Domkal

খেলার মাঠ পাল্টে গেল চাষের খেতে

গুগল ম্যাপে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে খেলার মাঠের ছবি। সরকারের তরফে লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করে তৈরি স্টেডিয়াম হয়েছিল।

Advertisement
সুজাউদ্দিন বিশ্বাস
ডোমকল শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৪:২৪
খেলার মাঠের বর্তমান অবস্থা।

খেলার মাঠের বর্তমান অবস্থা। —ফাইল চিত্র।

বছর কয়েক আগেও খেলাধুলো হয়েছে মাঠে। এমনকি ফুটবল, ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আয়োজনও হয়েছে সেখানে। সরকারের তরফে সেই মাঠেই তৈরি হয়েছিল স্টেডিয়াম। খোদ তৃণমূল নেতারাও বলছেন বছর দুয়েক আগে সেই মাঠেই তারকা সমাবেশ হয়েছে নির্বাচনের সময়। আর বর্তমানে ম্যাজিকের মতো উধাও হয়েছে মাঠ, এমনকি স্টেডিয়ামও। অভিযোগ স্থানীয় এক ডাকাবুকো তৃণমূল নেতা গ্রাস করেছেন সেটি। অভিযোগ সেই মাঠ দখল করে কিছুটা অংশে করা হয়েছে ধান চাষ, আবার অন্যদের কাছে সেই জমি বিক্রি করা হয়েছে চড়া দামে। বিরোধীদের দাবি, তৃণমূলের দাপুটে নেতার পিছনে আছেন তাবড় নেতারা। আর তার ফলে এমন একটি খেলার মাঠ জবরদখল করে রীতিমতো ম্যাজিকের মতো ভ্যানিশ করে দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

এখনও গুগল ম্যাপে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে খেলার মাঠের ছবি। সরকারের তরফে লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করে তৈরি স্টেডিয়াম হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে সেই মাটিতে পা রাখলে দেখা যাচ্ছে স্টেডিয়ামের চিহ্নমাত্র নেই। সেই জায়গায় ধান গাছ দাঁড়িয়ে আছে মাথা উঁচু করে। বিরোধীদের দাবি, স্থানীয় তৃণমূল নেতা লালন মোল্লা কারও কাছ থেকে ওই জমি কিনেছি বলে দাবি করেছেন। যদিও লালন মোল্লার দাবি, ‘‘আমি নির্দিষ্ট কাগজপত্র দেখেই এলাকার রায়পুর গ্রামের এক বাসিন্দার কাছ থেকে ওই জমি কিনেছি। এবং ব্লক প্রশাসনকে জানিয়েই স্টেডিয়াম ভেঙেছি।’’

যদিও কিছু দিন আগে ওই সংলগ্ন এলাকায় একটি সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নির্মাণ কাজ দেখতে এসে মুর্শিদাবাদের সাংসদ খোদ আবু তাহের খান এই ঘটনার প্রতিবাদ করেন। কড়া ভাষায় ভর্ৎসনা করেন দলের নেতা লালন মোল্লাকে।

শোনা যাচ্ছে ভূমি সংস্কার দফতরের সঙ্গে যোগসাজস করে জালিয়াতি করেই ওই জমি দখল করেছেন লালন। তবে এই গোটা বিষয়টির সঙ্গে তৃণমূলের ব্লক স্তরের নেতারাও জড়িয়ে আছেন বলে দাবি। আবু তাহের খানের বক্তব্য, ‘‘একেবারে ওই জায়গার পাশেই একটি সরকারি ইংলিশ মিডিয়াম মাদ্রাসা তৈরি হচ্ছে। তার কাজ দেখতে গিয়েছিলাম আমি। গিয়ে দেখলাম গোটা মাঠ দখল হয়ে গিয়েছে। এবং তাতে জড়িয়ে আছে আমাদের দলেরই এক স্থানীয় নেতা। আমি ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়েই প্রতিবাদ করেছি ওই ঘটনার। এ ভাবে একটি আস্ত মাঠ হারিয়ে যাওয়ার বিষয়টি শুনে খুব খারাপ লেগেছে।’’

সিপিএমের ডোমকল এরিয়া কমিটির সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বলছেন, "ওই মাঠ দখলের পরপরই আমরা ব্লক প্রশাসন থেকে মহকুমা প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়েছিলাম। কিন্তু কেউ কোনও কর্ণপাত করেনি। কোনও রকম পদক্ষেপ করতে দেখিনি প্রশাসনকে। একেবারে চোখের সামনে ভ্যানিশ হয়ে গেল বড় একটি খেলার মাঠ সহ স্টেডিয়াম। গোটা বিষয়টির সঙ্গে ডোমকলের তৃণমূল বিধায়ক জাফিকুল ইসলাম জড়িয়ে আছেন বলে শুনেছি।’’ যদিও জাফিকুলের দাবি, ‘‘আমিও দেখেছি বছর দুয়েক আগে ওই মাঠে আমাদের দলের পক্ষ থেকে সভা সমিতি হয়েছে। এলাকার ছেলেরা খেলাধুলোও করত সেখানে। কিন্তু হঠাৎ করেই জানতে পারছি ওই মাঠ একজন কিনেছেন। বিষয়টি জানতে পারার পরেই ব্লক প্রশাসন এবং ভূমি সংস্কার দফতরের সঙ্গে কথা বলেছি। গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য বলেছি। কিন্তু তারপরে কি হয়েছে আমার জানা নেই।’’ তিনি বলেন, ‘‘দু’বছর আগে মাঠে তৃণমূলের সভাও হয়েছে।’’

এলাকার ক্রীড়াপ্রেমী মানুষ থেকে তরুণ-যুবকেরা বিষয়টি নিয়ে হা-হুতাশ করলেও সে ভাবে মুখ খুলতে পারেনি কেউ। যদিও লালন মোল্লার দাবি, ‘‘বাম আমলে এলাকার একটি জমিদার পরিবারের কাছ থেকে জোর করে ওই জমি দখল করে মাঠ তৈরি করেছিল সিপিএম। আর তার ফলেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।’’

ডোমকলের বিডিও শঙ্খদীপ দাস বলেন, ‘‘ওই এলাকায় একটি কর্মতীর্থ আছে। তার রাস্তা নিয়ে সমস্যা ছিল। সেই রাস্তা তৈরি হয়েছে। তবে সেখানে আগে কী ছিল, সেটা জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

Advertisement
আরও পড়ুন