Murshidabad Situation

পুজোপার্বণের দিনে ‘হিংসা’র ভুয়ো ছবি বিজেপির পোস্টে? ‘আসল’ ঘটনাস্থল প্রকাশ করে পাল্টা পোস্ট করল রাজ্য পুলিশ

রাজ্য বিজেপির সমাজমাধ্যমের পাতায় রবিবার কিছু টুকরো টুকরো অশান্তির ছবি পোস্ট করা হয়। ঘটনাস্থল উল্লেখ না থাকলেও বিজেপির দাবি, সেগুলি বিভিন্ন পুজোপার্বণের সময়ের। বিজেপির ওই পোস্টটি গোটাটাই ভুয়ো বলে দাবি রাজ্য পুলিশের।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০২৫ ২১:১৪
(উপরে) রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার। (নীচে, বাম দিকে) বিজেপির পোস্টকে ‘ভুয়ো’ দাবি করে ‘আসল’ ঘটনাস্থল পোস্ট পুলিশের (নীচে, ডান দিকে)।

(উপরে) রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার। (নীচে, বাম দিকে) বিজেপির পোস্টকে ‘ভুয়ো’ দাবি করে ‘আসল’ ঘটনাস্থল পোস্ট পুলিশের (নীচে, ডান দিকে)। ছবি: রাজ্য পুলিশের সমাজমাধ্যম পাতা থেকে নেওয়া।

রাজ্য বিজেপির সমাজমাধ্যমের পাতায় রবিবার কিছু টুকরো টুকরো অশান্তির ছবি একত্রিত করে পোস্ট করা হয়। ওই পোস্টটি ‘ফেক’ (ভুয়ো) বলে জানিয়েছে রাজ্য পুলিশ। বিজেপির পোস্টে ঘটনাগুলি বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসবের সময়ের বলে দাবি করা হয়েছিল। এর পরেই রাজ্য পুলিশের সমাজমাধ্যমের পাতায় পাল্টা একটি পোস্ট করা হয়। রাজ্য পুলিশের দাবি, বিজেপির পোস্টটি ভুয়ো। ঘটনাগুলির বেশির ভাগ নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বিরোধী আন্দোলনের সময়ের বলে দাবি পুলিশের। যদিও ওই ছবিগুলির সত্যতা যাচাই করে দেখেনি আনন্দবাজার ডট কমশুধু তা-ই নয়, গুজব বা ভুয়ো খবর রুখতে কিছু পদক্ষেপও করেছে পুলিশ। বিশেষ নির্দেশিকা জারি করে জানানো হয়েছে, রবিবার থেকে আগামী মঙ্গলবার রাত ১০টা পর্যন্ত মুর্শিদাবাদের নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকবে। শুধু মুর্শিদাবাদ নয়, জেলা সংলগ্ন মালদহ এবং বীরভূমের বেশ কিছু এলাকাতে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধের কথা জানানো হয়েছে।

Advertisement

বিজেপির পোস্ট করা ছবিগুলির মধ্যে কোনওটিতে দেখা যাচ্ছে রাস্তায় আগুন জ্বলছে, কোনও ছবিতে আবার দেখা যাচ্ছে বিক্ষোভ চলছে। যেমন রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে একটি বিক্ষোভের দৃশ্যকে গণেশ চতুর্থীর বলে দাবি করেছে বিজেপি। পুলিশের দাবি, সেটি নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বিরোধী আন্দোলনের সময়ের। আবার সরস্বতী পুজোর সময়ের অশান্তি বলে যেটি বিজেপি দাবি করেছিল, পুলিশের দাবি সেটি উত্তরপ্রদেশের লখনউয়ে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি বিরোধী আন্দোলনের সময়ে। এমন বেশ কিছু ছবির সঙ্গে ঘটনাস্থলও উল্লেখ করেছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, কোনওটি উত্তরপ্রদেশের, কোনওটি অসমের, আবার কোনওটি কর্নাটকের ম্যাঙ্গালুরুর। যদিও বিজেপির পোস্ট করা ছবিগুলির সঙ্গে বিভিন্ন পুজোপার্বণের কথা উল্লেখ থাকলেও, সেটি কোন এলাকার তা উল্লেখ নেই।

