপুর মহকুমার সুতি, ধুলিয়ান, শমসেরগঞ্জের মতো এলাকায় রবিবার রাতে নতুন করে আর অশান্তির খবর পাওয়া যায়নি। কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা স্পর্শকাতর এলাকায় অনবরত রুটমার্চ করছে। গ্রামে গ্রামে টহল দিচ্ছে পুলিশও। যাঁরা অশান্তির আবহে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন, তাঁদের ঘরে ফেরানোর জন্য উদ্যোগী হয়েছে প্রশাসন। কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং রাজ্য পুলিশের আধিকারিকেরা এ বিষয়ে সোমবার জরুরি বৈঠক করতে পারেন।
কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে মুর্শিদাবাদের স্পর্শকাতর এলাকাগুলিতে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়। জেলার বিস্তীর্ণ অংশে এখনও ইন্টারনেট পরিষেবা নেই। জারি রয়েছে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১৬৩ ধারা। বেআইনি জমায়েতের অভিযোগে বেশ কিছু এলাকা থেকে রবিবার কয়েক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে পরিস্থিতি মোটের উপর শান্তিপূর্ণ। রবিবার দিনভর মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন এলাকায় ঘোরেন রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার। রবিবারই তিনি জানিয়েছিলেন, পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে। সাধারণ মানুষকে সতর্ক থাকার কথা বলে ‘গুজবে কান না দেওয়ার’ বার্তাও দিয়েছিলেন। কেউ কোনও সমস্যায় পড়লে অবিলম্বে পুলিশকে খবর দেওয়ার কথা বলা হয়।
জঙ্গিপুর মহকুমায় অশান্তির মোকাবিলায় বর্তমানে ১৮ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন রয়েছে। এ ছাড়া, সীমান্ত এলাকায় রয়েছে বিএসএফ। রাজ্য পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের নিয়ে গঠিত একটি স্পেশ্যাল মনিটারিং দল নীল নকশা (ব্লু-প্রিন্ট) তৈরি করে স্পর্শকাতর তিনটি থানা এলাকায় নিয়মিত টহলদারি চালাচ্ছে। শমসেরগঞ্জের দু’টি, ধুলিয়ান ও সুতি এলাকার একটি করে, মোট চারটি এলাকাকে অতি স্পর্শকাতর হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেখানে রয়েছে বাড়তি নজরদারি। রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের আধিকারিকেরাও জেলায় রয়েছেন। অশান্তিতে কোনও উস্কানি দেওয়া হচ্ছে কি না, তাঁরা দেখছেন।
পুলিশ সূত্রে খবর, সুতি থানা এলাকায় তিন কোম্পানি, শমসেরগঞ্জ এবং ধুলিয়ানে সাত কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী রয়েছে। ধুলিয়ান পুর এলাকায় পাড়ার মোড়ে মোড়ে চার থেকে ছ’জন সশস্ত্র জওয়ান রয়েছেন। উত্তরবঙ্গের সঙ্গে সংযোগকারী জাতীয় সড়কেও তিন কোম্পানি আধাসেনা মোতায়েন রয়েছে।
রবিবার থেকে বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায় ও রাজনৈতিক দলগুলিকে নিয়ে শান্তি বৈঠক হয়েছে মুর্শিদাবাদের থানাগুলিতে। বুথভিত্তিক শান্তি কমিটি গঠন করা হয়েছে পঞ্চায়েত স্তরে। জেলাশাসক রাজর্ষি মিত্র অশান্তিকবলিত এলাকাগুলি পরিদর্শন করেছেন। সূত্রের খবর, কোথায় কত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তার পরিমাণ নির্দিষ্ট করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে পারে জেলা প্রশাসন।
গত মঙ্গলবার থেকে মুর্শিদাবাদের একাংশ অশান্তি শুরু হয়। সংশোধনী ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে জঙ্গিপুরে অশান্তি ছড়ায়। ক্রমে সেই আঁচ ছড়িয়ে পড়ে সুতি, ধুলিয়ান, শমসেরগঞ্জ এবং ফরাক্কা থানার কিছু এলাকায়। পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে পড়েছিল যে, শুক্রবার গুলি চালাতে হয় পুলিশকে। ঘটনাস্থলে যান ডিজিপি-সহ রাজ্য পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তারা। শান্তি বজায় রাখার বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। পুলিশ জানায়, তারা অশান্তির মোকাবিলায় গুলি চালিয়েছিল এবং দু’জন তাতে গুলিবিদ্ধ হন। তাঁরা বিপন্মুক্ত। তবে বেসরকারি সূত্রের খবর, মুর্শিদাবাদে অশান্তিতে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। কারও মৃত্যুর কথা স্বীকার করেনি প্রশাসন।