ভর্তির দাবিতে বিক্ষোভ চলছে সুতির স্কুলে। নিজস্ব চিত্র।
দফায় দফায় একাদশে ভর্তি নিয়ে বিক্ষোভে নাজেহাল প্রধান শিক্ষকেরা। অথচ তাঁদের কিছুই করার নেই। শনিবার অরঙ্গাবাদ বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা বিক্ষোভ দেখায় স্কুলে। বিক্ষোভ হয়েছে ধুলিয়ান বালিকা বিদ্যালতে। ছাবঘাটি স্কুলেও। এ রকম বিক্ষোভ প্রতিদিনই চলছে বিভিন্ন স্কুলে।
একাদশে ভর্তি নিয়ে জেলা জুড়েই সমস্যা থাকলেও সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছে বিড়ি শিল্পাঞ্চলের ৪টি ব্লক ফরাক্কা, শমসেরগঞ্জ, সুতি ১ ও সুতি ২। কারণ বেশির ভাগ স্কুলেই মাধ্যমিক পাশ ছাত্র সংখ্যা ৬০০ থেকে ১০০০ পর্যন্ত।
এ বারে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ প্রতি স্কুলে ২৭৫ থেকে বাড়িয়ে একাদশে ৪০০ জন করে ছাত্রছাত্রী ভর্তির অনুমোদন দিয়েছেন। এতে শহুরে স্কুলগুলি স্বস্তি পেলেও গ্রামের স্কুলগুলি বেকায়দায় পড়েছে। বিশেষ করে জঙ্গিপুর মহকুমার স্কুলগুলি। একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি সমস্যা সামলাতে মাথায় হাত পড়েছে প্রধান শিক্ষকদের। ইতিমধ্যেই বেশির ভাগ স্কুলই আবেদন করেছেন ভর্তির কোটা বাড়াতে। কিন্তু এখনও সাড়া মেলেনি। ফলে ভর্তির সমস্যা সামলাতে তাই কেউ ছুটছেন শাসক দলের বিধায়কের কাছে, কেউ বা সাংসদের কাছে।
সুতির ছাবঘাটি কেডি বিদ্যালয়ের মাথায় কার্যত বাজ ভেঙে পড়েছে এবারে। কারণ স্কুলে এবারে মাধ্যমিক পাশ করেছে ৯৫৬ জন ছাত্র ছাত্রী। প্রধান শিক্ষক কৌশিক দাস বলছেন, “আশপাশের স্কুলগুলির মধ্যে ছাবঘাটিতেই একমাত্র বিজ্ঞান, কলা ও বাণিজ্য তিনটি বিভাগই রয়েছে। স্বভাবতই বাইরের স্কুলের চাপ তো আছেই। রোজ বিক্ষোভ হচ্ছে স্কুলে। আমার হাতে কোনও ক্ষমতা নেই। অথচ ঝামেলা সামলাতে হচ্ছে আমাকেই।”
গোঠা হাইস্কুলে এবারে মাধ্যমিক পাশ করেছে ৬২৪ জন। প্রধান শিক্ষক আশিস তিওয়ারি বলছেন, “কেন ৪০০ জনকে ভর্তির অনুমতি দেওয়া হল? কেন নিজের স্কুলে ভর্তি পারবে না ছাত্ররা? এর কী উত্তর দেব?”
ফরাক্কার অর্জুনপুর হাইস্কুলে মাধ্যমিকে পাশ করেছে ৬৯৯ জন। ভর্তি হয়েছে ৪০০ জন। বাড়তি ভর্তির অনুমতি চেয়ে আবেদন গিয়েছে শিক্ষা সংসদে বিধায়কের সুপারিশ সহ। প্রধান শিক্ষক রফিকুল ওয়াড়া বলছেন, “বিজ্ঞান বিভাগ আছে। তাই অন্য স্কুল থেকে কিছু আসবে। কলা বিভাগে বাইরের স্কুলের কাউকে না নিলেও বিজ্ঞান বিভাগকে ফেরাব কীভাবে? রোজ ভর্তি নিয়ে ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে।”
শমসেরগঞ্জের চাচণ্ডা বি জে হাইস্কুলে ৭৫৩ জন মাধ্যমিকে পাশ করেছে। ৪০০ জন ভর্তি হয়েছে। আরও ৩০০ ভর্তির কোটা চেয়ে আবেদন করেছেন। কিন্তু সাড়া পাননি।
এবিটিএ’র জেলা সভাপতি জুলফিকার আলির স্কুলে ৫৮৪ জন পাশ করেছে এবারে মাধ্যমিকে। তিনি বলছেন, “আমি নিজে জঙ্গিপুরের সাংসদ খলিলুর রহমানের কাছে গিয়ে তার সুপারিশ সহ দু’দু’বার আবেদন করেছি। ছাত্ররা প্রশ্ন করছে তারা নিজের স্কুলে ভর্তি হতে পারবে না কেন ? এ নিয়ে কারও মাথা ব্যথা নেই। কেন প্রধান শিক্ষকেরা রোজ ভর্তি নিয়ে নাজেহাল হবে? শিক্ষামন্ত্রী ঘোষণা করে আশ্বস্ত করুন যে সকলেই স্কুলে ভর্তি হতে পারবে। নিজের স্কুলে সকলকেই ভর্তি করার নির্দেশ জারি করুন। এর ফলে শিক্ষকেরা আতঙ্কিত। এখন বিক্ষোভ হচ্ছে, পরে হামলা হবে।”
তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠনের জেলা সভাপতি শেখ ফুরকান বলছেন, “ভর্তি সকলকেই করা হবে। সেই মত নির্দেশ জারি করতে শিক্ষামন্ত্রীকে বলাও হয়েছে। স্কুলে বিক্ষোভ করে, প্রধান শিক্ষককে চাপ দিলে হবে না। ভর্তির সবটাই রাজ্য সরকার ও শিক্ষা সংসদের হাতে। ৩০ অগস্ট ভর্তির শেষ দিন। তার মধ্যেই সমস্যা মিটে যাবে।”