বিজেপির পোস্টকে ভুয়ো দাবি করে পাল্টা পোস্ট রাজ্য পুলিশের।

বিজেপির পোস্টকে ভুয়ো দাবি করে পাল্টা পোস্ট রাজ্য পুলিশের। ছবি: রাজ্য পুলিশের সমাজমাধ্যম পাতা থেকে নেওয়া।

ঘটনাচক্রে, সংশোধিত ওয়াকফ আইন বাতিলের দাবিতে গত কয়েক দিন ধরেই উত্তপ্ত মুর্শিদাবাদের কয়েকটি এলাকা। হিংসার ঘটনা ঘটেছে শমসেরগঞ্জ, সুতি, ধুলিয়ানে। ওই পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। উচ্চ আদালতের নির্দেশের পর শনিবার রাতে সেখানে পৌঁছে গিয়েছিলেন ডিজি। সূত্রের খবর, তিনি বিএসএফের সঙ্গে বৈঠকও করেছিলেন। এর পরেই জেলার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় নেমে রুটমার্চ শুরু করেছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। সঙ্গে রয়েছে পুলিশের বিশাল বাহিনীও। রবিবার মুর্শিদাবাদে পৌঁছেছেন বিএসএফের দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের আইজি করণি সিংহ শেখাওয়াত। পুলিশকে সব রকম ভাবে সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

মুর্শিদাবাদের এই পরিস্থিতির আবহে রবিবার রাজ্য বিজেপির সমাজমাধ্যমের পাতায় ওই ছবিটি পোস্ট করা হয়। বিজেপি ছবিটি পোস্ট করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে রাজ্য পুলিশও পাল্টা দাবি করল, বিজেপির পোস্টটি ভুয়ো। এই নিয়ে রাজ্য বিজেপির তরফে এখনও পর্যন্ত কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে পুলিশ সমাজমাধ্যমে ‘আসল’ ছবি পোস্ট করার পরে পদ্মশিবিরকে বিঁধতে শুরু করেছেন তৃণমূলের নেতারা। তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ সাকেত গোখলে বলেন, “পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি যে ধরনের ভুয়ো সাম্প্রদায়িক আখ্যান তুলে ধরছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।” বিজেপিকে বিঁধেছেন কুণাল ঘোষ, সাগরিকা ঘোষেরাও। তৃণমূলের সমাজমাধ্যমের পাতায় দাবি করা হয়েছে, “বিজেপির গোটা প্রচার ব্যবস্থা এখন ভুয়ো তথ্য ছড়ানোর কারখানা হয়ে উঠেছে। তারা ইচ্ছাকৃত ভাবে বিভিন্ন রাজ্যের ছবি, বিভ্রান্তিকর ভাবে সম্পাদনা করে বাংলায় হিংসা উস্কে দিতে চাইছে।”

রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার জানান, মুর্শিদাবাদের পরিস্থিতি বর্তমানে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সাধারণ মানুষকে গুজবে কান না-দেওয়ার জন্যও অনুরোধ করেন তিনি। তবে জানা গিয়েছে, অশান্ত পরিস্থিতিতে ধুলিয়ান, সুতি এবং শমসেরগঞ্জের অনেক বাসিন্দা ঘর ছেড়েছেন। গঙ্গা পেরিয়ে ও পারে মালদহের বৈষ্ণবনগরে আশ্রয় নিয়েছেন তাঁরা। প্রশাসনের তরফে তাঁদের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার সুপার আনন্দ বলেন, ‘‘অশান্তির কারণে যাঁরা ঘর ছেড়েছেন, তাঁদের সব রকম সাহায্য করছে পুলিশ। তাঁরা ঘরে ফিরে আসতে চাইলে সব রকম ভাবে সাহায্যের জন্য প্রস্তুত রয়েছে পুলিশ।”

Advertisement
আরও পড়ুন