প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
নতুন বছরের গোড়াতেই পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ এবং মালদহের তিনটি পর্যটন কেন্দ্রে হামলার ছক কষেছিল বাংলাদেশি জঙ্গিগোষ্ঠী আনসারুল্লাহের বাংলা শাখার! জঙ্গিগোষ্ঠীর সদস্য সাজিবুল ইসলামকে জেরা করে এমনই তথ্য মিলেছে বলে খবর পুলিশ সূত্রে। অসম পুলিশ এ ব্যাপারে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশকে বিষয়টি জানিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, কোন ছকে হামলার পরিকল্পনা করা হয়েছিল তারও আভাস মিলেছে বলে দাবি পুলিশ সূত্রে। কোন জঙ্গিকে কোন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তা-ও জানা গিয়েছে। অসম পুলিশের জেরায় ধৃত সাজিবুল স্বীকার করেছে, নতুন বছর উপলক্ষে ভিড়ে ঠাসা এ রাজ্যের পর্যটন কেন্দ্রে আত্মঘাতী হামলার পরিকল্পনা করেছিল জঙ্গিরা! মুর্শিদাবাদ এবং মালদহের সীমান্ত এলাকার পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে নাশকতা ঘটিয়ে কাঁটাতার পেরিয়ে ও পার বাংলায় চলে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল জঙ্গিদের।
অসম পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল (এসটিএফ) সূত্রে জানা গিয়েছে, মুর্শিদাবাদের হাজারদুয়ারি এবং আরও একটি হামলা চালানোর পরিকল্পনা ছিল আনসারুল্লাহের। তালিকায় ছিল মালদহের একটি পর্যটন কেন্দ্রও! অল্প সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ নাশকতা ঘটাতে আত্মঘাতী বোমা হামলার পরিকল্পনা ছিল জঙ্গিদের। জেরায় ধৃত জঙ্গি জানিয়েছে, গত অক্টোবরে বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভারত লাগোয়া একটি সীমান্তবর্তী গ্রামে আনসারুল্লাহ বাংলা দলের প্রধান জসিমউদ্দিন রহমানির সঙ্গে বৈঠক করেছিল শাব। তাকেও দিন কয়েক আগে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। সেই সূত্র ধরেই আরও তিন জনকে ইতিমধ্যেই নিজেদের হেফাজতে নিয়েছেন তদন্তকারীরা। পুলিশ জানতে পেরেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের বৈঠকে উপস্থিত ছিল আব্বাস আলি ও সাজিবুল। সেখানেই হামলার দায়িত্ব বণ্টন করা হয়েছিল।
কাকে কী দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, জেরায় সাজিবুল জানিয়েছে, মহিলাদের মধ্যে আনসারুল্লাহ বাংলা দলের প্রভাব বিস্তার করার দায়িত্ব ছিল তার উপর। এ ছাড়াও, উত্তর-পূর্ব ভারত থেকে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল সাজিবুলকে। আইএস জঙ্গিদের কাছ থেকে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য আত্মঘাতী মডিউলের সদস্যদের বাছাইয়ের দায়িত্ব ছিল আব্বাসের উপর। ধর্মীয় শিক্ষার নামে টোপ দিয়ে মুর্শিদাবাদের একাধিক এলাকার কিশোরদের মগজধোলাই করে জঙ্গি সংগঠনের নাম লেখানোর দায়িত্ব ছিল আব্বাসের সহযোগী মনিরুল শেখের। আর মুস্তাকিনের কাঁধে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সংগঠন বিস্তারের কাজে সাজিবুল ভিন্রাজ্য কিংবা দেশের বাইরে থাকলে স্থানীয় এলাকায় মডিউলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার। জঙ্গি সংগঠনে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে উৎসাহী করতে মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন জায়গায় সংগঠন প্রধানের বক্তৃতার ব্যবস্থাও করা হয়েছিল।
শাবকে জেরা করে ইতিমধ্যেই আব্বাস ও মিনারুলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের থেকে বাজেয়াপ্ত করা নথি ঘেঁটে সাজিবুল এবং মুস্তাকিনকে ধরেছে পুলিশ। ধৃতদের জেরা করে গোটা পরিকল্পনার কথা জানতে পারে অসম পুলিশের এসটিএফ। বিষয়টি ইতিমধ্যেই জানানো হয়েছিল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বিভাগে। কেন্দ্রের তরফ থেকে সতর্ক করা হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ পুলিশকেও। বিশেষ ভাবে সতর্ক করা হয়েছিল মুর্শিদাবাদ, মালদা, দিনাজপুর ও নদিয়ার জেলা পুলিশ সুপারদের। যদিও প্রকাশ্যে এ ব্যাপারে মুখ খুলতে রাজি নয় জেলা পুলিশ সুপারেরা।
অসম পুলিশের এসটিএফের সদস্য প্রধান মহন্ত দাবি করেন, মুর্শিদাবাদকে ভিত্তি করে আনসারুল্লাহ বাংলা দল সারা দেশে জাল তৈরি করছিল। স্লিপার সেলগুলিকে সক্রিয় করে বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা ছিল। ভিড়ে ঠাসা এলাকাগুলি ছিল এদের প্রধান লক্ষ্য। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে গোটা পরিকল্পনায় কার কী ভূমিকা ছিল তা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।
রাজ্য পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বড়দিন থেকে শুরু করে নববর্ষ পর্যন্ত বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সীমান্ত এলাকায় বিএসএফের পাশাপাশি রাজ্য পুলিশের টহলদারি বাড়ানো হয়েছে। অপরিচিত কাউকে এলাকায় দেখতে পেলে স্থানীয় থানাগুলিতে খোঁজ দেওয়ার জন্য বাসিন্দাদের অনুরোধ জানানো হয়েছে। জেলা পুলিশের কন্ট্রোলরুমে আপৎকালীন পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে বম্ব স্কোয়াডকেও। মুর্শিদাবাদ পুলিশ জেলার সুপার সূর্যপ্রতাপ যাদব জানিয়েছেন, উৎসবের দিনগুলিতে প্রতি বছর বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকে। পর্যটন ও পিকনিক স্পটগুলিতে অতিরিক্ত সতর্কতা নেওয়া হয়। এ বছরও তার অন্যথা হয়নি।